মেট্রোরেলের জন্য ভাঙা পড়ছে কমলাপুর রেলস্টেশন!

নিজস্ব প্রতিবেদক

কমলাপুর রেলস্টেশন

মেট্রোরেলের জন্য ঐতিহ্যবাহী কমলাপুর রেলস্টেশন ভেঙে ফেলা হতে পারে। স্টেশনটি বর্তমান জায়গা থেকে সরিয়ে নিতে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশ রেলওয়ে সম্মত হয়েছে। তবে স্টেশন ভাঙার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন মঙ্গলবার দুপক্ষের সঙ্গে বৈঠক শেষে বলেছেন, নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী বর্তমান স্টেশনটি ভেঙে দেয়া হবে এবং কিছুটা উত্তর দিকে একই রকম একটি স্টেশন নির্মাণ করা হবে। এটি যেহেতু একটি আইকনিক স্থাপনা, তাই এটি ভেঙে ফেলার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আজ বুধবার রেলের মহাপরিচালক মো. শামসুজ্জামানও একই কথা জানিয়েছেন।

উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ঢাকার প্রথম মেট্রোরেল নির্মাণকাজ চলমান। এর শেষ স্টেশনটি পড়েছে কমলাপুর স্টেশনের ঠিক সামনে।

রেলের মহাপরিচালক জানান, মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট-৬ এর লাইন সম্প্রসারণ এবং মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট হাব নির্মাণের জন্য কমলাপুর রেলস্টেশন ভবনটি ভেঙে কাছাকাছি জায়গায় পুনরায় নির্মাণ করতে হবে। এ বিষয়ে একটি নতুন পরিকল্পনায় সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ।

মহাপরিচালক বলেন, কমলাপুর স্টেশন ঘিরে মাল্টিমোডাল হাব গড়ে তোলা হবে, যা শাহজাহানপুরসহ আশপাশের রেলের জায়গাজুড়ে বিস্তৃত হবে। এই প্রকল্পের আওতায় বিদ্যমান কমলাপুর রেলস্টেশনের আদলেই নতুন স্টেশন নির্মাণ করা হবে। পাঁচ বছরের মধ্যেই কাজ শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে। বাস্তবায়ন শেষ হতে ১০ বছর লাগতে পারে।

তিনি জানান, মেট্রোরেলের কারণে কমলাপুর স্টেশন আড়ালে পড়ে গেলে এর সৌন্দর্য আর থাকবে না। তাই সরিয়ে নেয়াই উত্তম বিকল্প।

রেল সূত্রে জানা গেছে, নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য কমলাপুর স্টেশনটি ভেঙে বর্তমান জায়গা থেকে ১৩০ মিটার উত্তরে নতুন করে তৈরি করতে হবে। যদি বিদ্যমান পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হয় তাহলে স্টেশনটি ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট-৬ এর কাঠামো দিয়ে পুরোপুরি ঢেকে যাবে। বর্তমান পরিকল্পনাটি যদি সংশোধনও করা হয় তারপরও স্টেশনের একটি অংশ ঢাকা পড়ে যাবে, তাই স্টেশন অন্যত্র বানানো ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।’

যদিও এর আগে রেল কর্তৃপক্ষের দাবি ছিল, মেট্রোরেল কমলাপুর স্টেশনের সৌন্দর্যহানি ঘটাতে পারে বলে রুট পরিবর্তন করা হোক। কিন্তু মেট্রোরেলের বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) রুট পরিবর্তন করতে রাজি ছিল না। তবে শেষ পর্যন্ত কাজিমা করপোরেশনের নকশা ধরে কমলাপুর স্টেশনটিই ১৩০ মিটার উত্তরে সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে রেল কর্তৃপক্ষ রাজি হয়েছে।

ছয় দশকেরও বেশি পুরানো কমলাপুর স্টেশনকে রেলের ঐতিহ্যবাহী ভবন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর সঙ্গে সংস্থাটির আবেগ জড়িয়ে আছে। তাই মেট্রোরেলের রুট পরিবর্তনেই বেশি জোর দিয়েছিল রেলবিভাগ। তবে বিকল্প করা হলে তা ব্যয়বহুল বলে স্টেশনটি সরিয়ে একই ধরনের ভবন তৈরির বিকল্পে সায় দিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। এতে স্টেশনের ভেতরে থাকা রেললাইনও সরাতে হবে।

ইতিহাস

তৎকালীন পূর্ব বাংলার এবং ভারত বিভাজনের পর পূর্ব পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় রেলওয়ে স্টেশন ছিল ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন। বাংলা বিভক্তীকরণের পর ঢাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও ঘনবসতিপূর্ণ শহরে রূপান্তরিত হয়। তাই ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনকে প্রতিস্থাপন করে তুলনামূলক নতুন ও অধিক বড় রেলওয়ে স্টেশন তৈরি করার উদ্যোগ নেয়া হয়। সদ্যপ্রতিষ্ঠিত বুয়েটের আমেরিকান শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে এই সম্প্রসারণ সাধিত হয়। মতিঝিলের কমলাপুরের একটি জায়গায় স্টেশন নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পূর্বে এই জায়গাটি ছিল বিস্তীর্ণ ধানক্ষেত, লোকজনের বসবাস ছিল না। ১৯৫০-এর দশকের শেষের দিকে নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ১৯৬৮ সালে শেষ হয়। ১৯৬৮ সালের ২৭ এপ্রিল স্টেশনটি উদ্বোধন করা হয়। ১৯৬৮ সালের ১ মে ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে শেষ ট্রেন ছেড়ে যায় এবং এর পরদিন স্টেশনটিকে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয়া হয় এবং তুলে ফেলা হয়।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে