কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের একটি অংশকে নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তর করতে চায় সরকার। তবে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে না পাঠানোর জন্য আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা থেকে সরকারের ওপর চাপ রয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদূল মোমেন।
রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ঢাকায় নবনিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামীর সঙ্গে বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এ কথা বলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে না পাঠানোর জন্য আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা থেকে সরকারের ওপর চাপ রয়েছে। বিশেষ করে ইউএনএইচসিআরসহ (হিউম্যান রাইটস ওয়াচ) বিভিন্ন সংস্থা থেকে চাপ রয়েছে।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের একটি অংশকে নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তর করতে দীর্ঘদিন থেকে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। কিন্তু জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর আপত্তির কারণে সরকারের এই প্রচেষ্টা সফল হচ্ছে না। গত বছর অনেকটা বিরক্ত হয়ে সরকার রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।
ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে সরকারের সরে আসার বিষয়টি প্রথম আলোচনায় আসে যখন অবকাঠামো নির্মাণ পরিস্থিতি দেখতে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সেখানে যান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এরপরই ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তর থেকে সরকার আপাতত সরে আসছে বলে আলোচনার শুরু হয়।
পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এটা নিয়ে কথা বলেন। এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা সেখানে না যেতে চাইলে আমাদের দেশের অসহায় মানুষকে সেখানে রাখা হবে।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত থেকে সরকার সরে আসার কথা শোনা গেলেও পরবর্তীতে সরকার সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।
করোনা মহামারির শুরুর দিকে সাগর থেকে উদ্ধার করা ৩০৬ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর ভাসানচরে পাঠানো হয়। তারা সেখানে ভালো আছে। তাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে চলতি বর্ষা মৌসুম শেষে রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে ভাসানচরে স্থানান্তরের কথা ভাবছে সরকার।
সেই লক্ষ্যে ভাসানচরে ‘গো অ্যান্ড সি’ প্রকল্পের অধীনে গত মাসের শুরুর দিকে ৪০ জন রোহিঙ্গা নেতাকে চার দিনের সফরে ভাসানচর দেখাতে নিয়ে যাওয়া হয়। ফিরে এসে তারা অবকাঠামোর প্রশংসা করলেও সেখানে যাওয়ার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। তাদের ধারণা, ভাসানচরে গেলে রোহিঙ্গারা ভালো থাকলেও বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। তবে, রোহিঙ্গারা ভাসানচরে গেলেই ভালো থাকবেন বলে মনে করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
মোমেন বলেন, রোহিঙ্গারা রাখাইনে যেভাবে জীবিকা নির্বাহ করতেন, ভাসানচরে গেলে সেভাবেই জীবিকা নির্বাহ করতে পারবেন। এছাড়া ভাসানচরে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। সেখানে এখন কোনো পানি ওঠে না। তাই ভাসানচরে গেলে কোনো সমস্যা হবে না। সেটা একটা সুন্দর জায়গা।
রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে দুই হাজার ৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচরের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে সরকার। জোয়ার–জলোচ্ছ্বাস থেকে এই চরের ৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা রক্ষা করতে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ তৈরি করেছে। এক লাখ রোহিঙ্গার জন্য সেখানে ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার মিলিটারির নির্যাতনের শিকার হয়ে সাড়ে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। আগে থেকে অবস্থান করছে চার লাখের মতো। বর্তমানে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে।
এ সমস্যা সমাধানের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমার চুক্তি করলেও মিয়ানমারের অনাগ্রহের কারণে এই চুক্তি বাস্তবায়িত হয়নি। পরপর দুবার প্রত্যাবাসনের খুব কাছাকাছি গিয়েও একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে পাঠানো যায়নি মিয়ানমারের কারণে।