সরকার মুক্তিযুদ্ধের সব অর্জন ধবংস করে দিচ্ছে: মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা একটা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে বাস করছি। এই সরকার একটা দানবের মতো। তারা আমাদের সমস্ত মুক্তিযুদ্ধের অর্জনকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। গণতন্ত্রের যে সংগ্রাম তাকে ধবংস করে দিচ্ছে। এখন তাকে (সাদেক হোসেন খোকা) আমাদের প্রয়োজন ছিল দেশনেত্রীকে, দেশকে, গণতন্ত্রকে মুক্ত করবার জন্য।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকার ১ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘সাদেক হোসেন খোকা ফাউন্ডেশন’ এর উদ্যোগে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

২০১৯ সালের ৪ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ক্যান্সার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। পরে তার মরদেহ দেশে এনে জুরাইনের কবরাস্থানে দাফন করা হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, তার (সাদেক হোসেন খোকা) মৃত্যুর কিছুদিন আগে আমি নিউইয়র্ক গিয়েছিলাম তার সঙ্গে দেখা করতে। আমাকে তার উপরের ঘরে নিয়ে গিয়ে কয়েকটা পরামর্শ দিয়ে বলেছিলেন, কখনো ধৈর্য্য হারাবেন না, বিএনপির যে সংগ্রাম, তা একদিনে শেষ হবে না, বেশ দীর্ঘস্থায়ী সংগ্রাম। সমস্ত শক্তিকে সম্পৃক্ত করতে হবে এবং খালেদা জিয়ার নেতৃত্বকে আরো বেশি করে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। খোকা যুক্তরাষ্ট্র থেকে কয়েকবার লন্ডনে এসে দলকে সংগঠিত করার বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আলাপ করেছেন বলেও জানান তিনি।

স্ট্যান্ডিং কমিটি থেকে শুরু করে জেলা নেতারা কভিডে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন জানিয়ে সবাইকে সুস্থ ও নিরাপদে থাকার পরামর্শ দেন বিএনপি মহাসচিব।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, কষ্ট লাগে, আজকে যারা মুক্তিযুদ্ধে ফেরিওয়ালা বলে দাবি করে, তারা সব জায়গায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বার বার হত্যা করছেন। একবার পঁচাত্তর সালে আবার এই সময়টা পর্যায়ক্রমে গণতন্ত্রকে হত্যা করে দেশকে গণতন্ত্রহীন এবং বিচারহীন দেশে পরিণত করেছে। দুর্নীতি দমন ব্যুরো, বিচারালয়- সব কিছু দলীয়করণ করে মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা থেকে বাংলাদেশকে অনেক দূরে নিয়ে গেছে। খোকা ঢাকার মেয়র থাকাকালে রাজধানীর উন্নয়ন ও ডেঙ্গু মশক নিধনে দলমত নির্বিশেষে সম্মিলিত উদ্যোগের কথা তুল ধরেন ড. মোশাররফ।

জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রব বলেন, মুক্তিযুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ না হলে কনভেনশন ওয়ারে পাশের দেশের সীমানার মধ্য থেকে যুদ্ধ করলেও বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। দিস ইজ রিয়েলিটি। আমি-খোকা একসঙ্গে মাঠে-ময়দানে গণঅভ্যুত্থানে গুরম্নত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করি। সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে জীবনকে বাজি রেখে খোকা ভূমিকা রেখেছে। দুর্ভাগ্য এই সরকারের কারণে তার মতো একজন মুক্তিযোদ্ধার নিজের মাটিতে এসে প্রাণ ত্যাগ করার সুযোগটা পায়নি। ঢাকা শহরে মুক্তিযোদ্ধাদের নামে যে বিভিন্ন রাস্তার সেটি করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন খোকা। পরে আর কেউ এটা কনটিনিউ করেননি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আগে-পরে, সামনে-পিছনে যে যাই বলুক, খোকাকে সত্যিকার অর্থে আমি ভালোবাসতাম। তার অনুপস্থিতি এখনো আমাকে পীড়া দেয়। বন্ধু হিসেবে আমাদের মধ্যে যে ধরনের সম্পর্ক ছিল, তা এখন কারোর মধ্যে দেখি না। ওই সময়ে যদি কারো সঙ্গে কোনো রকম মনোমালিন্য থাকে তার মধ্যে কিন্তু একটা আন্তরিকতা ছিল। এখন আমাদের দলের বা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে দেখা যায়, আমাদের মধ্যে সম্পর্কটা আছে তা খুব বাহ্যিক, কোনো গভীরতা নাই। ১/১১ পরেই এই পরিবর্তনটা দেখা যাচ্ছে।

তিনি বলেন, আজকে বিএনপিতে একে অপরকে ঠ্যাং মারার রাজনীতি কিংবা অন্যকোনো রাজনীতি চলছে। এই ঠ্যাং মেরে নিজেদের পা ভাংগতে পারবো কিন্তু শত্রুর ক্ষতি করতে পারবো না, কিছুই করতে পারবো না। আমার এই কথা অনেক ব্যাখ্যা হতে পারে কিংবা বিভিন্ন কথা হতে পারে। দলের মধ্যে কিছু ভালো ভালো লোক আসছেন, তারা নতুন নতুন, সুন্দর সুন্দর কথা বলেন। কিন্তু সুন্দর সুন্দর কথা আর নতুন নতুন কথা দিয়ে আন্দোলন চাঙ্গা হবে না। আন্দোলন চাঙ্গা করতে হলে আন্দোলনের লোক লাগবে। যারা প্রমাণ করেছে ’৯০ সালে, ’৯৬ সালে আমরা আন্দোলন করতে জানি। বলতে পারেন, আপনারা তো ছিলেন। হ্যাঁ ছিলাম, এখন পারবো না। নজরুল (নজরুল ইসলাম খান) ভাই কী পারবেন, ফখরুল (ফখরুল ইসলাম আলমগীর) ভাই কী পারবেন, ড. খন্দকার মোশাররফ সাহেব কি পারবেন?

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্সের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে