নাগরিকের পরিচয় শনাক্তের রাষ্ট্রায়ত্ত পত্র তথা জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) জাল-জালিয়াতি প্রতিরোধে সারাদেশে সাঁড়াশি অভিযানে নেমেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অনিয়ম করে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি, জাল-জালিয়াতি ও দ্বৈত ভোটার হওয়াসহ বিভিন্ন অভেযোগের মুখে এই অভিযান চালাচ্ছে ইসির এনআইডির উইং।
এরইমধ্যে এনআইডি উইং এসব অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। ঢাকা জেলায় সাঁড়াশি অভিযান পরিচলনার জন্য পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট চারটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। দ্বৈত ভোটার হওয়া ৯২৭ জনের এনআইডি লকড করা হয়েছে। আর গত আট বছরে এই ধরনের অপকর্মে জড়িত থাকার প্রমাণ মেলায় ৩৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল এসব তথ্য গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) জালিয়াতির সঙ্গে যারা জড়িত তাদের ধরতে আমরা দেশব্যাপি সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছি। আমাদের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী এখন নজরদারিতে আছে। জাতীয় পরিচয়ত্র জালিয়াতির সাথে জাতীয় নিবন্ধন অনুবিভাগ ও আইডিইএ প্রকল্পের কর্মকর্তা কর্মাচারীসহ যেই জড়িত থাকুক না কেন তাদের বিরুদ্ধে মামলাসহ কঠোর শাক্তিমুলক ব্যবস্থা নিতে বদ্ধ পরিকর আমরা।
এদিকে জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে বিভিন্ন অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় স্থায়ীভাবে ৩৯ জনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সম্প্রতি লালমনিরহাটে অবৈধ উপায়ে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন এবং পরিচয়পত্রর তথ্য সংগ্রহের অভিযোগের মামলায় লালমনিরহাট সদর উপজেলার ডাটা এন্ট্রি অপারেটর এস এম আজম শাহী কে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। এর আগে লালমনিরহাট সদরে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর এ এম আজম শাহী এবং আদিতমারী উপজেলার মো. জুয়েল বাবুর বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগের তদন্তের প্রয়োজনে ঢাকা নির্বাচন কমিশনে আইডিইএ প্রকল্প কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়।
তাদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরীর অপচেষ্টার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গত রোববার রাতেই লালমনিরহাট সদর থানায় মামালা হয়। মামলার প্রেক্ষিতে গত সোমবার লালমনিরহাট সদর থানা পুলিশের কাছে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর এম এম আজম শাহীকে তুলে দেয় ইসি।
এনআইডি তদারকিতে সাঁড়াশি অভিযান:
ঢাকা জেলায় সাড়াশি অভিযান পরিচলনার জন্য পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট চারটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। পর্যাক্রমে দেশব্যাপি ১০টি টিমের মাধ্যমে সাঁড়াশি ও ঝটিকা অভিযান পরিচলনা করা হবে।
রোহিঙ্গা অন্তর্ভুক্তি রোধে পদক্ষেপ:
প্রায় ৯ লাখের বেশি রোহিঙ্গার বায়োমেট্রিক তথ্যসহ আলাদা রোহিঙ্গা ডাটাবেজ স্থাপন করা হয়েছে। অবৈধভাবে রোহিঙ্গারা যেন ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্তি হতে না পারে সেজন্য অনুসন্ধান টিম পাঠানো হয়েছে। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অধিকতর অদন্তের জন্য ৮ সদস্য বিশিষ্ট একটি কারিগরি কমিটি এবং একটি প্রশাসনিক কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটিতে বুয়েট/ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় /বাংলাদেশ কস্পিউটার কাউন্সিল এর প্রতিনিধি রয়েছ। অধিকতর অতন্তের সুবিধার্থে একজন যুগ্নসচিবের নেতৃত্বে প্রশাসনিক কমিটি গঠন করা হয়।
জাতীয় পরিচয়ত্র নিবন্ধন আইন ২০১০-এর ১৬ ধারা অনুযায়ী তথ্য-উপাত্ত বিকৃত বা বিনষ্ট করলে সাত বছর কারাদণ্ড অথবা এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্র প্রস্তুতের সঙ্গে জড়িত কোনও ব্যক্তি যদি দায়িত্বে অবহেলা করে ১৭ ধারা অনুযায়ী এক বছরের কারাদণ্ড ও বিশ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
দ্বৈত ভোটার নিবন্ধন রোধে পদক্ষেপ:
দ্বৈত ভোটার পাওয়া গেলে প্রাথমিকভাবে বিধি মোতবেক প্রথমটি রেখে পরবর্তী ভোটার তথ্য ব্লক করে দেয়া হয়। উদ্দেশ্যমূলকভাবে তথ্য গোপন করে দ্বৈত ভোটার হওয়ার প্রমাণ পাওয়ায় ইতোমধ্যে ৯২৭ জনের এনআইডি লক করাসহ ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯ এর ধারা ১৮ এবং জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০১০ এর ধারা ১৪ ও ১৫ অনুসারে নির্বাচন কমিশন ফৌজধারী মামলা দায়ের করার নির্দেশনা প্রদান করেছে।
দ্বৈত ভোটারের বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল বলেন, আমরা বিষয়টি যাচাই বাছাই করে দেখছি। যাদের উদ্দেশ্য খারাপ না। আগের এনআইড তুলেনি সে ব্যবহার করেনি। হয়তো জানে না। সেজন্য তাদের হয়তো মওকুফ বা একটা পেনাল্টি দিয়ে ব্যবস্থা করে দিব।
এক প্রশ্নের জাবাবে তিনি বলেন, ১১ কোটি লোকের সার্ভার এটা। আমরা গতবার যখন হালনাগাদ পরিচালনা করি, তখন কিন্তু আমরাই বের করেছি ২ লাখ ৭ হাজার ৬৩৫ জন ব্যক্তি যারা দ্বৈত ভোটার হতে তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য চেষ্টা করেছিল। সুতরাং আমরা যে পারছি না, তা নয়। তবে একটি জিনিসকে ম্যাচিউরড পর্যায়ে আসতে সময় ও রিসোর্স প্রয়োজন।