গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় আরও দুইজন গ্রেপ্তার

নোয়াখালী প্রতিনিধি

গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন
ছবি : সংগৃহিত

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টা ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় আরও দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা হলেন- নূর হোসেন রাসেল ও সোহাগ।

অভিযান চালানোর পর বুধবার সকালে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে চাঞ্চল্যকর ওই ঘটনায় মোট আটজনকে গ্রেপ্তার করল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

universel cardiac hospital

এর আগে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা হলেন- পূর্ব একলাশপুর গ্রামের নোয়াব আলী বেপারী বাড়ির লোকমান হোসেনের ছেলে সাজু, ইউপি সদস্য ও জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের মৃত গোলাম মোস্তফার ছেলে মোজাম্মেল হোসেন সোহাগ, ঘটনার মূলহোতা দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার হোসেন, মামলার প্রধান আসামি বাদল, আব্দুর রহিম এবং রহমত উল্যা।

৩৫ বছর বয়সী এক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন চালানোর এক মাস পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হয়। এরপর ওই নারীকে উদ্ধার করে নিরাপত্তা হেফাজতে নেয় পুলিশ।

মামলার এজাহারে বলা হয়, দাম্পত্য কলহের জেরে ওই নারী একলাশপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে তার বাবার বাড়িতে থাকছিলেন। দীর্ঘদিন পর গত ২ সেপ্টেম্বর তার সঙ্গে দেখা করতে সেখানে যান তার স্বামী।

সেদিন রাত ৯টার দিকে গৃহবধূর বসতঘরে ঢুকে তার স্বামীকে পাশের কক্ষে বেঁধে রাখেন স্থানীয় বাদল ও তার সহযোগীরা। এরপর গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন তারা। গৃহবধূ বাধা দিলে তাকে বিবস্ত্র করে বেধড়ক মারধর করে মোবাইলে ভিডিওচিত্র ধারণ করা হয়। ওই নারীর চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে আসামিরা কাউকে কিছু জানালে হত্যার হুমকি দিয়ে চলে যায় বলে উল্লেখ করা হয়েছে এজাহারে।

এজহারে আরও বলা হয়েছে, ওই নারী কাউকে কিছু না জানিয়ে জেলা শহরের মাইজদীতে বোনের বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখানেও আসামিরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং ‘কুপ্রস্তাব’ দেয়। রাজি না হলে সেই রাতের ভিডিও তারা ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।

ওই নারী তাদের কথায় রাজি না হওয়ায় আসামিরা রবিবার দুপুরে সেই ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দিলে তা ভাইরাল হয়ে যায়। এ ঘটনায় গত রবিবার দিবাগত রাত একটার দিকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন নির্যাতিতা গৃহবধূ।

হাইকোর্ট ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে নির্যাতনের ওই ভিডিও অপসারণ করতে বিটিআরসিকে নির্দেশ দিয়েছে। তবে মামলার আলামত হিসেবে ভিডিওটি পেনড্রাইভ বা সিডিতে সংরক্ষণ করতে বলা হয়েছে।

সেই সঙ্গে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নির্যাতিত নারী ও তার পরিবারকে সব ধরনের নিরাপত্তা দিতে নোয়াখালীর পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

ওই নারীর নিরাপত্তা, জবানবন্দি নেওয়া, দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণসহ সার্বিক ঘটনায় স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কোনো অবহেলা আছে কি না তা অনুসন্ধানে নোয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি করে দিয়েছে হাই কোর্ট। কমিটিকে ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে হাই কোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

এদিকে ওই ঘটনার প্রতিবাদে নোয়াখালীসহ সারা দেশেই বিক্ষোভ-মানববন্ধনের মত কর্মসূচি পালন করছে বিভিন্ন সংগঠন। নিপীড়কদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানানো হচ্ছে সেসব কর্মসূচি থেকে। বর্বর এই ঘটনায় জড়িত সবাইকে বিচারের আওতায় এনে সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন সবাই।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে