করোনাভাইরাস ইস্যুতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের তর্কবিতর্কে উত্তপ্ত হয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। পরিষদের বৈঠকে বৃহস্পতিবার মার্কিন দূত কেলি ক্রাফট ‘প্লেগ’ ছড়িয়ে দেয়ার জন্য চীনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানালে শুরু হয় দুপক্ষের মধ্য উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়। খবর আল জাজিরার।
চীনা দূত ঝ্যাং জুন ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘যথেষ্ট হয়েছে। আপনারা ইতিমধ্যে বিশ্বের জন্য অনেক সংকট তৈরি করেছেন। বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত মেডিক্যাল টেকনোলজি ও ব্যবস্থা থাকার পরও কেন যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যু ঘটছে। যদি কাউকে দায়ী করতে হয় তাহলে তা কয়েকজন মার্কিন রাজনীতিককে নিজেদের দায়ী করতে হবে।’ জুনের এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতও।
ফলে তর্কবিতর্কের এক পর্যায়ে পরিষদে সকল দেশের দূতের সমালোচনা করেন কেলি ক্রাফট এবং আলোচনা শেষ হওয়ার পূর্বে ভার্চুয়াল সভা ত্যাগ করেন। ক্রাফট বলেন, ‘আপনাদের সবার লজ্জা হওয়া উচিত। আজকের বৈঠকের বিষয়বস্তু নিয়ে আমি হতবাক ও মেনে নিতে পারছি না। এই পরিষদ নিয়ে সত্যিই আমি লজ্জিত। এই পরিষদের সদস্যরা চলমান সংকট নিয়ে কথা বলার চাইতে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছেন।’
যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় দুই লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। দেশটির পক্ষ থেকে মহামারির অবনতির জন্য বেইজিংকে দায়ী করা হচ্ছে। তবে চীন এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কূটনীতিক বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘পুরো আলোচনায় মার্কিন দূতের আচরণ ছিল খুবই আক্রমণাত্মক।’
জাতিসংঘে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন দূত ন্যান্সি সোডারবার্গ বলেন, ‘বিশ্ব রাষ্ট্রগুলোর মূল কেন্দ্র এই সংস্থা। নিরাপত্তা পরিষদের এই পরিস্থিতি প্রমাণ করে করোনা মোকাবিলায় বৈশ্বিক ব্যবস্থা কতটা ভেঙে পড়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এমন একটি অবস্থায় পৌঁছে গেছি যেখান থেকে ফেরার কোনো সুযোগ নেই। সবদেশের নিজেদের স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করা উচিত এবং নিজেদের জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।’
আলোচনায় রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, ‘মহামারি বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে বিভাজন গভীর করেছে। আমরা দেখছি বিভিন্ন দেশ নিজেদের সংকীর্ণ স্বার্থের জন্য চলমান পরিস্থিতিকে কাজে লাগাচ্ছে।’
এদিন বক্তব্যে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্থোনিও গুতেরেস করোনা মোকাবিলায় ব্যর্থতার কথা তুলে ধরেন। মহামারি মোকাবিলায় বিশ্ব নেতৃত্বের ব্যর্থতার কথা তুলে ধরতে গিয়ে গুতেরেস বলেন, ‘বৈশ্বিক প্রস্তুতি, সহযোগিতা, ঐক্য ও সংহতির অভাবে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে এবং প্রায় দশ লাখের কাছাকাছি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তিন কোটি ২০ লাখের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।’
১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে গুতেরেস আরও বলেন, ‘মহামারি আন্তর্জাতিক সহযোগিতার পরীক্ষা। যে পরীক্ষা ব্যর্থ হয়েছে। জলবায়ু সংকটও যদি একইভাবে এগিয়ে আসে তাহলে আমার আশঙ্কা পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
দীর্ঘদিন ধরে চলা চীন-মার্কিন উত্তেজনা এই মহামারিতে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। মহামারি পরিস্থিতিতে চীনের প্রভাব বৃদ্ধিকে ওয়াশিংটনের প্রথাগত নেতৃত্বের জন্য হুমকি হিসেবে মনে করা হচ্ছে।