পূজা ঘিরে সিরাজগঞ্জের পালপাড়ায় ব্যস্ত সময় পাড় করছেন প্রতিমা শিল্পীরা। ইতোমধ্যে সিরাজগঞ্জের বেশির ভাগ প্রতিমা তৈরির অবকাঠামোর কাজ শেষ। এখন দেবী দূর্গার অনিন্দ্য সুন্দর রূপ দিতে দিনরাত রং-তুলির কাজ করে যাচ্ছেন শিল্পীরা।
জেলার পূজা মণ্ডপগুলোর কাজও শেষের দিকে। এবার আলোকসজ্জার ব্যবস্থা না থাকলেও আয়োজনের কোনো কমতি নেই। এবার জেলার ৯টি উপজেলার প্রায় ৪৭০টি মণ্ডপে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে শারদীয় দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
সরেজমিনে গিয়ে জেলার বিভিন্ন পালপাড়ায় দেখা যায়, করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রতিমার অর্ডার অনেকটাই কমে গেছে। জেলার সদর, কামারখন্দ, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর, রায়গঞ্জ, তাড়াশ, বেলকুচি, কাজিপুর ও চৌহালীর বিভিন্ন পূজামণ্ডপে খড় আর কাদামাটির কাজ প্রায় শেষের দিকে। শুরু হয়েছে রং তুলির কাজ। রং তুলিতে সাজানো হচ্ছে প্রতিমার অপরূপ সৌন্দর্য।
তবে দেবী দুর্গাকে নানা রঙে রাঙালেও প্রতিমা তৈরির উপকরণ ও রঙের দাম বেড়ে যাওয়ায় ন্যায্য পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রতিমা কারিগররা। এজন্য অনেক প্রতিমা শিল্পীর মুখভার।
পঞ্জিকা মতে আগামী রোববার (২২ অক্টোবর) শুরু হয়ে ৫ দিনব্যাপী চলবে হিন্দু ধর্মের সবচয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গাপূজা। প্রতিমা শিল্পীরা জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে এসে রং তুলির কাজ করছেন।
কামারখন্দ উপজেলার ভদ্রঘাট পালপাড়ার প্রতিমা তৈরির কারিগর গুপিনাথ পাল (৬৫) বলেন, প্রতি বছর ২০-২৫টি প্রতিমা তৈরি করে থাকি। কিন্তু এ বছর মাত্র ১৫টি প্রতিমার কাজ করছি। করোনা প্রভাবে ১৫টি প্রতিমার মধ্যে এখনও ১ সেট প্রতিমাও বিক্রি করতে পারিনি। বাপ-দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রায় ৪০ বছর যাবৎ এই পেশায় জড়িত রয়েছি। এরকম অবস্থা আগে কখনও দেখিনি।
রণজিত পাল ও সুভাষ পালসহ প্রতিমা শিল্পীরা বলেন, প্রতিমা তৈরির উপকরণ মাটি, খড় ও সুতলি-রঙের দাম বেড়ে যাওয়ায় আগের মতো প্রতিমা তৈরি করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এবার পূজা মণ্ডপের সংখ্যাও কমে যাওয়ায় প্রতিমা বিক্রিও কমে গেছে।
সিরাজগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সন্তোষ কুমার কানু বলেন, আসন্ন শারদীয় দুর্গা পূজা উপলক্ষে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। করোনা ভাইরাসের কারণে এবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজা করতে হবে। শুধু সাজসজ্জার সামান্য কাজ বাকি। সামনে যে সময় আছে তাতে আমরা সময় মতো সব কাজ শেষ করতে পারব।
সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার হাসিবুল আলম জানান, পূজায় যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নেয়া হয়েছে। প্রতিটি মণ্ডপে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্ক সাধ্য অনুযায়ী রাখতে হবে। একসঙ্গে জটলা পাকানো যাবে না, সন্ধ্যা আরতি চলাকালে কোনো আচরণবিধি লঙ্ঘন করা যাবে না। প্রতিটি পূজামণ্ডপে সার্বক্ষণিক পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে।
এছাড়াও আনছারসহ মোবাইল টিম সার্বক্ষণিক পূজামণ্ডপগুলো নজরদারিতে রাখবে। পাশাপাশি সবকটি পূজা মণ্ডপ গোয়েন্দা নজরদারিতে থাকবে বলে তিনি জানান।