গত সপ্তাহে ইরানের প্রধান পরমাণু কেন্দ্রে হামলার পথ খুঁজেছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে পরবর্তী সময়ে তিনি তার এই নাটকীয় সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন বলে সোমবার এক মার্কিন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন।
গত বৃহস্পতিবার শীর্ষ জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে ট্রাম্প এমন অনুরোধ করেছিলেন। সে সময় তিনি ইরানের পরমাণু কেন্দ্রে হামলার ব্যাপারে ইতিবাচক ছিলেন। যদিও পরবর্তীতে সেই সিদ্ধান্ত থেকে তাকে সরে আসতে হয়েছে।
এক মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নতুন ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী ক্রিসটোফার মিলার এবং জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ প্রধান জেনারেল মার্ক মিলে ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। ওই কর্মকর্তা নিউইয়র্ক টাইমসকে ট্রাম্পের সঙ্গে কর্মকর্তাদের বৈঠক সম্পর্কে নিশ্চিত করেছেন।
এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে যে, বৈঠকে উপস্থিত কর্মকর্তা এবং ট্রাম্পের সহযোগীরা তাকে এ ধরনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার জন্য বুঝিয়েছেন। তারা ট্রাম্পকে এ বিষয়টি বুঝিয়েছেন যে, এ ধরনের অভিযানে সীমান্তে সংঘাত বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
ওই মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, ট্রাম্প কর্মকর্তাদের কাছে বিকল্প জানতে চেয়েছিলেন। তারা তাকে পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন এবং তিনি পরবর্তীতে এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া থেকে সরে এসেছেন।
তবে এ বিষয়ে এখনও কোনো মন্তব্য করেনি হোয়াইট হাউস। চার বছর প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে প্রথম থেকেই ইরানের প্রতি আগ্রাসী ভূমিকা পালন করে এসেছেন ট্রাম্প। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়ে করা ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে এসেছেন তিনি। দেশটির ওপর কয়েক দফা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এমনকি ইরানের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
গত ৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বড় ব্যবধানে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের কাছে হেরে গেছেন ট্রাম্প। এই নির্বাচনে ৩০৬টি ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে জয় নিশ্চিত করেছেন বাইডেন। অপরদিকে ট্রাম্প পেয়েছেন ২৩২টি ভোট।
মার্কিন গণমাধ্যমগুলোতে এর মধ্যেই বাইডেনকে জয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু নিজের পরাজয় কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না ট্রাম্প। তিনি নির্বাচনের ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। এমনকি জো বাইডেনকে পরবর্তী সরকার গঠনে কোনো ধরনের সহায়তা বা ক্ষমতা হস্তান্তরেও ট্রাম্প প্রশাসনে তেমন কোনো তোড়জোড় দেখা যাচ্ছে না। এর মধ্যেই তার ইরানে হামলা চালানোর পরিকল্পনার কথা সামনে এলো।
আন্তর্জাতিক একটি চুক্তির আওতায় ইরানের ইউরেনিয়ামের মজুদ ১২ গুণের বেশি বৃদ্ধির খবর প্রকাশের একদিন পরেই ইরানে হামলা চালানোর অনুরোধ জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। ইরানে ইউরেনিয়ামের মজুদ বৃদ্ধির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে গ্লোবাল ওয়াচডগ। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সির (আইএইএ) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ইরানের ইউরেনিয়ামের মজুদের পরিমাণ প্রায় ২ হাজার ৪৪৩ কেজি।
মূলত পারমানবিক বোমা তৈরিতে ইউরেনিয়াম ব্যবহার করা হয়। তবে ইরান সবসময়ই দাবি করে আসছে যে, তারা শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহারের জন্য পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। এর আগে গত সেপ্টেম্বরে ইউরেনিয়ামের মজুদ ১০ গুণ বৃদ্ধি করেছিল ইরান। সে সময় ইরানের ইউরেনিয়ামের মজুদের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ১০৫ কেজি।
২০১৫ সালের আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী, ৩.৬৭ শতাংশ পরমাণুর মজুদ থাকার কথা থাকলেও এর চেয়ে অনেক বাড়ানো হয়েছে। চুক্তির বাইরে পরমাণুর মজুদ বাড়িয়ে চলেছে দেশটি।
এর আগে গত জানুয়ারিতে ট্রাম্পের নির্দেশে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে মার্কিন ড্রোন হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর প্রধান জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে হত্যা করা হয়।