ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচন চলাকালে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় করা মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ ১২০ নেতাকর্মীকে আগাম জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত জামিন দিয়ে তাদের নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়।
জামিন আবেদনের শুনানি নিয়ে বুধবার (১৮ নভেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. হাবিবুল গনি ও বিচারপতি মো. রিয়াজউদ্দিন খানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে তাদের জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন। আদালতে এদিন জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, সালাউদ্দিন দোলন, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম সজল, ব্যারিস্টার মো. মীর হেলাল, অ্যাডভোকেট মির্জা আল মহামুদ, মজিবুর রহমান মিয়া ও কাজী মো. জয়নাল আবেদিন।
জামিনের বিষয়ে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল সাংবাদিকদের বলেন, গত ১২ নভেম্বর ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনের দিন রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বাস পোড়ানোর ঘটনায় আজ সকালে ১৩টি মামলায় আগাম জামিন নিতে হাইকোর্টে আসেন বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মী।
বাস পোড়ানোর ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন থানায় দায়ের হওয়া পৃথক মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ ১২০ জন নেতাকর্মী আগাম জামিন আবেদন করেছিলেন। পরে আদালত তাদের জামিন দেন। আগামী ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত জামিন দিয়ে ১২০ জনকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিননামা দাখিল করতে বলা হয়েছে।
এর আগে গত ১৫ নভেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এসব নেতার পক্ষে জামিন আবেদন করেন বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। হাইকোর্টের কাছে আগাম জামিন চেয়েছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী জাহাঙ্গীর হোসেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল এবং ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন পর্যায়ের ১৪০ নেতাকর্মী।
ওই দিন ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেছিলেন, বিএনপির ৩৮ জ্যেষ্ঠ নেতাসহ সাত শতাধিক কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এসব মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের একজন ইশরাক হোসেন, যিনি আইসোলেশনে আছেন। অথচ তাকে গাড়ি পোড়ানোর মামলায় আসামি করা হয়েছে। আরেকজন হলেন জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি উত্তরায় নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত সময় পার করেছেন। অথচ তাকে খিলক্ষেত থানায় প্রধান আসামি করা হয়েছে।
গত ১২ নভেম্বর ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচন চলাকালে বিকেলে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন থানায় মোট ১৩টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের ৭০০ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত ১২ নভেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মোট ১১টি বাস পোড়ানো হয়।
এসব ঘটনায় বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের দায়ী করে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় মামলা করা হয়। এর বাইরে পুলিশের কাজে বাধা এবং গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায়ও মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবারের ঘটনায় যেসব মামলা হয়েছে, তাতে মোট আসামি সাতশ’র মতো। এর মধ্যে বাস পোড়ানো মামলার মোট আসামি সাড়ে পাঁচশ’র মতো।
গত ১৬ নভেম্বর বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল জানিয়েছিলেন, ১৪টি মামলায় বিএনপির ১৪০ জন নেতাকর্মী হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করেছেন।
এর ধারাবাহিকতায় আজ পৃথক জামিন আবেদনগুলো হাইকোর্টে শুনানির জন্য ওঠে। বিএনপির নেতাকর্মীরা আদালতে হাজির হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে আগাম জামিন চান।