আজ রবিবার (২৫ অক্টোবর) রীতি অনুযায়ী মহানবমী পূজা হবে। আগামীকাল সোমবার (২৬ অক্টোবর) বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসবের সমাপ্তি হবে।
করোনা পরিস্থিতির কারণে গতকাল শনিবার মহা-অষ্টমীতে কুমারীপূজা হয়নি। তবে বৃষ্টি থাকলেও রাজধানীর মণ্ডপগুলোতে ভক্ত-পুণ্যার্থীদের ভিড় আগের দুই দিনের তুলনায় কিছুটা বেশি ছিল।
মহা-অষ্টমীর ঐতিহ্য কুমারীপূজার আয়োজন না থাকায় এবার রাজধানীর রামকৃষ্ণ মন্দিরে দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা যায়নি। তবে মহা-অষ্টমীর দিন সকালে ষোড়শ উপাচারে অনুষ্ঠিত হয় দেবীর পূজা। ১০৮ পদ্ম এবং প্রদীপ দিয়ে দেবী দুর্গার আরাধনা করা হয়।
সকাল ৫টা ১৬ মিনিটের মধ্যে দুর্গা দেবীর মহাষ্টম্যাদি বিহিত পূজা ও মহা-অষ্টমীর ব্রতোবাস শুরু হয়। এরপর সকাল ৬টা ৩৫ মিনিট থেকে ৭টা ২৩ মিনিটের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় সন্ধিপূজা।
পূজার আনুষ্ঠানিকতার পর ভক্তরা অঞ্জলি দেন। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ভক্তদের বেশির ভাগই নবাসায় বসে অঞ্জলি দিয়েছেন। বাসায় থেকে অঞ্জলি দেওয়ার জন্য বিভিন্ন টেলিভিশন ও ফেসবুকে সরাসরি অঞ্জলি প্রদান অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয়।
অন্যবারের মতো উৎসবে ভাটা দেখা গেলেও বৃষ্টি উপেক্ষা করে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে অঞ্জলি দিতে পূজামণ্ডপে এসেছেন কেউ কেউ। রাজধানীর কলাবাগান মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যেই অনেক ভক্ত অঞ্জলি দিচ্ছেন। তবে ভক্তদের ভিড় করতে দেখা যায়নি। ভিড় না করতে পূজা উদযাপন কমিটির পক্ষ থেকেও নজরদারি রাখা হয়েছে। ওই মণ্ডপে শ্যামলী নামের এক ভক্ত জানান, সরাসরি মণ্ডপে এসে অঞ্জলি দেওয়ার মর্যাদা আলাদা। ভক্তদের প্রার্থনায় মা দুর্গা দ্রুত পুরো পৃথিবীকে করোনামুক্ত করবেন বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
অনেকটা একই চিত্র দেখা গেছে, জয়কালী মন্দির, বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির, রমনা কালীমন্দির, শ্যামবাজার শিবমন্দির, খামারবাড়ি মন্দির, সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির, স্বামীবাগ ইসকন মন্দিরসহ নগরীর অন্য মণ্ডপগুলোতে। অবশ্য ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে ভিড় ছিল বেশি। সন্ধ্যার পর এই ভিড় কমতে শুরু করে।
আজ মহানবমীর দিন ভিড় আরো বাড়বে বলে আয়োজকরা মনে করেন। পঞ্জিকা অনুযায়ী, আজ ভোর ৫টা ১৭ মিনিট থেকে সকাল ৭টার মধ্যে দুর্গা দেবীর মহানবমী কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা। অনেকের বিশ্বাস, মহানবমীর দিন হচ্ছে দেবী দুর্গাকে প্রাণভরে দেখে নেওয়ার ক্ষণ। এই দিনই দুর্গাপূজার অন্তিম দিন। পরদিন কেবল বিজয়া ও বিসর্জনের পর্ব।
ঢাকা মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শৈলেন্দ্রনাথ মজুমদার জানান, করোনা সতর্কতা ও বৃষ্টির কারণে অনেকেই মণ্ডপ প্রদর্শনে আসেননি। তবে নবমীর দিনে তাঁরা আসবেন। এ কারণে মণ্ডপগুলোতে ভিড় কিছু বাড়বে। সেটা বিবেচনায় রেখে ভক্ত-দর্শনার্থীদের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
করোনা মহামারির কারণে এ বছর বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। উৎসব সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো পরিহার করে সাত্ত্বিক পূজায় সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। সন্ধ্যায় আরতির পরই বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে পূজামণ্ডপ। থাকছে না সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ধুনুচি নাচের প্রতিযোগিতা। স্বাস্থ্যবিধির দিকে খেয়াল রেখে পূজায় প্রসাদ বিতরণ ও বিজয়া দশমীর শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মিজানুর রহমান শামীমের নির্দেশে দুর্গাপূজা উপলক্ষে মণ্ডপের নিরাপত্তায় আনসার সদস্য মোতায়েনের কাজ চলছে। এ বছর সারা দেশের ২৯ হাজার ৯০০টি পূজামণ্ডপে এ বাহিনীর ৩৯ হাজার ৩২০ জন্য সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া তিন হাজার ৯৪৮টি মোবাইল টিম পালাক্রমে ২৪ ঘণ্টা মণ্ডপগুলোর নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকছে। গতকাল বাহিনীর পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।