ম্যারাডোনার মৃত্যুতে আর্জেন্টিনায় ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা

ক্রীড়া প্রতিবেদক

আর্জেন্টিনায় ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা
আর্জেন্টিনায় ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা। ছবি : ইন্টারনেট

ফুটবল রাজপুত্রের বিদায়ে তার নিজের দেশ আর্জেন্টিনায় তিনদিনের শোক ঘোষণা করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ। বুয়েনস আইরেসে অবস্থিত প্রেসিডেন্টের কার্যালয় কাসা রোসাদায় নেওয়া হয়েছে ফুটবল জাদুকরের মরদেহ।  তিন দিন সেখানেই ফুটবল জাদুকরকে শ্রদ্ধা জানাবে  ফুটবলপ্রেমীরা।

আলবার্তো ফার্নান্দেজ টুইট করে বলেন, ‘তুমি আমাদেরকে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ জায়গায় তুলে দিয়েছিলে। তুমি আমাদেরকে ব্যাপকভাবে সুখী করেছিলে। তুমি ছিলে সর্বকালের সেরা। তুমি আমাদের মাঝে ছিলে, এ কারণে আমরা ছিলাম ধন্য। সারাজীবনই তোমাকে আমরা মনে রাখব।’

আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম বুয়েনস আইরেস টাইমস-এর এক প্রতিবেদনে আজ বৃহস্পতিবার (২৬ নভেম্বর) এ খবর জানানো হয়েছে।

গতকাল বুধবার (২৫ নভেম্বর) নিজ বাড়িতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ম্যারাডোনা। আর্জেন্টাইন সময় বিকেলে এই মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে স্থানীয় গণমাধ্যম।

৬০তম জন্মদিনের পর থেকেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। যেতে হয়েছিল হাসপাতালে। মস্তিষ্কে জমাট বেঁধে থাকা রক্তও (ক্লট) অপসারণ করা হয়েছিল এই আর্জেন্টাইন কিংবদন্তির। এরপর ১১ নভেম্বর ফেরেন বাড়িতে। ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা আশ্বস্ত করেছিলেন, সেরে উঠবেন দ্রুত। কিন্তু বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা কোটি ভক্তকে কাঁদিয়ে না-ফেরার দেশে চলে যান ফুটবলের রাজা। হাসপাতালে থাকার সময়ই হাজারো সমর্থক প্রার্থনায় মগ্ন ছিলেন বাইরে।

৬০তম জন্মদিনের পরপরই লা প্লাতার ইপেন্সা ক্লিনিকে সফল অস্ত্রোপচার হয়েছিল ম্যারাডোনার। তবে মাদক নিয়ে সমস্যায় ভোগায় দেরি হয় হাসপাতাল ছাড়তে। তাঁর চিকিৎসকদলের অন্যতম সদস্য আলফ্রেদো কাহে যেন খারাপ কিছুর ইঙ্গিত পেয়েছিলেন তখনই। একটা সময় ম্যারাডোনা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে চলে গিয়েছিলেন মাদককে ‘বন্ধু’ বানিয়ে ফেলায়।

বিভিন্ন প্রতিবেদনে জানা যায়, ম্যারাডোনার মদের ওপর নির্ভরতা কমানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন চিকিৎসকরা। মদ ছাড়ার পর শরীরে উপসর্গ দেখা দেয় অনেক। এ জন্য ওষুধ দিয়ে শান্ত রাখা হচ্ছিল তাঁকে। পুনর্বাসনের জন্য নেওয়া হয়েছিল তিগ্রের একটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে। তাঁর যকৃৎ ও হৃিপণ্ডজনিত সমস্যা ছিল আগে থেকে। ধুঁকছিল মস্তিষ্ক আর পাকস্থলীও। শেষ পর্যন্ত আর লড়াইটা চালিয়ে যেতে পারলেন না ম্যারাডোনা। তিগ্রেতে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন নিজের বাড়িতে। তাঁর মৃত্যুতে শোক জানিয়ে আর্জেন্টাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতি, ‘আমাদের কিংবদন্তির মৃত্যুতে প্রচণ্ড শোকাহত আমরা। সব সময় তুমি হৃদয়ে থাকবে আমাদের।’

১৯৮৬ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে প্রায় একাই জেতান ম্যারাডোনা। অমরত্বের পথে তাঁর পা পড়ে সেই বিশ্বকাপেই। ইতালিয়ান ক্লাব নাপোলিকেও সাফল্যের চূড়ায় নিয়েছিলেন ম্যারাডোনা। নাপোলিকে দুবার সিরি ‘আ’ ও উয়েফা কাপ জিতিয়েছেন আর্জেন্টাইন ‘ফুটবল ঈশ্বর’। ক্লাবের বাইরে আছে তাঁর ভাস্কর্যও।

আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্সের হয়ে ১৬ বছর বয়সে ক্যারিয়ার শুরু ম্যারাডোনার। ১৯৭৬ থেকে পাঁচ বছর খেলে ১৬৭ ম্যাচে করেছিলেন ১১৬ গোল। এরপর বোকা জুনিয়র্স, বার্সেলোনা, নাপোলি, সেভিয়া, নিউওয়েলস ওল্ড বয়েজের পর বোকা জুনিয়র্সে দেখিয়েছেন বাঁ পায়ের জাদু। কোচ হিসেবেও সফল এই কিংবদন্তি। ২০০৮ সালে আর্জেন্টিনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন দুঃসময়ে। লিওনেল মেসিরা তখন বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব থেকে বাদ পড়ার কিনারে। সেখান থেকে ম্যারাডোনার জাদুর ছোঁয়ায় আর্জেন্টিনা পৌঁছে ২০১০ বিশ্বকাপে। এরপর জাতীয় দলের দায়িত্ব ছেড়ে সামলেছেন কয়েকটি ক্লাবের দায়িত্ব।

সর্বশেষ আর্জেন্টাইন ক্লাব জিমনাসিয়ার কোচ ছিলেন ম্যারাডোনা। ৬০তম জন্মদিনে সর্বশেষ এসেছিলেন তাঁর দল জিমনাসিয়ার ম্যাচ দেখতে। কিন্তু অসুস্থতার কারণে ৩০ মিনিট পরই ছাড়েন মাঠ।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে