নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তাকে মারধরের মামলায় গ্রেপ্তার ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিমকে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩০নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন।
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আ ন ম ফয়জুল হক স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে ইরফান সেলিমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এর দুপুরে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম জানিয়েছিলেন আজই বরখাস্ত করা হবে দণ্ডপ্রাপ্ত এই কাউন্সিলরকে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, যেহেতু জনাব মোহাম্মদ ইরফান সেলিম, পিতা: হাজী মোহাম্মদ সেলিম, ২৫নং বড় কাটারা, ডাকঘর পোস্তা, ঢাকা-১২১১, থানা চকবাজার, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৩০নং সাধারণ ওয়ার্ডের নির্বাচিত কাউন্সিলর এবং যেহেতু তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর একজন কর্মকর্তা ও তার স্ত্রীর ওপর হামলার অভিযোগে ফৌজদারী মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং যেহেতু তিনি বিদেশি মদ সেবন করার দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত কর্তৃক ১ (এক) বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন এবং ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১ (এক) মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে ইতোমধ্যে কারাগারে প্রেরিত হয়েছেন; এবং যেহেতু তার বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র, মাদক রাখার দায়ে আরও মামলা দায়ের করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে; এবং যেহেতু তার উক্ত কর্মকাণ্ড স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন, ২০০৯ এর ধারা ২ (৩৭) এবং ও ১৩ (১)(খ) (ঘ) অনুযায়ী নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধ এবং অসদাচরণের শামিল, এবং যেহেতু সিটি কর্পোরেশনের কোনো কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধ এবং অসদাচরণের অভিযোগে স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন, ২০০৯ এর ধারা ১৩ অনুযায়ী কার্যক্রম শুরু করা হলে, উক্ত আইনের ধারা ১২ এর উপ-ধারা (১) অনুযায়ী অভিযুক্ত কাউন্সিলরকে সাময়িক বরখাস্তের বিধান রয়েছে, সেহেতু স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন, ২০০৯ এর ধারা ১২ এর উপ-ধারা (১) এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৩০নং সাধারণ ওয়ার্ডের নির্বাচিত কাউন্সিলর পদ হতে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হল।’
উল্লেখ্য, রোববার রাতে নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ওয়াসিফ আহমেদ খানকে মারধরের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সোমবার হাজী সেলিমের ছেলে এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইরফানের বাসায় অভিযান চালায় র্যাব। অষ্টম তলা ভবনের প্রতিটি ফ্লোরে অভিযান চলে। ইরফানের বাসা থেকে বেশ কিছু অবৈধ জিনিস উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ছিল একটি আগ্নেয়াস্ত্র, যেটা অবৈধ। সেটির কাগজপত্র দেখাতে পারেননি তিনি। এছাড়া ৫-৬ লিটার মদ ও ৪০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। পাওয়া যায় বেশ কিছু বিয়ারের ক্যান।
অভিযান চালিয়ে হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান ও তার দেহরক্ষী জাহিদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরে ইরফানকে মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে এক বছর ও অবৈধ ওয়াকিটকি রাখার দায়ে আরও ছয় মাস কারাদণ্ডাদেশ দেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম। আর জাহিদুলকে অবৈধ ওয়াকিটকি বহনের দায়ে ছয় মাস কারাদণ্ড দেয়া হয়।
গত ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে হারিয়ে জয়ী হন ইরফান। বিদেশে লেখাপড়া করে আসা ইরফান বাবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মদিনা গ্রুপের পরিচালকদের একজন।