যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী উত্তাপের মধ্যে বিশ্ববাজারে আবারও স্বর্ণের দামে বড় উত্থান হয়েছে। গত এক সপ্তাহে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বেড়েছে প্রায় ৪ শতাংশ। এতে ১৯৫০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম।
বিশ্ববাজারে দাম বাড়ায় দেশের বাজারেও চলতি সপ্তাহে স্বর্ণের দাম বাড়বে। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা এটি নিশ্চিত করেছেন।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত সপ্তাহের শুরুতে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ছিল ১৮৭৮ ডলার। দফায় দফায় বেড়ে সপ্তাহে শেষে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম হয়েছে ১৯৫১ দশমিক ৭০ ডলার। এতে সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম বেড়েছে ৭৩ ডলার বা ৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
এর মাধ্যমে দুই মাসের মধ্যে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। সেই সঙ্গে গত জুলাইয়ের পরে এই প্রথম এক সপ্তাহে স্বর্ণের দাম প্রায় ৪ শতাংশ বাড়ল।
বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ার বিষয়ে বাজুসের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, আমেরিকার নির্বাচন নিয়ে একধরনের উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। ডলারের দরপতন হয়েছে। এ কারণে হঠাৎ করে স্বর্ণের দামে বড় উত্থান হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ার এটিই একমাত্র প্রধান কারণ।
তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ার কারণে দেশের বাজারেও স্বর্ণের দাম বাড়ানো হবে। দু-একদিনের মধ্যে স্বর্ণের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। নতুন করে প্রতি ভরিতে স্বর্ণের দাম আড়াই হাজার টাকার মতো বাড়ানো হতে পারে।
এদিকে স্বর্ণের দামের বড় উত্থানের সঙ্গে বিশ্ববাজারে রুপার দামেও বড় উত্থান হয়েছে। গত এক সপ্তাহে ৮ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ দাম বেড়ে প্রতি আউন্স রুপার দাম হয়েছে ২৫ দশমিক ৫৩ ডলার। এর মাধ্যমে গত আগস্টের পর এই প্রথম এক সপ্তাহে রুপার দাম ৮ শতাংশের ওপর বাড়ল।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, মহামারি করোনাভাইরাসের মধ্যে চলতি বছরের শুরু থেকেই বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল। দফায় দফায় দাম বেড়ে আগস্টের শুরুতে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম রেকর্ড ২ হাজার ৭৪ ডলারে উঠে যায়।
বিশ্ববাজারে অস্বাভাবিক দাম বাড়ার প্রেক্ষিতে ৬ আগস্ট দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়। ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম রেকর্ড ৭৭ হাজার ২১৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া ২১ ক্যারেটের স্বর্ণ ৭৪ হাজার ৬৬ টাকা, ১৮ ক্যারেটের স্বর্ণ ৬৫ হাজার ৩১৮ টাকায় ও সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণ ৫৪ হাজার ৯৯৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
৭ আগস্ট থেকে পতনের কবলে পড়ে উঠতে থাকা স্বর্ণের দাম ১১ আগস্ট এসে বড় পতন হয়। একদিনে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১১২ ডলার পর্যন্ত কমে যায়। এরপরও চলতে থাকে স্বর্ণের দরপতনের ধারা। এতে সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম সাড়ে ১৮শ ডলারের কাছাকাছি চলে আসে।
বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম পতনের মধ্যে পড়ায় গত ২৫ সেপ্টেম্বর দেশের বাজারেও স্বর্ণের দাম কমানো হয়। সে সময় ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম দুই হাজার ৪৪৯ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৪ হাজার ৮ টাকা। এছাড়া ২১ ক্যারেটের স্বর্ণ ভরি ৭০ হাজার ৮৫৯ টাকা, ১৮ ক্যারেটের স্বর্ণ ভরি ৬২ হাজার ১১১ টাকা ও সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণ ৫১ হাজার ৭৮৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম কমার মধ্যেই ইউরোপজুড়ে শুরু হয় করোনার দ্বিতীয় ধাপ। এতে বিশ্ববাজারে আবার স্বর্ণের দাম বাড়ার প্রবণতা দেখা দেয়। ১৯শ ডলারের নিচে নেমে যাওয়া স্বর্ণের দাম আবার ১৯শ ডলার ছাড়িয়ে যায়।
বিশ্ববাজারে দাম বাড়ায় ১৫ অক্টোবর থেকে দেশের বাজারেও স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়। এ দফায় ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম ২ হাজার ৩৩৩ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয় ৭৬ হাজার ৩৪১ টাকা। ২১ ক্যারেটের স্বর্ণ ৭৩ হাজার ১৯২ টাকা, ১৮ ক্যারেটের স্বর্ণ ৬৪ হাজার ৪৪৪ টাকা ও সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণ ৫৪ হাজার ১২১ টাকা নির্ধারণ করা হয়। বর্তমানে এ দামেই স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে।