দেশের ইতিহাসে পোশাক শিল্পের দ্বিতীয় বিভীষিকাময় কালো অধ্যায়ের নাম তাজরীন ট্রাজেডি। ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর এই পোশাক কারখানায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যায় ১১৩টি তাজা প্রাণ। আহত হন আরও তিন শতাধিক শ্রমিক। সেদিনের ভয়াল স্মৃতি মনে করে এখনো আঁতকে ওঠেন অনেকেই। সেই পোড়া গন্ধ এখনো ভুলতে পারেনি শ্রমিকরা।
আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকায় সেই তাজরীন ফ্যাশনের ভবনটি পোড়া চিহ্ন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আজও।ভবনটি সেই অবস্থাতেই পড়ে আছে। ১১৩ জন শ্রমিকের প্রাণখেকো সেই ভবনটি দেখে ভয় পান অনেকে। জরাজীর্ণ ভবনটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।
তাজরীন ট্রাজেডির আট বছরে ভবনটির সামনে গিয়ে দেখা যায় সুনসান নীরবতা। পুরো ভবনজুড়ে যেন দগদগ করছে সেই ২৪ নভেম্বরের ক্ষত। আগুনের প্রচণ্ড তাপে বেঁকে যাওয়া জানালার গ্রিলগুলো চোখে ভাসিয়ে তুলছে সেই দিনের ভয়াবহতা।
বরাবরই তাজরীন ফ্যাশন ট্র্যাজেডির বর্ষপূর্তিতে এসে কারখানার ফটকটি ভেতর থেকে বন্ধ পাওয়া যায়। দেখভাল করার জন্য মালিকপক্ষের একজন লোক সবসময় ভেতরে থাকেন। সাংবাদিক দেখলেই দ্রুত গেটটি আটকে দেন তিনি।
তবে একপাশে ভাঙা সীমানা প্রাচীর দিয়ে ভবনের ভেতরটা কিছুটা দেখা যায়। পিলারগুলোর বেশিরভাগের পলেস্তারা খসে পড়েছে। তবে কিছু পিলার মেরামতও করা হয়েছে।
সিঁড়ি ঘরে আগুনের লেলিহান শিখার সেদিনের ভয়াবহতা স্পষ্ট। কালচে দাগের দেয়ালগুলো যেন বলে দিচ্ছে সব। ছাদের বাইরের অংশেরও পলেস্তারা খসে পড়েছে।
তাজরীন ভবনের পাশের বাড়ির মালিক মীর আকবর বলেন, ‘এই ভবনডা ঝুঁকিপূর্ণ। ৮০ ফুট উঁচা এই বিল্ডিং যদি ধইসা পড়ে তাইলে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হইব। বিল্ডিংয়ের সামনেই রাস্তা দিয়া মানুষ চলাচল করে।’
‘ভাঙলে রাস্তার উপর আইসা পড়ব। বিল্ডিংয়ের চারদিকে কমপক্ষে আড়াইশ বাড়ি আছে। এহন এসব বাড়ির সবাই আমরা আতঙ্কে আছি।’
এলাকাবাসী জানান, সেই একই স্থানে জীর্ণ দশা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ভবনটি। পোড়ার আঁচড় ও কালো দাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা তাজরীনের ভবনটি এখনো আতঙ্কের চারদেয়াল। স্থানীয়দের দাবি, এই পোড়া চিহ্ন নিশ্চিহ্নের। আর তারা আর্তনাদের এই চিহ্ন দেখতে চান না।
এ ব্যাপারে সাভার উপজেলা প্রকৌশলী সালেহ হাসান প্রামাণিক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এলাকাবাসীকে এ বিষয়ে একটা অভিযোগ দিতে হবে। তখন আমরা পদেক্ষপ নিতে পারব। উপজেলা প্রশাসন বললে ইউএনও মহোদয় আমাকে মার্ক করে দিলে আমি পরিদর্শনে টিম পাঠাব।’