৩রা নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে প্রথমবার বিতর্কে মুখোমুখি হয়েছিলেন ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন। বিশ্বাসযোগ্যতা ও কর্মদক্ষতা নিয়ে একে অন্যকে আক্রমণ করেন তারা। দেড় ঘন্টাব্যাপী বিশৃঙ্খলপূর্ণ বিতর্কে একে অপরকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণরোধে বিধিনিষেধের কারণে বিতর্কমঞ্চে ওঠার পর ট্রাম্প ও বাইডেন পরস্পর হাত মেলাননি।
মঞ্চে ওঠার মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই সুপ্রিম কোর্টের শূন্যস্থান থেকে শুরু করে মার্কিন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় করোনারভাইরাস মহামারী ইস্যু নিয়ে বিতর্কটি ব্যক্তিগত কোন্দলে রূপ নেয়।
বিতর্কে বিশ্লেষণের পর বিবিসি জানিয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্দেশ্য ছিল বাইডেনকে বিব্রত করা, যা নিশ্চিত করতে তিনি ক্রমাগত বাইডেনের কথার মধ্যে তাকে বাধা দিয়েছেন। এর ফলে ৯০ মিনিটের বিতর্কের মধ্যে বেশ কয়েকবার দু’জনের মধ্যে বচসা হয়েছে।
ট্রাম্প যেমন প্রশ্ন তুলেছেন বাইডেনের বুদ্ধিমত্তা নিয়ে, তেমনি বাইডেনও ট্রাম্পকে ক্লাউন বা ভাঁড় বলে কটাক্ষ করেছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্টকে লক্ষ্য করে বাইডেন বলেন, ‘আপনি কি চুপ করবেন?’একপর্যায়ে বলেন, ‘এই জোকারের কাছ থেকে কোনো কথা আদায় করা শক্ত।’
বিতর্কের মধ্যে বাইডেনের কথা থামিয়ে দিয়ে বারবার তাকে বাধা দিয়েছেন ট্রাম্প, জবাবে একপর্যায়ে ডেমোক্র্যাট বাইডেনের স্মিত হাসির সঙ্গে মাথা ঝাঁকিয়েই হতাশা প্রকাশ করা ছাড়া আর কিছু করার ছিল না।
এমনকি এক পর্যায়ে বিতর্কের সঞ্চালক ক্রিস ওয়ালেস যখন দুই পক্ষকে করোনাভাইরাস নিয়ে আড়াই মিনিট করে বাধাহীনভাবে বক্তব্য দেয়ার সুযোগ দেন, তখন বাইডেন ট্রাম্পের ক্রমাগত কথার মাঝখানে বিরক্ত করার প্রবণতাকে কটাক্ষ করে ফোঁড়ন কেটে বলেন, ‘তার জন্য শুভকামনা’।
করোনা ভাইরাস প্রসঙ্গ
এই বিতর্কে করোনা ভাইরাস প্রসঙ্গটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় ছিল এবং বিতর্কের শুরুর দিকেই এবিষয়ে আলোচনা হয়। করোনা ভাইরাসে দুই লাখ মানুষ মারা যাওয়ায় ট্রাম্পের কাছ থেকে ব্যাখ্যা আশা করছিল মানুষ।
তিনি অবশ্য ব্যাখ্যা দিয়েছেন এই বলে যে, তিনি পদক্ষেপ না নিলে আরো বহু মৃত্যু হতে পারতো এবং জো বাইডেন ক্ষমতায় থাকলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতো।
এর জবাবে বাইডেন ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে দর্শকদের উদ্দেশ্যে সরাসরি প্রশ্ন করেন যে তারা ট্রাম্পকে বিশ্বাস করেন কি না। দীর্ঘ সময় সরকারি দায়িত্বে থাকা জো বাইডেনকে বিতর্কের এক পর্যায়ে ট্রাম্প বলেন, ‘৪৭ মাসে (ক্ষমতায় থেকে) আমি যা করতে পেরেছি, আপনি ৪৭ বছরে তা পারেননি’।
বাইডেনের জবাব ছিল: ‘এই প্রেসিডেন্টের অধীনে আমরা আরো দুর্বল, অসুস্থ, দরিদ্র ও বিভাজিত হয়েছি’।
নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে অভিযোগ
বিতর্কের চূড়ান্ত পর্যায়ের আলোচনা ছিল নির্বাচনের নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে। ওই অংশে বামপন্থী ও দক্ষিণপন্থী দুই পক্ষই আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে না। ট্রাম্পের আশঙ্কা ডাকের মাধ্যমে ভোট দেয়া হলে দুর্নীতির সুযোগ থেকে যায়।
বাইডেন দাবি জানান, সবগুলো ব্যালট যেন গণনা করা হয় এবং নির্বাচনের ফলাফল সব পক্ষ যেন মেনে নেন। শেষদিকে তিনি আরো কিছু বলতে চাইলেও ট্রাম্প তাকে আবারো বাধা দিলে সঞ্চালক ওয়ালেস বিতর্কের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
আর এদিনের বিতর্কটা প্রথাগত কোন বিতর্কের মতও ছিল না। এই ধরনের অনুষ্ঠান সাধারণত মার্কিন নির্বাচনের ফলাফলে কোন ভূমিকা রাখে না। আর ট্রাম্প ও বাইডেনের প্রথম বিতর্কটা যতটা গণ্ডগোল ও পাল্টা দোষারোপের মধ্যে শেষ হয়েছে, এর ফলে খুব বেশি মানুষের চিন্তাভাবনা পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনাও নেই।