জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের দিন আজ

বিশেষ প্রতিবেদক

জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ
জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ। ছবি : সংগৃহীত

আজ এক ঐতিহাসিক দিন। ১৯৭৪ সালের আজকের দিনে জাতিসংঘের ২৯তম সাধারণ অধিবেশনে প্রথম বাংলায় ভাষণ দেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

দিনটি উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির উদ্যোগে একটি ই-পোস্টার প্রকাশ করা হয়েছে।

universel cardiac hospital

বিশেষ ডিজাইনের এই পোস্টারের শিরোনাম দেয়া হয়েছে ‘২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭৪ জাতিসংঘের ২৯তম সাধারণ অধিবেশনে প্রথম বাংলায় ভাষণ দেওয়ার এই অনন্য দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করি গভীর শ্রদ্ধায়’।

প্রকাশিত ই-পোস্টারটি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর আওতাধীন এলাকায় তাদের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত ইলেকট্রনিক/ডিজিটাল/এলইডি স্ক্রিনে প্রদর্শন করা হবে।

এছাড়া ইলেকট্রনিক, অনলাইন ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই ই-পোস্টার ব্যাপকভাবে প্রচারের জন্যও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ভাষণটি নানা দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক।

৭ মার্চের ভাষণটি ছিল বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের সংগ্রাম, স্বাধিকার আন্দোলনের প্রস্তুতি ও দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ। কিন্তু ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে দেয়া ভাষণটি ছিল সমগ্র বিশ্বের অধিকারবঞ্চিত নির্যাতিত নিষ্পেষিত মানুষের ন্যায়সঙ্গত অধিকার প্রতিষ্ঠা ও বিশ্বশান্তি, ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠার বলিষ্ঠ উচ্চারণ ও সাহসী পদক্ষেপ।

জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুই প্রথম রাষ্ট্রনায়ক, যিনি মাতৃভাষা বাংলায় বক্তৃতা করেন। বঙ্গবন্ধুকে প্রথমেই অনুরোধ করা হয়েছিল, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি ইংরেজিতে বক্তৃতা করবেন।’ কিন্তু প্রিয় মাতৃভাষা বাংলার প্রতি সুগভীর দরদ ও মমত্ববোধ থেকে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমি মাতৃভাষা বাংলায় বক্তৃতা করতে চাই।’

জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভের আট দিনের মাথায় বঙ্গবন্ধু সাধু বাংলায় জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণের শুরুতেই বলেন, ‘মাননীয় সভাপতি, আজ এই মহামহিমান্বিত সমাবেশে দাঁড়াইয়া আপনাদের সাথে আমি এই জন্য পরিপূর্ণ সন্তুষ্টির ভাগীদার যে, বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ আজ এই পরিষদে প্রতিনিধিত্ব করিতেছেন। আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের পূর্ণতা চিহ্নিত করিয়া বাঙালি জাতির জন্য ইহা একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত।’

তিনি বলেন, ‘স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার অর্জনের জন্য এবং একটি স্বাধীন দেশে মুক্ত নাগরিকের মর্যাদা নিয়া বাঁচার জন্য বাঙালি জনগণ শতাব্দীর পর শতাব্দীব্যাপী সংগ্রাম করিয়াছেন, তাহারা বিশ্বের সকল জাতির সঙ্গে শান্তি ও সৌহার্দ্য নিয়া বাস করিবার জন্য আকাক্সিক্ষত ছিলেন।

যে মহান আদর্শ জাতিসংঘ সনদে রক্ষিত রহিয়াছে, আমাদের লক্ষ লক্ষ মানুষ সেই আদর্শের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করিয়াছেন। আমি জানি, শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে সকল মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের উপযোগী একটি বিশ্ব গড়িয়া তুলিবার জন্য বাঙালি জাতি পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের এই অঙ্গীকারের সহিত শহীদানের বিদেহী আত্মাও মিলিত হইবেন।’

বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ ও মুক্তিসংগ্রামে সমর্থনদানকারী দেশগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘যাহাদের ত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ বিশ্বসমাজে স্থান লাভ করিয়াছে, এই সুযোগে আমি তাহাদেরকে অভিনন্দন জানাই।

বাংলাদেশের সংগ্রামে সমর্থনকারী সকল দেশ ও জনগণের প্রতি আমি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিতেছি। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম ছিল শান্তি ও ন্যায়ের মিলিত সংগ্রাম। জাতিসংঘ গত ২৫ বছর ধরিয়া এই শান্তি ও ন্যায়ের জন্যই সংগ্রাম করিয়া যাইতেছে।’

বঙ্গবন্ধু জনগণের অধিকার কেড়ে নেয়ার ক্ষেত্রে দেশে দেশে সেনাবাহিনী ব্যবহারের তীব্র নিন্দা জানান এবং বাংলাদেশসহ চারটি দেশ আলজেরিয়া, গিনি বিসাউ এবং ভিয়েতনামের নামোল্লেখ করে বলেন, ‘এই দেশগুলো অপশক্তির বিরুদ্ধে বিরাট বিজয় অর্জন করিতে সক্ষম হইয়াছে।’

‘চূড়ান্ত বিজয়ের ইতিহাস জনগণের পক্ষেই থাকে’ উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু ফিলিস্তিন, জাম্বিয়া এবং নামিবিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে