দুধের বোতল থেকে শিশুদের শরীরে ঢুকতে লাখ লাখ মাইক্রোপ্লাস্টিক। সম্প্রতি এক গবেষণায় চাঞ্চল্যকর এই তথ্য পাওয়া গেছে।
গবেষকরা বলছেন, যে সব বাচ্চারা বোতলে দুধ খায় তাদের মুখে লক্ষাধিক মাইক্রোপ্লাস্টিক চলে যায়। যেহেতু এটা তাদের প্রতিদিনের অভ্যাস, তাই এই বিষাক্ত পদার্থ রোজ শিশুদের পেটের ভিতরে চলে যাচ্ছে। মানুষের খাদ্য দ্রব্যে কীভাবে প্লাস্টিক মিশে যাচ্ছে, সেই নিয়ে গবেষণার সময়ে এই তথ্য উঠে এসেছে।
খুবই আশঙ্কার কথা হলো এই যে শুধু অবোধ শিশুরা নয়, আমরা প্রত্যেকেই একটু একটু করে নিজের অজান্তে এই মাইক্রোপ্লাস্টিক খাচ্ছি! বড় প্লাস্টিকের টুকরো থেকে এই মাইক্রোপ্লাস্টিকের টুকরো তৈরি হয়। এর প্রভাব আমাদের শরীরের পক্ষে ঠিক কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে, সেই বিষয়ে আমাদের কোনও ধারণা নেই বলেই সচেতন করছে গবেষণা।
যেমন, যে সব প্লাস্টিকের কৌটোয় আমরা খাবার রাখি, সেগুলো পলিপ্রোপেলিন বলে এক ধরনের প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি। সেগুলো ছাড়াও প্রায় বাচ্চারা ব্যবহার করে এরকম ১০ প্রকারের বোতল পরীক্ষা করে দেখেছেন আয়ারল্যান্ডের গবেষকরা।
যদিও এই কৌটো বা বোতলগুলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বাস্থ্যবিধি মেনেই তৈরি হয়েছে, তা স্বত্ত্বেও গবেষকরা দেখেছেন যে প্রতি লিটারে একটি বোতল থেকে ১.৩ থেকে ১৬.২ লক্ষ মাইক্রোপ্লাস্টিক নির্গত হচ্ছে।
এই ভাবে বিভিন্ন বোতল থেকে প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে গবেষকরা একটি মডেল তৈরি করেন। যেখানে দেখানো হয় যে কত জন শিশু বোতলে দুধ বা পানি খায় এবং কত জন শিশু স্তন্যপান করে। এই মডেল তৈরির উদ্দেশ্য হল এটাই দেখানো যে জীবনের প্রথম ১২টি মাস একটি শিশু প্রতি দিন ১.৬ মিলিয়ন মাইক্রোপ্লাস্টিক নিজের ভিতরে গ্রহণ করছে।
আমরা এত দিন জানতাম যে কোনও বাচ্চাকে দুধ বা পানি দেওয়ার আগে সেই বোতল জীবাণুমুক্ত করতে হবে। আর সেটা করতে গিয়ে আমরা বোতল গরম পানিতে ফোটাতাম। কিন্তু খুবই আশঙ্কার কথা এই যে ফুটন্ত পানিতে বোতল দিলে তার থেকে আরও বেশি করে মাইক্রোপ্লাস্টিক নির্গত হয়! গবেষণা এটাই বলছে।
তবে গবেষকরা এও বলেছেন যে এই গবেষণার উদ্দেশ্য বাবা-মায়েদের ভয় দেখানো নয়। সন্তানকে নিরাপদে রাখার জন্য বাবা-মাকে আরও বেশি তৎপর হতে হবে। বিশেষ করে মায়েদের বুঝতে হবে কী ভাবে শিশুদের শরীরে এই প্লাস্টিক ঢোকা বন্ধ করা যায়। এর জন্য ঠাণ্ডা পানিতে বোতল ধুতে হবে এবং দুধ অন্য কোনও পাত্রে, যা প্লাস্টিকের নয় সেটাতে তৈরি করে, তার পর বোতলে ঢাললে কিছুটা হলেও সমস্যা দূর হবে।