পদ্মা সেতুতে বসানো হয়েছে ৩৫তম স্প্যান ‘২-বি’। আজ শনিবার দুপর ২টা ৪০ মিনিটে সেতুর মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে ৮ ও ৯নং পিলারে বসানো হয় স্প্যানটি। এর ফলে দৃশ্যমান হলো সেতুর ৫ হাজার ২৫০ মিটার অংশ। ৩৪তম স্প্যান বসানোর ছয় দিনের মাথায় ৩৫তম স্প্যানটি বসানো হলো। ৩৫তম স্প্যান বসে যাওয়ায় সেতুতে বসতে বাকি রইলো ৬টি স্প্যান।
পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, শনিবার সকাল ৭টায় স্প্যানটি বসানোর কর্মযজ্ঞ শুরু হয়। সকাল ৯টা ১৫মিনিটে কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে ভাসমান ক্রেন তিয়াইন-ই ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের স্প্যানটি নিয়ে রওনা হয়। ৯শ মিটারের কিছু বেশি দূরত্ব পাড়ি দিয়ে সকাল ১০টার দিকে নির্ধারিত পিলারের কাছাকাছি পৌঁছে ক্রেনটি। এরপর মাঝ নদীতে ক্রেনটি নোঙর করতে লেগে যায় আরও কিছু সময়। বেলা দেড়টার দিকে স্প্যানবাহী ক্রেনটি নদীতে নির্ধারিত পজিশনে এনে নোঙর করে এরপর ধীরে ধীরে ইঞ্চি মেপে ৮ও ৯নং পিয়ারের উপরে থাকা ভূমিকম্প সহনশীল বিয়ারিংয়ের উপর রাখা হয়। সকাল থেকে পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে সময় লাগে ৭ঘন্টা ৪০মিনিট।
প্রসঙ্গত, ৩৫ তম স্প্যানটি ৩০ অক্টোবর বসানোর পূর্বপরিকল্পনা ছিলো। তবে পিলার ৮ ও ৯এর এলাকায় নদীতে পলি এসে জমলে নাব্য সংকট তৈরি হলে ভাসমান ক্রেন চলাচল অসমম্ভব হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ড্রেজিং করে নাব্য সমস্যার সমাধান করে ক্রেন চলাচলের উপযোগী করা হয়। এতে পূর্ব নির্ধারিত সিডিউল থেকে একদিন পিছিয়ে বসানো হলো স্প্যানটি।
এদিকে ৩৫স্প্যান সহ সেতুতে বাকি থাকা ৭টি স্প্যান মাওয়া প্রান্তে বসানো হবে। ইতিমধ্যেই জাজিরা প্রান্তে সবগুলো স্প্যান বসানোর কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। আগামী ৪ নভেম্বর সেতুর ২ ও ৩ নং পিলারে ৩৬তম স্প্যান ‘১-বি’, ১১ নভেম্বর ৯ ও ১০ নং পিলারে ৩৭তম স্প্যান ‘২-সি’, ১৬ নভেম্বর ১ ও ২নং পিলারে ৩৮তম স্প্যান ‘১-এ’, ২৩শে নভেম্বর ১০ ও ১১নং পিলারে ৩৯তম স্প্যান ‘২-ডি’, ২ ডিসেম্বর ১১ ও ১২ নং পিলারে ৪০ তম স্প্যান ‘২-ই’ ও ১০ ডিসেম্বর ১২ ও ১৩ নম্বর পিলারে ৪১তম স্প্যান স্প্যান ‘২-এফ’ বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
এছাড়া সেতুর ২ হাজার ৯১৭টি রোডওয়ে স্ল্যাবের মধ্যে ১১শ ২৪ বেশি রোড স্ল্যাব বসানো হয়েছে। আর ২ হাজার ৯৫৯টি রেলওয়ে স্ল্যাবের মধ্যে এখন পর্যন্ত বসানো হয়েছে ১৬শ ২৪এর বেশি হাজার ৬০টির বেশি।
২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। এরপর একে একে বসানো হলো ৩৫টি স্প্যান। এতে দৃশ্যমান হয়েছে সেতুর ৫হাজার ২৫০মিটার অংশ। ৪২টি পিলারে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যান বসিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে সব কটি পিয়ার এরই মধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। দুটি সংযোগ সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণ করেছে বাংলাদেশের আবদুল মোমেন লিমিটেড।
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো। পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পর আগামী ২০২১ সালেই খুলে দেয়া হবে।