মিয়ানমারে জাতীয় নির্বাচন আজ রবিবার। দেশটির সংসদের উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষের ৬১১টি আসনের বিপরীতে ৯০টিরও বেশি দল প্রতিন্দ্বদ্বিতা করছে এই নির্বাচনে। গত নির্বাচনের মতো এবারও অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছে।
তবে দেশটির বিভিন্ন উপজাতি গোষ্ঠী বিতর্কিত নেত্রী সু চির প্রতি বিমুখ হওয়ায় এবার এনএলডি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে না বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। রোহিঙ্গা গণহত্যাসহ নানা কারণে বিশ্বজুড়ে সমালোচিত সু চিকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবেই চিহ্নিত করছেন মিয়ানমারের বিভিন্ন উপজাতিকেন্দ্রিক দলগুলো।
গতবারের বহুল আলোচিত নির্বাচনে উপজাতীয় দলগুলো থেকে মৌন সমর্থন পেলেও, এই নির্বাচনে সূ চির দল তাদের কাছ থেকে কোনও ধরনের সহযোগিতা পাচ্ছে না। সেনা সমর্থিত দল ইউনিয়ন সলিডারিটি এন্ড ডেভেলভমেন্ট পার্টির (ইউএসডিপি) জয় ঠেকাতে সেই নির্বাচনে সু চির পাশে ছিলেন তারা।
গতবার ক্ষমতায় আসার আগে উপজাতিদের রাজনৈতিক স্বায়ত্বশাসন দেয়ার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন সু চি। কিন্তু ক্ষমতার মসনদে বসার পর সেটা বেমালুম ভুলে যান তিনি। ফলে এবার সীমান্তবর্তী উপজাতীয় দলগুলো এনএলডির বিরুদ্ধে কাজ করবেন।
উপজাতীয় দলগুলোর সমর্থন না থাকায় এবারের নির্বাচনে সূ চির প্রধান বিরোধী দল ইউএসডিপি। দলটির অর্থায়ন ও তত্ত্বাবধান করে দেশটির সেনাবাহিনী। ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে মিলিটারি শাসনের পর দেশটিতে গত ২০১৫ সালের ভোটে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে এনএলডি পার্টি।
২০০৮ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনী দেশটির সংবিধান সংশোধন করেন। যেখানে সংসদে সেনাবাহিনীর জন্য ২৫ শতাংশ আসন বরাদ্দের কথা লিপিবদ্ধ করা হয়৷ পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোতেও সেনা সদস্যদের নিয়োগ দেয়ার কথা বলা হয়। ক্ষমতায় থাকাকালীন এই বিধানটি সংশোধন করার চেষ্টা করলেও সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের অভাবে বারবার ব্যর্থ হয়েছেন সু চি। ফলে বিধানটি এবারও রয়ে গেছে।
জানা গেছে, প্রায় তিন কোটি ৭০ লাখ নিবন্ধিত ভোটার রয়েছে দেশটিতে। ধারণা করা হচ্ছে, করোনা অতিমারির কারণে ভোটদানের হার আগের বারের তুলনায় কম হতে পারে। তবে এই নির্বাচনে সু চি আবারও জিতবে বলে আশা করা হচ্ছে। নানা বিতর্কের পরও এখন পর্যন্ত সু চিই দেশটির সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ।
যদিও সেনা সমর্থন নিয়ে সু চির চলতি আমলে বাংলাদেশের প্রতিবেশি দেশটি কিছুটা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছে, তবে সেটা চোখে পড়ার মতো নয়। অর্থনীতিক, পরিবেশ, মানবাধিকারসহ প্রায় সব সূচকে পিছিয়ে রয়েছে দেশটি।
এছাড়া রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে সমগ্র বিশ্বে সমালোচিত মিয়ানমার। এবারের নির্বাচনে রাখাইন প্রদেশের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ কেবল রোহিঙ্গা হওয়ার কারণেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না।