ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সচিবদের বেতন স্কেল ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা হচ্ছে। গ্রেড উন্নীতের জন্য ইউপি সচিবদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় স্থানীয় সরকার বিভাগ। এরপর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে স্থানীয় সরকার বিভাগের কাছে চারটি তথ্য চাওয়া হয়। এই চারটি তথ্যের বিষয়ে মতামত দিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, গত ১৮ নভেম্বর মতামতের চিঠি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে পাঠানো হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জানতে চাওয়া হয় ইউনিয়ন পরিষদের সচিব পদ সরকারি রাজস্ব খাতভুক্ত কি না। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ জানিয়েছে, ইউপি সচিব পদ সরকারি রাজস্ব খাতভুক্ত নয়। তবে ইউপি সচিবের বেতনের ৭৫ শতাংশ সরকারের রাজস্ব খাত থেকে এবং অবশিষ্ট ২৫ শতাংশ ইউনিয়ন পরিষদের রাজস্ব খাত থেকে দেয়া হয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ইউপি সচিব পদের স্বতন্ত্র নিয়োগবিধি আছে কি না জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগ জানায়, ‘ইউনিয়ন পরিষদ (পরিষদের কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ ও চাকরির শর্তাবলী) বিধিমালা, ২০১১’ নামে ইউনিয়ন পরিষদ সচিবদের একটি স্বতন্ত্র নিয়োগবিধি আছে।’
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে আরো জানতে চাওয়া হয়, অন্যান্য দপ্তরের ইউপি সদস্যদের সমান্তরাল পদ আছে কি না। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ মতামতে জানায়, অন্যান্য দপ্তরে ইউপি সদস্যদের সমান্তরাল পদ আছে। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় ১৯৯২ সালের পৌরসভার কর্মচারী চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী ‘গ’ শ্রেণীর পৌরসভার সচিব দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা। এছাড়া ইউনিয়ন পর্যায়ে সমযোগ্যতা কিংবা নিম্নযোগ্যতা সম্পন্ন সরকারি অনেক কর্মকর্তা রয়েছেন, যাদের বেতন স্কেল এরইমধ্যে ১৪তম গ্রেড থেকে ১০তম গ্রেডে উন্নীত হয়েছে। যেমন- ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রভৃতি।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জানতে চাওয়া হয়, প্রস্তাবিত পদের বেতন স্কেল উন্নীত করা হলে সরকারি অন্যান্য দপ্তরে প্রভাব পড়বে কি না। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ জানায়, প্রস্তাবিত পদের বেতন স্কেল উন্নীত করা হলে সরকারি অন্যান্য দপ্তরে প্রভাব পড়বে না। কারণ ইউপি সচিব ব্লক পোস্ট এবং এতে কোনো পদোন্নতি নেই।
ইউপি সচিবদের বেতন স্কেল ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার জন্য দীর্ঘ দিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিল বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ সেক্রেটারি সমিতি (বাপসা)। ইউপি সচিবরা বলছেন, এইচএসসি বা ডিপ্লোমাধারীরা সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ১০ম ও ১১তম গ্রেড স্কেলে অফিসার মর্যাদা পেলেও ইউনিয়ন পরিষদ সচিবরা স্নাতকধারী ও অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্নাতকোত্তর হওয়া সত্বেও ১৪তম স্কেলের অফিসার মর্যাদা দেয়া হয়েছে। ফলে ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মরত সরকারি বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।
ইউনিয়ন পরিষদ (পরিষদের কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ ও চাকরির শর্তাবলী) বিধিমালা, ২০১১ অনুযায়ী সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে ইউপি সচিবগণের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক এবং বেতনস্কেল ১০২০০-২৪৬৮০/- । ইউনিয়ন পরিষদে ০৩ (তিন) ক্যাটাগরির কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণের সচিব পদে শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক- ১৪তম গ্রেড, হিসাব সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর পদে শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি- ১৬তম গ্রেড, দফাদার পদে শিক্ষাগত যোগ্যতা এইসএসসি, মহল্লাদার পদে শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি।
উল্লেখ্য, সারাদেশের ৪ হাজার ৫৭১টি ইউনিয়ন পরিষদে রয়েছে। প্রত্যেকটি পরিষদে একজন করে সচিব রয়েছেন।