আমি পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষার পক্ষে: মোকতাদির চৌধুরী

মোহাম্মদ সজিবুল হুদা

মোকতাদির চৌধুরী এমপি
১৬তম শিশু মেধা বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। ছবিঃ মোহাম্মদ সজিবুল হুদা

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং চিনাইর শিশু মেধাবৃত্তি ফাউন্ডেশনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেছেন, সরকারিভাবে পঞ্চম শ্রেণিতে যে পরীক্ষাটা (পিএসসি) হয় , আমি জানি না ভবিষ্যতে এই পরীক্ষাটা থাকবে কিনা। তবে আমি এই পরীক্ষার পক্ষে। কারণ এটিই একমাত্র পরীক্ষা যার মাধ্যমে আমাদের মফস্বলের ছেলে-মেয়েরা বড় বড় আধুনিক শহরগুলোর ছেলে-মেয়েদের সাথে একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে। আমি জেএসসি পরীক্ষারও পক্ষে। কারণ এসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের পূর্বে একটা ট্রেইনিং পেয়ে থাকে। আমি জানি না, এই পরীক্ষাগুলো বন্ধ করার জন্য কিছু কিছু শিক্ষাবিদ কেন উঠে পড়ে লেগেছেন। কিন্তু পঞ্চম শ্রেণির (পিএসসি) এবং অষ্টম শ্রেণিতে তথা নিম্ন মাধ্যমিক পর্যায়ে অনুষ্ঠিত এই পরীক্ষাগুলোর বিরুদ্ধে ছাত্র-ছাত্রীদের কোনোরূপ বিক্ষোভ আমি দেখিনি। এমনকি এর বিরুদ্ধে অভিভাবকদের কোনোরূপ ক্ষোভও আমি দেখিনি বরং সরকারের উদ্যোগের আগে আমাদের চিনাইরে যে পরীক্ষাটা দাঁড় করাতে চেয়েছিলাম সেটির পক্ষে ব্যাপক জনসমর্থন পেয়েছি। ছাত্র-ছাত্রীরাও ব্যাপক উৎসাহে এটিতে অংশগ্রহণ করছে। আমার মনে হয় এই দুটি পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সরকারকে আরও ভেবে দেখা উচিত। এই বিষয়ে প্রয়োজনে পার্লামেন্টও কথা উঠাবেন বলে জনান তিনি।

আজ শনিবার সকাল ১১টায় শিশু মেধা বৃত্তি প্রদান উপলক্ষে হালিমা রউফ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত আলোচনা সভায় বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ এসব কথা বলেন।

বিশিষ্ট এই শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব বলেন, আমরা যখন বৃত্তি প্রদানের চিন্তা থেকে কাজ শুরু করি তখন ব্যক্তিগতভাবে আমার এবং প্রফেসর ফাহিমা খাতুন দুজনেরই দুর্দিন ছিল। তদানিন্তন সরকার আমার বিরুদ্ধে অনেকগুলো মিথ্যা মামলা দায়ের করেছিল এবং আমাকে এসব মামলা মোকাবেলা করতে হচ্ছিল। আর প্রফেসর ফাহিমা খাতুনকে ঢাকা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বদলি করেছিল। আমি মনে করি, ঐসব এখন আশীর্বাদে রূপ নিয়েছে।

মোকতাদির চৌধুরী বলেন, চিনাইর শিশু মেধা বৃত্তি পরীক্ষা নিয়ে কাজ শুরুর সময় কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে একটা বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়া হত। কিন্তু তাদের কাজকর্ম আমাদের খুব একটা পছন্দ হতো না, সেজন্য আমরা স্বতন্ত্র বৃত্তি পরীক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ করলাম এবং সেই লক্ষ্য নিয়ে আমার ক্লাস ওয়ান থেকে ফাইভ পর্যন্ত বৃত্তি পরীক্ষার প্রচলন করি। সেই পরীক্ষাটাতে আমরা একটা স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেইনের চেষ্টা শুরু করি। শুরু সদর উপজেলা তথা চিনাইর ও তার পাশ্ববর্তী এলাকার ১৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৯টি উপজেলার ২৬৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আমাদের এই বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করছে।

প্রবীণ এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, খুব কষ্ট হয় একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এই কথা বলতে; বাংলাদেশটা এখন যে পর্যায়ে আছে, এমন একটি বাংলাদেশ আমরা চাইনি। দুর্নীতি, দুরাচারী কর্মকাণ্ড এবং দুষ্কর্ম যেভাবে আমাদের সকলের উপর চেপে বসেছে এমন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশা নিয়ে আমরা যুদ্ধ করিনি। আমরা একটি সুন্দর, স্বাধীন, গণতান্ত্রিক, পরিচ্ছন্ন এবং বিজ্ঞানমনস্ক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছি, যেখানে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। কিন্তু মনে হচ্ছে যেন ক্রমান্বয়ে সেটি হুমকির মুখোমুখি হয়ে পড়েছে। আমরা এখান থেকে বের হয়ে আসতে চাই। আপনারা সকলে সহযোগিতা করলে এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব।

তিনি বলেন, মানুষ খুন করার মধ্যে কোনো আনন্দ নেই, মানুষকে বাঁচিয়ে রেখে তাদেরকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যে কাজ সেই কাজে আনন্দ আছে। আর এসব কাজ সম্পন্ন করাই হলো আমাদের শিশু মেধা বৃত্তির অন্যতম উদ্দেশ্য।

স্বাস্থ্য বিধি মেনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার চিনাইরে অনুষ্ঠিত ১৬তম শিশু মেধা বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে চিনাইর শিশু মেধাবৃত্তি ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য প্রফেসর ফাহিমা খাতুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান।

এবারের মেধাবৃত্তি পরীক্ষায় জেলার ৯টি উপজেলার ২৬৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দেড় হাজার শিক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করে। অংশগ্রহনকারি শিক্ষার্থীদের মধ্যে মোট ২০২ জনকে বৃত্তি প্রদান করা হয়। এরমধ্যে ৫৪ জনকে টেলেন্টপুল, ১১১ জনকে সাধারণ গ্রেডে, ৩২ জনকে উপজেলা বৃত্তি এবং পঞ্চম শ্রেণীতে সকল বিষয়ে ৯০ এর তদুর্ধ্ব নম্বর প্রাপ্ত ৫জনকে উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ডিসটিনশন অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।

ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিপ্রাপ্তরা এককালীন ৩ হাজার টাকা, সাধারণ গ্রেডে বৃত্তিপ্রাপ্তরা এককালীর দুই হাজার ৫শত টাকা এবং উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ডিসটিনশন অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তরা এককালীন ১২ হাজার টাকা করে পেয়েছেন।

উল্লেখ্য যে এই অঞ্চলের শিশুদের মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত, শিশুদেরকে মেধা ও মনন বিকশিত করার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর আসনের সাংসদ র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এম.পি ২০০৪ সালে এই মেধাবৃত্তি পরীক্ষা চালু করেন।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে