বর্তমান সময়ে কওমী অঙ্গনে মাওলানা মামুনুল হক একটি আলোচিত ও সমালোচিত নাম। মরহুম শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক এর কনিষ্ঠ পুত্র, বাংলাদেশ খেলাফতে মজলিশের মহাসচিব এবং যুব মজলিশের সভাপতি মামুনুল হক হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের নতুন কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। ঢাকার সাতমসজিদ রোডে অবস্থিত জামি’আ রহমানিয়া আরাবিয়া কওমী মাদ্রাসা একটি দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু, এই মাদ্রাসা বর্তমানে দখল করে আছে অবৈধ দখলদার, যার মূল ক্রীড়ানক মাওলানা মামুনুল হক গং।
দীর্ঘদিন ধরেই মাদ্রাসার মোতওয়াল্লীসহ মালিকগণের মামলা ও দাবির প্রেক্ষিতে ওয়াকফ্; প্রশাসন অবৈধ দখলদারকে স্থান ছেড়ে দেওয়ার নোটিশ জারি করে। কিন্তু মামুনুল হক গং উক্ত মাদ্রাসাটিতে জোর করেই দখলদারিত্ব বজায় রেখেছে এবং অন্যান্য মাদ্রাসা দখলের সুক্ষ্ম পায়ঁতারা করছে। অথচ দখলদার মামুনুল হকই বর্তমান সময়ের একজন নীতিবাগিশ এবং ইসলামী মোটিভেশনাল বক্তা।
মামুনুল হক বিভিন্ন সভা-সমাবেশে সাম্প্রদায়িক, সরকারবিরোধী, উস্কানিমূলক এবং বিভ্রান্তিকর বক্তব্য প্রদান করে সাধারণ মানুষজন, বিশেষ করে তরুণ সমাজকে ক্ষেপিয়ে তুলছেন। এক্ষেত্রে সরকারের সহনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে দিন দিন লাগামহীন হয়ে যাচ্ছেন। আলেম সমাজের চোখে ধুলা দেওয়া বর্ণচোরা মামুনুল হক আলেম সমাজের সামগ্রিক অগ্রগতি কখনোই কামনা করেন না, বরঞ্চ নিজের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য নানাবিধ কৌশল অবলম্বন করছেন। এক্ষেত্রে, তার মরহুম পিতা শায়খুল হাদিস মাওলানা আজিজুল হক এর প্রতি সহানুভূতিশীল লোকজনকেও বিভিন্নভাবে ব্যবহার করছেন এবং তার দলে ভিড়াচ্ছেন। এ ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য তিনি পাশে পেয়েছেন কিছু অসাধু ব্যক্তিবর্গ ও অনুসারীদের। একদিকে, তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নামাজের ছবি পোস্ট করেন, অন্যদিকে, প্রশিক্ষিত ও সুসংগঠিত সাইবার ইউনিট গড়ে তোলার মাধ্যমে বিভিন্ন রকম ষড়যন্ত্রমূলক কার্যক্রমে মেতে থাকেন ।
আল্লামা শাহ আহমদ শফীর ইন্তেকালের পর জানাযার দিন লক্ষাধিক অনুসারীর মধ্যে জামায়াত-শিবিরের কৌশলী উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। জানাযার সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের নেতৃবৃন্দকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়। এছাড়া, আহমদ শফীর লাশ বহনকারী খাটিয়া জামায়াতের আমীর ও সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী, সাবেক শিবির নেতা ও বর্তমান এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, শিবিরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন আইয়ুবি, শিবিরের সাংস্কৃতিক সম্পাদক আব্দুল আলিমসহ আনুমানিক ৩০/৪০ জন বেষ্টন করে রাখে। বিষয়টি নিয়ে ক্বওমী আলেমসহ সারাদেশের মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
জানা যায়, মাওলানা মামুনুল হক সুকৌশলে জামায়াত-শিবিরের নেতৃবৃন্দকে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ করে দিয়ে জামায়াতের সাথে হেফাজতের একটি সেতুবন্ধন তৈরির প্রচেষ্টা চালায়। শুধু তাই নয়, বর্তমান সময়ে হেফাজতে ইসলামের সাথে জামায়ত-শিবিরের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে হেফজতে ইসলামকে জামায়াতের ছত্রছায়ায় নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে। মামুনুল হকের স্ত্রী একসময় শিবিরের সক্রিয় সদস্য ছিল। শুধু তাই নয়, তার শ্বশুরকুলের আত্মীয় স্বজনদের অনেকেই এখনো জামায়াত শিবিরের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত।
অতি সম্প্রতি হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটিতে যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন মামুনুল হক। কথিত আছে যে, বর্তমান কমিটির আমীর জুনায়েদ বাবুনগরী এবং মহাসচিব নূর হোসেন কাসেমীকে ব্যবহার করে তিনি অনেক বয়োজ্যৈষ্ঠ্য, ত্যাগী ও পরীক্ষিত হেফাজত নেতাদের ডিঙ্গিয়ে এ পদটি বাগিয়ে নেন। এ নিয়ে অনেক হেফাজত নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। এছাড়াও, নিজ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য বাবুনগরী ও কাসেমীকে ব্যবহার করছেন। বাবুনগরী ও কাসেমীকে সামনে রেখে হেফাজতের ব্যানারে বিভিন্ন জেলায় বিচরণ করলেও তার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নিজেকে হেফাজতের শক্তিশালী নেতা হিসেবে জাহির করা।
শায়খুল হাদীসের বড় ছেলে মাওলানা মাহফুজুল হক সম্প্রতি বেফাকের মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত হয়ে বাংলাদেশ খেলাফতে মজলিশ এর মহাসচিব পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। যে পদে বর্তমানে মামুনুল হক দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছেন। জনশ্রুতি রয়েছে যে, দলের মহাসচিবের পদটি দখল করতে তার ভাইকে শর্তানুযায়ী দলীয় পদ ছেড়ে বেফাকের মহাসচিব পদে বসাতে কলকাঠি নাড়েন। মাহফুজুল হক সাম্প্রদায়িক এবং ষড়যন্ত্রমূলক কার্যক্রমে নিরব ভূমিকা রাখলেও মামুনুল হক যেন ঠিক তার উল্টোটি।
গতবছর বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের বার্ষিক অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য সরকারি অনুমোদনের প্রয়োজনীয় শর্তাবলী পূরণ না করে অনুষ্ঠানের তারিখ ঘোষণা করে সে নিজ দল ও সমর্থকদের কাছে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। পরিস্থিতি সামাল দিতে মামুনুল হক সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে ধর্না দিয়ে সবশেষে অনুমতি প্রাপ্ত হন। অথচ, এই মামুনুল হকই সরকার এবং সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষদগার করে বেড়াচ্ছেন।