পৌরসভা নির্বাচন : প্রথম ধাপের তফসিল হতে পারে আগামী সপ্তাহে

নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্বাচন কমিশন
ফাইল ছবি

প্রথম ধাপে দেশের ২৫টি পৌরসভায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়। আগামী সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা হতে পারে। বড়দিনের উৎসব বিবেচনায় রেখে ভোটগ্রহণ করা হবে।

এক্ষেত্রে ডিসেম্বরের তৃতীয় বা চতুর্থ সপ্তাহে ভোটগ্রহণের দিন ধার্য হতে পারে। আর দ্বিতীয় ধাপে জানুয়ারিতে কমবেশি ১৭০টি পৌরসভায় ভোট হতে পারে।

universel cardiac hospital

মার্চের মধ্যে বাকিগুলোয় ভোট হবে। শিগগিরই কমিশন সভায় ভোটের দিন-তারিখ চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে। ইসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র আরও জানিয়েছে, এবারই প্রথম একই সঙ্গে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের পরিকল্পনা নিয়েছে কমিশন।

এ লক্ষ্যে একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। কোন ধাপে কতটি পৌরসভায় নির্বাচন করা যায় এবং এতে কতজন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে, এরও খসড়া নিয়ে কাজ চলছে।

এছাড়া আগামী রোববারের মধ্যে পৌরসভা নির্বাচনের খসড়া ভোটকেন্দ্রের তালিকা চূড়ান্ত করতে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

নির্বাচনে ব্যবহারের জন্য ভোটার তালিকার সিডিও পাঠানো হয়েছে। নির্বাচন পরিচালনায় কমিশনের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ৮টি পৃথক কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেন, শিগগিরই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। আমাদের হাতে সময় খুব কম। তবে কবে কতটি পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে, তা কমিশন সভায় নির্ধারণ করা হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কাজ এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। নির্বাচন উপযোগী পৌরসভাগুলোয় ৩-৪ ধাপে ভোটগ্রহণ করা হতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা জানান, সারা দেশের ইউনিয়ন পরিষদগুলোয় এপ্রিল থেকে ধাপে ধাপে ভোটগ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে। ওই নির্বাচনেও যতদূর সম্ভব ইভিএম ব্যবহার করা হবে। এ কারণে মার্চের মধ্যে প্রায় সব পৌরসভার নির্বাচন শেষ করতে চায় কমিশন।

কমিশন মনে করছে, ইউনিয়ন পরিষদ, একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের ভোটের আগে সেখানে বেশি মনোযোগ দিতে হবে।

জানা গেছে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, ৩২৯টি পৌরসভার মধ্যে ২৫৯টিতে নির্বাচন করতে আইনগত বা সীমানা সংক্রান্ত কোনো জটিলতা নেই। এই ২৫৯টি পৌরসভার মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ বিবেচনায় ভোটের ধাপ নির্ধারণ করা হচ্ছে।

জানুয়ারিতে ১১টি পৌরসভার বর্তমান মেয়র-কাউন্সিলরদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। সেগুলো হচ্ছে কুষ্টিয়ার খোকসা, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ, ঢাকার ধামরাই, পটুয়াখালীর কুয়াকাটা, বরগুনার বেতাগী, নেত্রকোনার মদন, পঞ্চগড় সদর, রংপুরের বদরগঞ্জ, পাবনার চাটমোহর এবং সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর ও কাজীপুর।

এছাড়া মধ্য ফেব্রুয়ারির মধ্যে আরও ১৮৫টি এবং মার্চে ২৮টি পৌরসভার বর্তমান পরিষদের মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন শেষ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এসব বিবেচনায় জানুয়ারিতে মেয়াদ শেষ হওয়া ১১টি ও ফেব্রুয়ারির শুরুতে মেয়াদ শেষ হওয়া ১৪টিসহ মোট ২৫টি পৌরসভায় ডিসেম্বরের শেষদিকে ভোটের পরিকল্পনা করছে কমিশন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই জেলার নির্বাচন কর্মকর্তারা জানান, মাঠপর্যায়ের প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ভোটকেন্দ্রের খসড়া তালিকা প্রকাশ করে আপত্তি ও অভিযোগ শুনানি হচ্ছে।

ভোটার তালিকার সিডি পেয়েছি। সেগুলোও যাচাই হচ্ছে। পাশাপাশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের নিয়োগের প্রাথমিক কাজগুলো এগিয়ে নেয়া হচ্ছে।

ইসি সূত্রে আরও জানা গেছে, জানুয়ারিতে সবচেয়ে বেশি পৌরসভায় ভোটগ্রহণের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে কমিশন।

দ্বিতীয় ধাপে এত বেশিসংখ্যক পৌরসভায় ইভিএম ব্যবহার করার সক্ষমতা আছে কি না, তা নিয়ে দ্বিধায় রয়েছে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ ও নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট।

এ নির্বাচনের প্রায় ৮০ হাজার ৫০০ জন নির্বাচনী কর্মকর্তা নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ দিতে হবে। দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ ইভিএম ও ব্যালটে করা নিয়ে দুটি বিকল্প খসড়া প্রস্তাবনা নিয়ে চিন্তা করছে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ ও নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট।

প্রস্তাবনা অনুযায়ী, একই দিনে ১৭০টিতে ভোটগ্রহণ করা হলে কিছুসংখ্যক পৌরসভায় ইভিএম ও বাকিগুলোয় ব্যালটে ভোটগ্রহণ করা হবে। অথবা ১৭০টি পৌরসভাকে দুই ধাপে ভাগ করে ইভিএমে ভোট নেয়া হবে। পুরো বিষয়টিতে কমিশনের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

মার্চের মধ্যে বাকি ৬৪টি পৌরসভায় দুই ধাপে ভোটগ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে কমিশনের। ওই দুই ধাপেও ইভিএম ব্যবহার করে ভোট নেয়া হবে।

পৌরসভা নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, নির্বাচনে ইভিএম পরিচালনা করতে প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তা এবং কারিগরি টিমকে প্রস্তুত করতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে