বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে আলাদা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশকে জানতে হলে, বাঙালির মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে হবে, বঙ্গবন্ধুকে জানতে হবে। এই দুই সত্তাকে আলাদাভাবে দেখার চেষ্টা যারা করেছেন তারা ব্যর্থ হয়েছেন। আজকের বাস্তবতা এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ।
সোমবার সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশনে দেয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সন্ধ্যায় অধিবেশন শুরু হয়। রাষ্ট্রপতি সংসদ কক্ষে প্রবেশের সময় বিউগলে বাজানো হয় ফ্যানফেয়ার। পরে তিনি নিজের আসনের সামনে দাঁড়ান এবং নিয়ম মাফিক জাতীয় সংগীত বাজানো হয়। সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৯০ জনের মতো সংসদ সদস্য এ সময় অধিবেশন কক্ষে উপস্থিত ছিলেন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সম্মান জানানোর মাধ্যমে নিজেরা সম্মানিত হবেন বলে মন্তব্য করেন রাষ্ট্রপতি। মুজিববর্ষ উপলক্ষে সংসদের বিশেষ অধিবেশনে তার জীবনের ওপর আলোচনা বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম সম্পর্কে জানতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন রাষ্ট্রপ্রধান।
রাষ্ট্রপতি তার দীর্ঘ ভাষণে বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য জীবনের নানা দিক তুলে ধরেন। একটি জাতি গঠনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা তুলে ধরেন। রাষ্ট্রপতি জানান, মুজিববর্ষ উপলক্ষে জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশনে বক্তব্য দিতে পারা তারা জীবনের বড় প্রাপ্তি। এজন্য তিনি মহান প্রভুর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। সংসদ নেতাসহ সংসদের সব সদস্যকেও ধন্যবাদ জানান।
বঙ্গবন্ধুর ব্যাপারে দীর্ঘ আলোচনা করে রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু একটি নাম নয়। বঙ্গবন্ধু একটি প্রতিষ্ঠান, একটি সত্তা, একটি ইতিহাস। জীবিত বঙ্গবন্ধুর মতোই অন্তরালের বঙ্গবন্ধু শক্তিশালী। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, বাঙালি থাকবে, এদেশের জনগণ থাকবে, ততদিনই বঙ্গবন্ধু সকলের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন। নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের মুক্তির আলোকবর্তিকা হয়ে তিনি বিশ্বকে করেছেন আলোকময়। তাই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে বঙ্গবন্ধুর নীতি, আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে বেড়ে উঠতে পারে সে লক্ষ্যে সকলকে উদ্যোগী হতে হবে।
রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা তার জীবনের বিভিন্ন স্মৃতি তুলে ধরেন।
বর্তমান সরকারের নানা সাফল্যের কথা তুলে ধরে আবদুল হামিদ বলেন, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে পাকিস্তানি হানাদারদের কবল থেকে আমরা যে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছি, তাকে রক্ষা করতে হবে। স্বাধীনতার সুফল প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তোলার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন ঐক্য। জনগণের ঐক্য, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের ঐক্য। যে ঐক্য একাত্তরে আমাদেরকে এক করেছিল, সেই ঐক্যই গড়ে তুলতে হবে সাম্প্রদায়িকতা, অগণতান্ত্রিকতা, অসহিষ্ণুতা ও সহিংসতার বিরুদ্ধে।
তিনি বলেন, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে পরমতসহিষ্ণুতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। যারা বাস্তবকে অস্বীকার করে কল্পিত কাহিনি ও পরিস্থিতি বানিয়ে দেশের সরলপ্রাণ মানুষকে বিভ্রান্ত ও বিপথগামী করে দেশের শান্তি ও অগ্রগতির ধারাকে ব্যাহত করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে একাত্তরের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই প্রতিষ্ঠিত হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা, সার্থক হবে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন এক বিশাল হৃদয়ের মানুষ। নিজে স্বপ্ন দেখতেন এবং মানুষকে স্বপ্ন দেখাতেন। দেশের মানুষের প্রতি তার আস্থা, ভালোবাসা ও বিশ্বাস ছিল অপরিসীম। নিজের জীবন উৎসর্গ করে বাংলার মানুষের ভালোবাসার প্রতিদান দিয়ে গেছেন। ঋণী করে গেছেন বাঙালি জাতিকে।
রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ১৭ মার্চ ২০২০ থেকে ১৭ মার্চ ২০২১ পর্যন্ত মুজিববর্ষ হিসাবে পালনের সিদ্ধান্ত খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। মুজিববর্ষ পালনের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর জীবন-কর্ম, চিন্তা-চেতনা ও দর্শন ছড়িয়ে দিতে হবে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের তরুণ প্রজন্মের কাছে। বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধুর জীবন ও রাজনৈতিক দর্শন একবিংশ শতাব্দীতেও পরিপূর্ণ প্রাসঙ্গিক, আধুনিক, যুগোপযোগী এবং ভবিষ্যতেও চির অম্লান থাকবে। বঙ্গবন্ধুর জীবন ভাবনা ও রাজনৈতিক দর্শনের মর্মার্থ সবার কাছে ছড়িয়ে দিতে মুজিববর্ষ পালন একটি যথাযথ পদক্ষেপ।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর জাতির পিতার আদর্শকে ধারণ করে জাতি এগিয়ে যাবে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার পথে-সেই প্রত্যাশা করেন রাষ্ট্রপ্রধান।