পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে উপাচার্যরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভর্তি পরীক্ষা
ফাইল ছবি

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সরাসরি ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার ঘোষণা দেয়ায় পর এ পদ্ধতি নিয়ে ফের দোলাচলে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিতে গেলেও, ২০ লাখ শিক্ষার্থীকে ঝুঁকির মধ্যে না ফেলতে অনলাইন মাধ্যমে পরীক্ষা নিতে চান উপাচার্যরা। এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আগামী সপ্তাহে শিক্ষামন্ত্রীকে নিয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে বসতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম জানান, অন্যরা নিজেদের মতো করে ভর্তি পরীক্ষা নিলে আমাদেরও বাঁধা নেই। তবে আমরা সরকারের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় যুক্ত হতে সম্মতি দিয়েছি। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে ইতোমধ্যে ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বৈঠকের জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে। সেটি ইউজিসি সমন্বয় করে সময় নির্ধারণ করবে। তবে সরাসরি না অনলাইন পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়া হবে, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়া যায়নি।

তিনি বলেন, গুচ্ছ পরীক্ষা নেয়ার জন্য যারা একমত হয়েছিলেন তারা বলছেন, ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রামসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় যদি সরাসরি ও এককভাবে ভর্তি পরীক্ষা নিতে পারে তাহলে আমরাও নেব। একইসঙ্গে গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নিলে অনেক শিক্ষার্থীর সমাগম ঘটবে, যে কারণে সশরীরে পরীক্ষা নেয়া অনেকটাই অনিশ্চিত। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রত্যেকটি কোন পদ্ধতি অবলম্বন করা হবে, সে বিষয়ে ত্রিপাক্ষিক সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

রফিকুল ইসলাম বলেন, ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বড় প্রতিষ্ঠানগুলো যদি স্বাস্থ্যবিধির নিশ্চয়তা দিয়ে সশরীরে পরীক্ষা নিতে পারে, তাহলে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এককভাবে সেটার চেষ্টা করবে। তবে এর জন্য অবশ্যই একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত জরুরি। এক্ষেত্রে বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সামনে এগিয়ে আসা উচিত। কিন্তু তারা সেটি করছে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান জানান, বিভাগীয় পর্যায়ে ইউনিট ভাগ করে পরীক্ষা নেয়ার চিন্তা করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এক্ষেত্রে রাজশাহী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ও যদি এভাবে পরীক্ষা নেয় তাহলে অনেক সময় লেগে যাবে। সবাই যদি গুচ্ছ পদ্ধতিতে আসে তাহলে সাধারণ, ইঞ্জিনিয়ারিং, কৃষি, আলাদা করে তিনটি গুচ্ছ পরীক্ষা নিলেই সমাধান হয়ে যায়।

তিনি বলেন, গুচ্ছ পদ্ধতিতে সশরীরে পরীক্ষা নেয়া সম্ভব নয়। কারণ এতে কমপক্ষে ২০ লাখ শিক্ষার্থীর সমাগম ঘটবে। আর হবে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এক্ষেত্রে অনলাইন ছাড়া বিকল্প নেই। তবে বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো না আসায় এখনো গুচ্ছ পদ্ধতির নিশ্চয়তা দেয়া যাচ্ছে না। আগামী সপ্তাহে বৈঠক হতে পারে। বৈঠকে একটা সিদ্ধান্ত আসবে।

দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এবার ভর্তি পরীক্ষা কীভাবে নেয়া হবে, সেই সিদ্ধান্ত নিতে বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) ইউজিসির সদস্যরা সভা করে গুচ্ছ পদ্ধিতিতে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজনের পূর্ণ প্রস্তুতি হিসেবে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করবেন। সেটি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসি ও বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য পরিষদের ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে উপস্থাপন করা হতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা অনলাইনে হবে নাকি সরাসরি হবে, তা নিয়ে উপাচার্যরা এখনও কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি। বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) সব সদস্য বৈঠকে বসবেন। সেখানে এ বিষয়ে প্রস্তুতিমূলক আলোচনা হবে।

অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার সম্ভাবনা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক আলমগীর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ এ বিষয়ে ইতোমধ্যে আলোচনার জন্য একটি চিঠি দিয়েছে। যাতে এ ব্যাপারে ইউজিসি উদ্যোগে নেয়। তবে সেই সভার দিন এখনও ঠিক হয়নি। আগামী সপ্তাহের মধ্যে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হতে পারে।

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ওই বৈঠকে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহসহ কমিশনের সদস্য ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। সভায় শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির উপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি সংক্রান্ত সকল সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

অধ্যাপক আলমগীর বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হলেও কোন পদ্ধতিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। সভা আয়োজনে গত ২৫ অক্টোবর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের পক্ষ থেকে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সে প্রস্তাবের ভিত্তিতে সভার আয়োজন করা হবে।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে পরীক্ষার বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য পরিষদ সিদ্ধান্ত নিলেও সেটি সশরীরে নাকি অনলাইনে নেয়া হবে সে বিষয়ে উপাচার্যরা সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি সফটওয়্যার নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তবে সে বিষয়ে তারা কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি। ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে এ সংক্রান্ত যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে