না ফেরার দেশে চলে গেলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আজ রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রাষ্ট্রের প্রধান এই আইন কর্মকর্তা। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
মাহবুবে আলম বাংলাদেশের ১৩তম অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। মাহবুবে আলমের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ।
গত ৩ সেপ্টেম্বর রাতে অ্যাটর্নি জেনারেল জ্বর অনুভব করেন। পরদিন (৪ সেপ্টেম্বর) জ্বর নিয়ে ঢাকা সিএমএইচে ভর্তি হন মাহবুবে আলম। সেখানে নমুনা পরীক্ষায় তার করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৮ সেপ্টেম্বর মাহবুবে আলমের শারীরিক অবস্থার হঠাৎ অবনতি ঘটলে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। পরে তাকে ভেন্টিলেশন সাপোর্টে নেয়া হয়।
মাহবুবে আলম ২০০৯ সালের ১৩ জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল নিযুক্ত হন। তিনি বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট। এর আগে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসাবে তিনি ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০১ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন।
মাহবুবে আলম ১৯৪৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের মৌছামন্দ্রা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বিএ (অনার্স) এবং পাবলিক প্রশাসনে এমএ পাস করেন। ১৯৭৯ সালে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে সংবিধান এবং সংসদীয় গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইসিপিএস) থেকে সাংবিধানিক আইন এবং সংসদীয় প্রতিষ্ঠান এবং পদ্ধতিতে দুটি ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন।
স্নাতক হওয়ার পর ১৯৭৫ সালে হাইকোর্টে অনুশীলন শুরু করেন এবং ১৯৮০ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হন। ১৯৯৯ সালে তিনি সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী হিসাবে তালিকাভুক্ত হন এবং ২০০৪ সালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৫-২০০৬ সালে তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন এর আগে ১৯৯৩-১৯৯৪ সালে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
যুদ্ধাপরাধসহ গুরুত্বপূর্ণ মামলায় লড়েছেন মাহবুবে আলম
মাহবুবে আলম জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের মামলায় যুক্ত ছিলেন। এছাড়া সংবিধানের পঞ্চম, সপ্তম, ত্রয়োদশ ও ষোড়শ সংশোধনী মামলা পরিচালনা ছাড়াও আব্দুল কাদের মোল্লা, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, মো. কামারুজ্জামান, আলী আহসান মো. মুজাহিদ, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীসহ অনেক মানবতাবিরোধী অপরাধীর মামলায় লড়েছেন মাহবুবে আলম।
আলোচিত বিডিআর বিদ্রোহ হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন মাহবুবে আলম। এছাড়া খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর অবৈধ টাকা ফেরত আনার মামলাসহ তিনি রাষ্ট্রের আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলা পরিচালনা করেছেন এবং সফলতার সঙ্গে জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করে গেছেন।