নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবিত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান আইন-২০২০ সরকারি দলকে সর্বময় ক্ষমতা দিতে করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
রোববার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই অভিযোগ করেন। গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবিত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের আইনের বিষয়ে পর্যালোচনা করতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানকে আহ্বায়ক করে নয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে বিএনপি। এই কমিটি মতামত ও সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদন প্রণয়ন করে, যা গত ৩১ অক্টোবরের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় অনুমোদন পায়। পরে দলের যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ও আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল শনিবার এসব সুপারিশসহ দলের মহাসচিবের একটি চিঠি নির্বাচন কমিশনের কাছে হস্তান্তর করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা জানি যে, এই নির্বাচন কমিশন কেন কথাই শুনে না। তাদের যে দায়িত্ব সরকারের এজেন্ডাকে বাস্তবায়িত করা। সেই কাজই করে যাচ্ছে তাদের (নির্বাচন কমিশন) গঠনের পর থেকে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান নির্বাচনী আইনের তারা যে প্রস্তাব দিয়েছে- এটা অত্যন্ত একটা অসৎ উদ্দেশ্যেই তারা এই আইনের প্রস্তাব করেছেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, সর্বময় ক্ষমতায় দিয়ে দেয়া এবং নির্বাচন কমিশনকে একটা ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত করা। এই নির্বাচন কমিশন তো কোনো রকমের পরিবর্তন হয়নি। উপরন্তু তারা আইন করে বিভিন্নভাবে এই সরকারের যাদের কোনো ম্যান্ডেট নেই তাদের হাতকে শক্তিশালী করার জন্য তারা করে যাচ্ছে।
স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান নির্বাচন আইনের বিভিন্ন অসঙ্গতি তুলে ধরে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, নির্বাচনে কমিশনের প্রস্তাবিত আইনে অনেক মৌলিক বিধানই বদলিয়ে ফেলেছে। তারা যে নতুন আইনের প্রস্তাব করেছে সেই আইনের একটা বড় অংশ… ধারা ৬৬ থেকে আরম্ভ করে প্রায় ৮৪ পর্যন্ত -এর কোনোটাই স্থানীয় সরকারের প্রচলিত যেসব আইন রয়ে গেছে তার কোনোটার মধ্যে নেই। এসব আছে বিধিমালার মধ্যে। কিন্তু প্রস্তাবে তো নির্বাচন কমিশন আগে বলে নাই যে বিধিমালা থেকে এনে নতুন আইন করা হবে। কিন্তু বাস্তবে তারা সেটা করেছে। অর্থাৎ তারা যেটা বলেছে তারা সেখান থেকে সরে গেছে।
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, করোনার মধ্যে সোশ্যাল ডিসটেন্স বজায় রাখা দরকার, যখন সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ, যখন স্কুল কলেজ বন্ধ করে রাখা হয়েছে, যখন আমাদের ভার্চুয়াল মিটিং করা লাগে সেরকম সময়ে আপনি আমার দেশে সব মানুষ জড়িত কেউ ইউনিয়ন পরিষদে, কেউ পৌরসভায়, কেউ জেলা, উপজেলা, কেউ সিটি করপোরেশনে সম্পৃক্ত। যারা ভোটার ও প্রার্থী তাদের সঙ্গে কোনো পরামর্শ না করে বা তাদের মতামত দেয়ার সময় বা সুযোগ না রেখে ওয়েবসাইটে দিয়ে এই করোনার মধ্যে নতুন একটা আইন করতে হবে- এটা অর্থ হয় না, এটা জরুরি না।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা দাবি করছি, পৃথক পৃথক আইন থাকা সত্ত্বেও তাদেরকে একীভূত করে চলমান করোনা সংকটকালে প্রস্তাবিত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান নির্বাচনী আইন-২০২০ প্রনয়নের এই অপ্রয়োজনীয় ও অযৌক্তিক উদ্যোগ থেকে কমিশন বিরত থাকবে। এটা আমরা আশা করছি। এতসব যুক্তিসঙ্গত কারণ অগ্রাহ্য করে যদি কমিশন একচেটিয়াভাবে প্রস্তাবিত নতুন আইন প্রণয়নে উদ্যোগী হয় তাহলে বিএনপি দেয়া আইনের অসঙ্গতিসমূহ দুরীকরণ ও সংগত দাবিগুলো পূরণ এবং আমাদের সংশোধনী প্রস্তাবসমূহ সংশ্লিষ্ট আইনে সন্নিবেশিত করার জোর দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় এককভাবে কোনো আইন প্রণয়ন করা হলে তা দেশবাসীর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।
উপনির্বাচন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ -১ উপনির্বাচনের প্রচারণা চলছে। আমি দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, এটা মিডিয়ায় কোনো কাভারেজ হচ্ছে না। যার ফলে হচ্ছে কি-এখানে চরম অনিয়ম ঘটছে। এখানে নির্বাচন একটা প্রহসনে পরিণত হয়েছে, নির্বাচন কমিশন একটা বংশবদ প্রতিষ্ঠানের পরিণত হয়েছে, এটা প্রমাণ হচ্ছে। আমি গণমাধ্যমের প্রতি অনুরোধ করব, আপনারা দয়া করে একটু কাভার করার ব্যবস্থা নিন। এমনিতেই নির্বাচন চলে গেছে, নির্বাচন প্রক্রিয়া ধ্বংস হয়ে গেছে, এর ওপর থেকে জনগণের আস্থা উঠে গেছে। এটা বিরোধী দলগুলোকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত করে ফেলতে পারে।