ব্যাংকিং খাতে এই মুহূর্তে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৬ হাজার কোটি টাকা। বিপুল অঙ্কের খেলাপিই গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যাংকিং খাত। পাশাপাশি পুঁজিবাজারে সংকট রয়েছে প্রশিক্ষিত বিনিয়োগকারীর।
ফলে শেয়ারবাজার পরিস্থিতিও ভালো হচ্ছে না। এ দুটিসহ আর্থিক খাতে সাত সমস্যা শনাক্ত করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে এসব সমস্যা। সাম্প্রতিক অর্জন, চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা-শিরোনামের এ প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সঙ্গে বার্ষিক কর্মসম্পাদন (এক বছরের জন্য) চুক্তির জন্য।
সম্প্রতি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের আগামী এক বছরের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
প্রতিবেদনে চিহ্নিত আর্থিক খাতের অন্য পাঁচটি সমস্যা হচ্ছে-রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় গ্রাহকের সেবার মান অনুন্নত, ব্যাংকিং সেবা থেকে বড় ধরনের একটি গোষ্ঠী বঞ্চিত, বীমা সম্পর্কে জনগণের আস্থাহীনতা, শেয়ারবাজারে লেনদেনের পর ক্লিয়ারিং সেটেলমেন্ট বিলম্ব ও আর্থিক খাতে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ গণমাধ্যমকে বলেন, খেলাপি ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে লক্ষ্য নির্ধারণ করা ভালো।
তবে এটি অর্জন করতে পারলে পুরস্কার আর ব্যর্থতায় তিরস্কারের বিষয়টি যোগ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, খেলাপি ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে অনেক ধরনের চাপ আসবে।
রাজনৈতিক চাপও আসবে। এই চাপমুক্ত থেকে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করতে পারলে যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটি অর্জন সম্ভব হবে। পাশাপাশি এ কাজের মনিটরিংও করতে হবে।
সাম্প্রতিক অর্জন, চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা শীর্ষক এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উল্লিখিত সমস্যাগুলো সমাধান করাই হবে প্রধান চ্যালেঞ্জ।
সেখানে আরও বলা হয়, ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ যাতে না বাড়ে, এজন্য আগামী এক বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় মোট খেলাপি ঋণ থেকে আরও ৪০ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে আনা হবে।
এমন লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেয়া হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ থেকে আরও ১৬ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে। করোনাভাইরাসের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা।
তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এ বছর এসএমই খাতে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর মধ্যে ২ কোটি ৩৪ লাখ নারী উদ্যোক্তাকে দেয়া হবে ৮০০ কোটি টাকা। তবে একই সময়ে এ খাতে ঋণ আদায় করা হবে ১ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা।
জানা গেছে, ব্যাংকিং খাতের সেবার বাইরে এখন বড় একটি গোষ্ঠী রয়েছে। ব্যাংকিং খাতের সঙ্গে লিংকেজ না থাকায় করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকার ১ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করলেও এর সুবিধা অনেকে নিতে পারেনি।
এজন্য ব্যাংকগুলোকে তাদের কার্যক্রম আরও সম্প্রসারণের মাধ্যমে বঞ্চিত গোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করার কর্মসূচি নেয়া হবে। বিশেষ করে ইন্টারনেট ব্যাংকিং সম্প্রসারণ করে নতুন করে ৫০ লাখ গ্রাহক সংখ্যা বাড়ানো হবে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, ব্যাংকিং খাতে ভালো উদ্যোক্তাদের ঋণ দেয়া হবে। এ খাতে ঋণের পরিমাণ বাড়ানো হবে।
পাশাপাশি প্রচলিত ব্যাংকিং সেবার সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা বিশেষ করে মোবাইল ব্যাংকিং, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া হবে।
বিশেষ করে মোবাইল ব্যাংকিং খাতে আরও ৬০ হাজার নতুন গ্রাহক সৃষ্টির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার আওতায়।