কবি মিজাহারুল ইসলামের কবিতা ও গল্প ভাবনা

কবি মো. মিজাহারুল ইসলাম
কবি মো. মিজাহারুল ইসলাম

কবিতা পৃথিবীর সব দেশে সব ভাষাতেই লেখা হয়। কবিতা অলৌকিক। কবির মনে বা জগতে– যা আগে ভাবের মধ্যে ছিল, বস্তু হিসেবে ছিল না, কবি তাকেই রচনা প্রতিভার গুণে কবিতা হিসেবে নতুন রূপ দেন। কবিতা মানুষকে ভালবাসতে শেখায়, প্রতিবাদী হতে সাহায্য করে। এক বিশেষ মুহূর্তে রচিত হয় কবিতা। অবশ্য সকল লেখাই কবিতা হয়ে ওঠে না। এই প্রসঙ্গে কবি জীবনানন্দ বলেছেন- ‘সকলেই কবি নয় কেউ কেউ কবি’। আর সেই কবিতা সৃষ্টির সাধনায় মগ্ন হয়ে আছেন মো. মিজাহারুল ইসলাম; যার ডাকনাম  উজ্জ্বল। নেত্রকোনা জেলাধীন কেন্দুয়ার কাউরাট গ্রামে ১৯৮৬ সালের ১ মার্চ তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তরুণ এই কবির প্রকাশিত একক কাব্যের নাম- ১। মৃন্ময়ী ও ২। অবাক জোছনা। যৌথ কাব্য- ১। আমি কবি নই শব্দশ্রমিক, ২। নৈঃশব্দের কাব্য ও ৩। নীল জোছনা। ২০২১ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশ পাবে- উচ্ছ্বাস (কাব্য) ও নক্ষত্র নগর (উপন্যাস)। মিজাহার সেইসঙ্গে চিত্রনাট্য আর গল্পও লিখেন। কবিতা ও গল্প ভাবনা নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন ফয়জুল আল আমীন

কবিতার মানুষ বলে আপনার কাছ থেকে কবিতার কথা জানতে চাই। কবিতা কী?

আমার কাছে কবিতা হচ্ছে ছন্দময় বাক্য । কবিতা এমন এক বিশেষ মাধ্যম যেখানে একজন কবির চিন্তা, ভাবনা, উপলব্ধি সকল ভাবাবেগ প্রকাশ পায়।

আপনার কবিতা লেখা শুরু কিভাবে, সেই প্রসঙ্গে কিছু বলুন।

সেটা ছোটকাল থেকেই ইচ্ছে ছিল। কবিতা আবৃত্তি করতে ভালো লাগতো, সেই সুবাদে কবিতার বই পড়া হতো । ছাত্রজীবন থেকেই নিজেও লিখার চেষ্টা করতাম ।

আপনার ছোটবেলার কথা জানতে চাচ্ছি। বলবেন একটু…

আমার শৈশব কৈশোর গ্রাম ও মফস্বল শহরের জল ও জোছনায় কেটেছে । খুব সাদামাটা জীবন ছিল আমার, যেটা এখনো আছে । মফস্বলের  একজন ছেলে যেভাবে বেড়ে উঠে আমিও সেভাবে বড় হয়েছি । এজন্য আমার লেখায় প্রকৃতির প্রভাব ছিল এবং আছে।

বাঙালিদের ভিতর ভালো কবি আছেন, কিন্তু কবিতার সৎপাঠক কম। এ সম্পর্কে আপনি কী মনে করেন?

পাঠক তো পাঠকই, সৎ আর অসৎ কি! আমার কাছে যেটা পার্থক্য লাগে পাঠকদের মধ্যে সেটা হলো-কেউ ভালোবেসে পড়ে, কেউ ভালো না বেসে জানার জন্য পড়ে। কবিতার ভালোই পাঠক রয়েছে। কম তো মনে হয় না আমার ।

আপনি তো কবিতার পাশাপশি গল্পও লিখেন। একজন কবি ও গল্পকারের মধ্যে পার্থক্যটা কোথায়?

পার্থক্যটুকু হচ্ছে মনের ভাব প্রকাশে কবিতা আকারে ছোট, গল্প বিশাল। গল্পে ছন্দের প্রয়োজন নেই। আমার কাছে কবিতা এবং গল্পের অমিল থেকে মিলটাই বেশি ।

আপনার লেখালেখি কি গল্প দিয়ে শুরু হয়েছিল, না কবিতা দিয়ে?

আমার লেখালেখির শুরু কবিতা দিয়ে । কবিতা লিখার ফাঁকেই গল্প লেখার গুণটা উঁকি দেয় আমার মাঝে।

এটা কত সালের ঘটনা হবে?

সঠিক তারিখ বলতে পারছি না- তবে যখন পঞ্চম শ্রেণীতে থাকা অবস্থায় কাজী নজরুল ইসলাম ও জসীম উদ্দীনের কবিতার প্রেমে পড়ি, সেই থেকে অল্পস্বল্প লেখা।

গল্প লেখার প্রথমদিকের দিনগুলির গল্প শুনতে চাই।

গল্প বলতে বিশেষ করে আলাদা কিছু নেই। ছাত্রজীবনের শুরুর দিকে কবিতা লেখার টুকটাক স্বভাব ছিল আমার মাঝে। কবিতা তো মূলত কবির ভাবনাকে ছন্দবদ্ধ ভাষায় উপস্থাপন করা। অনেক সময় ভাবনা আমার এত বিস্তর হতো কবিতায় রূপ দিতে পারতাম না। তখন থেকে গল্প লেখা শুরু।

আপনি যখন গল্প লেখা শুরু করলেন, তখন কাদের গল্প আপনাকে প্রভাবিত করেছিল?

ওভাবে নির্দিষ্ট করে তো বলা যায় না। তবে আমার গল্প লেখায় বেশ প্রভাব ফেলেন হুমায়ূন আহমেদ, জাফর ইকবাল। এছাড়া রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্পসমগ্র আমাকে প্রভাবিত করেছে।

এবার তবে আবারও কবিতায় ফিরে আসি। কবির স্বাধীনতা বলতে আপনি কী মনে করেন?

কবির স্বাধীনতা বলতে আমার কাছে মনে হয় কবি মানেই স্বাধীন। সে যা চায় তাই তার কবিতায় লিখতে পারে। কবিরা যুদ্ধে গিয়ে তলোয়ার না নিয়ে কবিতার মাধ্যমেও যুদ্ধ করতে পারে। কবিতা প্রেমিকার রাগ ভাঙাতে পারে। আবার কবিতা দুঃখ প্রকাশও করতে পারে।

সাহিত্যের বিশ্বাস আর ধর্মের বিশ্বাসের মধ্যে পার্থক্য বা দ্বন্দ্ব কোথায়?

সাহিত্যে আর ধর্মে বিশ্বাসের মধ্যে পার্থক্য অনেক, তবে দ্বন্দ্ব নেই আমার মতে। সাহিত্যে বিশ্বাসটা হয় একটা নির্দিষ্ট সময় পর পড়ে, দেখে, জেনেবুঝে। আর ধর্মে বিশ্বাস পুরোটা হচ্ছে না দেখে জন্মের পর থেকেই।

শিল্পের মধ্যে জীবন থাকে, জীবনের অভিজ্ঞতা থাকে— আপনার কী রকম? কোনো কোনো কবিতা বা গল্পে আপনার টুকরো জীবন উপস্থিত নয়-কি?

অবশ্যই রয়েছে । তবে কোথায় কিভাবে কোন লেখায় কোন অভিজ্ঞতা রয়েছে তা তো পাঠককে বলা যাবে না!

নতুন লেখক তৈরিতে লিটল ম্যাগাজিনের ভূমিকা সম্পর্কে বলুন।

নতুন লেখক তৈরিতে লিটল ম্যাগাজিনে ভূমিকা রয়েছে। নতুনরা তাদের পরিচিতি এর মাধ্যমে তৈরি করে নিতে পারে।

আপনার লেখা কাব্যের মধ্যে কোনটি আপনার বেশি প্রিয় এবং কেন?

আমার লেখা কাব্যের মধ্যে সবগুলোই আমার পছন্দের। তবে ‘বঙ্গবন্ধু’,  ‘ভাষার গান’, ‘দেশের ছবি’— এই কবিতাগুলো বিশেষভাবে প্রিয়।

কবিতার আবেদন যুগ ও কালনির্ভর; তার গতিধারা সময়ের সাথে পরিবর্তনশীল—এই পরিপ্রেক্ষিতে আধুনিক বাংলা কবিতার প্রচলিত ধারার মোড় পরিবর্তনের সময় এসেছে কি?

মোড় পরিবর্তনের সময় হয়েছে বলে মনে হয় না।

কিভাবে একজন তরুণ লেখক তার জীবন-দর্শনকে সমৃদ্ধ করতে পারেন?

একজন তরুণ লেখক নিজেকে যেভাবে সমৃদ্ধ করবেন বলে আমি মনে করি— বেশি বেশি বই পড়ে, পর্যবেক্ষণ করে, বিশ্লেষণ করে, সর্বোপরি লেখালেখিটা নিয়মিত করে।

কবি না হলে কী হতেন?

কবি না হলে কী হতাম তা তো জানি না, তবে পাঠক থাকতাম।

সুস্থ ও সুন্দর থাকুন।

আপনিও।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে