শীতে বাচ্চাদের বেশি করে মাছ ও শস্যজাতীয় সবজি খেতে দিন

সৈয়দা রাকীবা ঐশী

শীতে শিশুর খাবার
শীতে শিশুর খাবার। ফাইল ছবি

শীতে বাচ্চাদের সাধারণ সময়ের চেয়ে একটু বেশি যত্ন নিতে হয়। শীতকালে ঘরে ঘরে সর্দি কাশিও বেড়ে যায়। আর বাচ্চাদের মধ্যে গলা ব্যাথা, সর্দি, কাশি, জ্বর, ত্বকের সংক্রমণের মতো সমস্যা তো লেগেই থাকে। তাই এই সময়ে বাচ্চাদের কয়েকটি খাবার থেকে দূরে রাখাই ভালো। না হলে তাদের অসুস্থ হয়ে পড়ার প্রবণতা আরও বেড়ে যেতে পারে।

বাচ্চাদের এমন খাবার দিন, যাতে বাচ্চাদের শরীরে জলের ঘাটতি দেখা না যায়। কারণ শীতকাল টানের সময়। এই সময় বাচ্চাদের শরীরে সহজেই জলের অভাবে দেখা যেতে পারে। জেনে নিন শীতকালে কোন কোন খাবার বাচ্চাদের দেবেন না। আর যে খাবারগুলো তাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

নোনতা ভাজাভুজি

বাচ্চারা নানারকম মুখরোচক খাবার খেতে বায়না করে ঠিকই। কিন্তু শীতকালে বাচ্চাদের নোনতা ভাজাভুজি জাতীয় খাবার না দেওয়াই ভালো। মাখন বা তেলে থাকা ফ্যাট এবং ওমেগা ৬ ফ্যাটি অ্যাসিড মিউকাস ও স্যালাইভাকে আরও গাঢ় করে দিতে পারে। তাই এই সময় ভাজাভুজি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন।

ক্যান্ডি

শীতকাল হোক বা গরম কাল, বাচ্চাকে যতটা সম্ভব চেষ্টা করুন ক্যান্ডি থেকে দূরে রাখতে। কারণ ক্যান্ডিতে যে সাদা চিনি প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করা হয়, তা বাচ্চাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত খারাপ। শরীরে চিনির পরিমাণ বেড়ে গেলে শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা কমে যেতে পারে। এই শ্বেত রক্তকণিকাই আমাদের নানা ধরনের সংক্রমণ ও অসুখ বিসুখ থেকে রক্ষা করে। বেশি চিনি খেলে ভাইরাল ও ব্যাকটিরিয়াল সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাই শীতকালে বাচ্চাদের চকোলেট, ক্যান্ডি, নরম পানীয় দেওয়া বন্ধ রাখুন।

মেয়োনিজ

মেয়োনিজে আছে প্রচুর পরিমাণে হিস্টামিন। এই হিস্টামিন রাসায়নিক আমাদের অ্যালার্জির বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে। কিন্তু শীতকালে শরীরে অতিরিক্ত পরিমাণে হিস্টামিন জমে গেলে মিউকাস বৃদ্ধি করে। ফলে গলা ব্যাথা হতে পারে। মেয়োনিজ ছাড়াও টমেটো, অ্যাভোকাডো, মেয়োনিজ, মাশরুম, ভিনিগার, বাটারমিল্ক, আচারে হিস্টামিন থাকে।

দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য

দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য হলো অ্যানিম্যাল প্রোটিন। শীতকালে অ্যানিম্যাল প্রোটিন স্যালাাইভা ও মিউকাসকে গাঢ় করে দেয়। এর ফলে বাচ্চাদের গলা ব্যাথা ও ঢোক গেলায় সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই এই সময় দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য বাচ্চাদের বেশি না দেওয়াই ভালো। শীতকালে বাচ্চাদের সর্দি হলে তখন দুধ, চিজ, ক্রিম একটু কম করে খাওয়ান।

মাংস

মাংসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন। যার ফলে মিউকাস বৃদ্ধি হতে পারে। মিউকাস বাড়লে গলায় সংক্রমণের সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে প্রক্রিয়াজাত মাংস এবং ডিম এই সময় দেওয়া একদমই উচিত নয়। তার বদলে শীতকালে বাচ্চাদের বেশি করে মাছ খাওয়ান।

মওসুমী ফল ও শাকসবজি

চিকিৎসকরা যে কথাটা প্রায়ই বলেন তাহলো- মওসুমী রোগব্যধির প্রতিষেধক সেই সময়ের ফল ও শাকসবজিতে রয়েছে। তাই শীতে নানা রোগব্যধি দূর করতে শিশুদেরকে এই সময়ের শাকসবজি ও ফল দিতে পারেন। কেননা এতে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন। যা শিশুদের রোগপ্রতিরোগ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় অনেকটাই। শিশুর দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় পেয়ারা, কমলা, পেঁপে, কুল এবং শীতকালীন সব শাকসবজি রাখতে পারেন।

টকদই

ঠাণ্ডা বলে ভুলেও টকদই খাওয়ানো বন্ধ করবেন না। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর শক্তিশালী মাধ্যম টকদই। এতে থাকা প্রদাহ বিরোধী উপাদান শিশুদের সুরক্ষা করে। স্বাস্থ্যকর এই খাবারে থাকা ক্যালসিয়াম ও পুষ্টি উপাদান শরীর মজবুত এবং হাড় গঠনে সহায়তা করে।

প্রাণিজ প্রোটিন

প্রাণিজ উৎস থেকে পাওয়া প্রোটিনে প্রচুর অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে যা দেহের কোষের সুরক্ষা করে। এই প্রোটিন পাওয়া যায় মাছ, পনির, ডিম এবং দুধে। তাই শীতে বাজারে প্রচুর পরিমাণে মাছ পাওয়া যায়, দামও মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে। শিশুদের খাদ্যে রাখুন মাছ ও শস্যজাতীয় সবজি।

বাদাম

আখরোট এবং কাজুবাদামে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যা শরীরে অসুস্থতা প্রতিরোধ করে। তাই শিশুদের প্রতিদিন দিন বাদাম। নাশতার সঙ্গে মিশিয়ে দিতে পারেন আখরোট। এছাড়া দেশীয় বাদামও দিতে পারেন।

মসলাজাতীয় খাবার

শিশুদের খাবার রসুন, আদা, হলুদ প্রভৃতি মসলা দিয়ে রান্না করুন। এতে রয়েছে অ্যান্টিভাইরাল এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান। এটি রক্তে শ্বেত কণিকা উৎপাদন করতে সহায়তা করে। রসুন সর্দি এবং ফ্লু উপসর্গ প্রতিরোধে সাহায্য করে। অবশ্যই ভেজালমুক্ত মসলা দিবেন। কারণ বাজারের হলুদ ও মরিচের গুঁড়ায় কিন্তু ভেজাল থাকে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে