সরকারি মেডিকেল ও ডেন্টালের প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের মাস্টারমাইন্ড আবদুস সালামকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একটি দল। সোমবার রাজধানীর রামপুরা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মঙ্গলবার দুপুরে সিআইডি সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের বিশেষ পুলিশ সুপার এস এম আশরাফুল আলম।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় ঢাবি কর্তৃপক্ষের করা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে সরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সন্ধান পায় সাইবার পুলিশ সেন্টার। ঢাবির ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত এস এম সানোয়ার হোসেনকে গ্রেপ্তারের পর সরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস সংক্রান্ত চাঞ্চল্যকর তথ্য পায় সাইবার পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি জানায়, সানোয়ারের তথ্যের সূত্র ধরে চলতি বছরের ১৯ জুলাই ঢাকার মিরপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় মেডিকেল প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাস্টারমাইন্ড জসিম উদ্দিন ভূঁইয়াসহ জাকির হোসেন দিপু এবং পারভেজ খানকে। এ সময় জসিমের কাছ থেকে দুই কোটি ৩০ লাখ টাকার চেক, দুই কোটি ২৭ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ও পারভেজের কাছ থেকে ৮৪ লাখ টাকার চেক উদ্ধার করা হয়। এসব টাকা মেডিকেল ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল।
সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, ২০ জুলাই মিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা করে সিআইডির সাইবার পুলিশ। এই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে সরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপ্রত্র ফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়িত আরও সাতজনকে গ্রেপ্তার করে সাইবার পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসে আরেক মাস্টারমাইন্ড স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরোর মেশিনম্যান আবদুস সালামের নাম।
সংবাদ সম্মেলনে এস এম আশরাফুল আলম বলেন, মামলার খবর পেয়ে গা-ঢাকা দেন আবদুস সালাম। সোমবার রাজধানীর রামপুরা বনশ্রী এলাকার জি ব্লকে বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে একটি হত্যা মামলারও আসামি আবদুস সালাম। ওই মামলায় তার বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দিয়েছে সিআইডি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের জসিম ও সালামসহ অন্য সদস্যদের অবৈধভাবে আয় করা সম্পদের খোঁজ শুরু করেছে সিআইডির সাইবার পুলিশ। ইতোমধ্যে জসিম উদ্দিনের ৩৮টি অ্যাকাউন্টের সন্ধান পাওয়া গেছে। এসব অ্যাকাউন্টে ২১ কোটি ২৭ লাখ টাকা জমা রয়েছে।
অন্যদিকে, জসিমের স্ত্রী জেসমিন আরা শিল্পীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে তিন কোটি ৭৮ লাখ টাকার সন্ধান পেয়েছে সিআইডি। এ বিষয়ে আরও অনুসন্ধান চলছে। অনুসন্ধান শেষ হলে প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যমে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনকারীদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করবে সিআইডির সাইবার পুলিশ।
এদিকে প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়িত পাঁচ থেকে ছয়জন চিকিৎসক এবং তিনটি কোচিং সেন্টারের সম্পৃক্ততা পেয়েছে সিআইডি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধে গত কয়েক বছরে সাইবার পুলিশ টানা অভিযান এবং আসামি গ্রেপ্তারের ফলে এটা অনেকাংশে বন্ধ হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে যেসব শিক্ষার্থী সরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল পরীক্ষায় ফাঁসকৃত প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে ভর্তি হয়েছেন তাদেরকে শনাক্ত করে চক্রের অন্য সদস্যদের আইনের আওতায় নিয়ে আসবে সিআইডির সাইবার পুলিশ।