মায়ের সেবাসহ কয়েকটি শর্তে পরিবারের সঙ্গে থাকার অনুমতি পেয়েছেন ইয়াবা মামলায় পাঁচ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি মতি মাতবর। তাকে ‘প্রবেশনে’ পরিবারের সঙ্গে থাকার অনুমতি দিয়েছে হাইকোর্ট।
তবে এজন্য আগামী দেড় বছর প্রবেশনের কয়েকটি শর্ত তাকে মানতে হবে। আর তাকে থাকতে হবে একজন প্রবেশন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে। শর্ত না মানলে তাকে যেতে হবে কারাগারে।
পাঁচ বছর কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে আসামির রিভিশন আবেদন খারিজ ও প্রবেশনের আবেদন গ্রহণ করে রোববার বিচারপতি জাফর আহমেদের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেন।
১৯৬০ সালের প্রবেশন অধ্যাদেশ অনুযায়ী বাংলাদেশে এটি দ্বিতীয় রায় বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন।
শর্ত হলো, আসামি মতি মাতবরকে তার ৭৫ বছরের মায়ের যত্ন নিতে হবে, দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে হবে এবং আইন অনুযায়ী নির্ধারিত বয়সের আগে তিনি মেয়ের বিয়ে দিতে পারবেন না।
প্রবেশন হলো একটি অপ্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিক সংশোধনী কার্যক্রম। দণ্ডিত ব্যক্তির শাস্তি স্থগিত করে তাকে কারাগারে অন্তরীণ না রেখে সমাজে খাপ খাইয়ে চলার সুযোগ দেয়া হয় প্রবেশনে। এর মাধ্যমে পুনঃঅপরাধ রোধ এবং একজন আইনমান্যকারী নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তাকে সহায়তা করা হয়।
আদালতে আসামিপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. রুহুল আমীন ও মো. আসাদ উদ্দিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. এনামুল হক মোল্লা।
রায়ের পর শিশির মনির বলেন, আসামি মতি মাতবরকে প্রবেশনের অনুমতি দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে সমাজসেবা অধিদপ্তরের ঢাকা জেলার প্রবেশন কর্মকর্তা মো. আজিজুর রহমান মাসুদের তত্ত্বাবধানে দিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রবেশনের শর্ত না মানলে মতি মাতবরকে আবার কারাগারে যেতে হবে।
শিশির মনির আরও বলেন, দেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে প্রবেশন আইনে হাইকোর্টের দেয়া দ্বিতীয় রায় এটি। তবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ক্ষেত্রে এটি প্রথম রায়। আসামির পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থনৈতিক দণ্ড স্থগিত করে এই রায় দেয়া হয়েছে।
এক হাজারের বেশি ইয়াবা উদ্ধারের অভিযোগে মতি মাতবরসহ দুজনের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৩ নভেম্বর মামলা করে ঢাকার কোতোয়ালি থানা পুলিশ। বিচার শেষে ২০১৭ সালের ৮ জানুয়ারি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দুই আসামিকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে হাকিম আদালত।
আসামিরা ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে ওই বছরই তা খারিজ করে দেয় মহানগর দায়রা জজ আদালত। পরে আসামি মতি মাতবর ২০১৭ সালের ১ জুলাই হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করেন।
হাইকোর্ট রিভিশন আবেদনটি শুনানির জন্য গ্রহণ করে ৯ জুলাই মতি মাতবরকে জামিন দেয়। ২০১৫ সালের ২৩ নভেম্বর গ্রেপ্তারের পর দণ্ডিত এই ব্যক্তি ২০ মাস কারাভোগ করেন।
আইনজীবী শিশির মনির বলেন, যেহেতু মতি মাতবরের এটিই প্রথম অপরাধ এবং আর কোনো অপরাধের সাথে জড়িত থাকার কোনো রেকর্ড নেই। সে কারণে তিনি রিভিশনের শুনানিতে প্রবেশন অধ্যাদেশ, ১৯৬০ এর ধারা ৫ অনুযায়ী প্রবেশন চেয়ে আবেদন করেন।
আদালত চলতি বছরের ৭ অক্টোবর ১০ দিনের মধ্যে আসামির নামে ব্যাংক হিসাব এবং টিন নম্বর খুলে দিতে ঢাকার অপরাধী সংশোধন ও পুনর্বাসন সমিতিকে নির্দেশ দেয়।
সেই সঙ্গে ২১ অক্টোবর ঢাকা জেলার প্রবেশন কর্মকর্তাকে দণ্ডিত মতি মাতবরের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দিতে বলে।
সে অনুযায়ী প্রবেশন কর্মকর্তা মতি মাতবরের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে গত ২ নভেম্বর আসামি সম্পর্কে ইতিবাচক প্রতিবেদন দেন।