মৃত্যুর আগে ম্যারাডোনাকে চিকিৎসা না দিয়ে ১২ ঘণ্টা ফেলে রাখার অভিযোগ

ক্রীড়া ডেস্ক

ম্যারাডোনা
ফাইল ছবি

ফুটবলের জাদুকর দিয়াগো ম্যারাডোনাকে মৃত্যুর আগে চিকিৎসা না দিয়ে ফেলে রাখা হয়েছিল এবং তিনি যখন গুরুতর অসুস্থ তখন অ্যাম্বুলেন্স আসতে দেরি করে- এমন দাবি করেছেন কিংবদন্তির আইনজীবী ও বন্ধু।

ম্যারাডোনার আইনজীবী বন্ধু এ দাবি করেছেন বলে বৃহস্পতিবার (২৬ নভেম্বর) সংবাদ প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল।

খবরে বলা হয়েছে, কিংবদন্তির আইনজীবী ও বন্ধু ম্যাটিস মোরলা অভিযোগ তুলেছেন, ম্যারাডোনার মৃত্যুর দিন (বুধবার) তাকে ১২ ঘণ্টা কোনো চিকিৎসা সহায়তা দেয়া হয়নি এবং তিনি যখন অসুস্থ তখন তাকে নিতে আসা অ্যাম্বুলেন্স প্রায় ৩০ মিনিট দেরি করে। এর মাত্র দুই সপ্তাহ আগে তার ব্রেইনে সার্জারি করা হয়েছিল।

ম্যাটিস মোরলা এ ঘটনাকে ম্যারাডোনার ‘বোকামিমূলক অপরাধ’ হিসেবে উল্লেখ করে এর তদন্ত দাবি করেছেন।

আর্জেন্টিনার কিংবদন্তি ফুটবলার ডিয়েগো ম্যারাডোনা বুধবার মারা যান। তার মৃত্যুর নানা আনুষ্ঠানিকতা চলছে। ইতোমধ্যে লাশের ময়নাতদন্তও সম্পন্ন হয়েছে। স্থানীয় সময় ২৫ অক্টোবর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত ১০টার মধ্যে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে। শেষকৃত্যের জন্য এখন প্রস্তুত করা হচ্ছে।

ম্যারাডোনার মৃত্যু নিয়ে বুধবার যা জানানো হয়েছিল ময়নাতদন্তে সেটাই নিশ্চিত হওয়া গেছে। জানা গেছে, তার হৃদ্‌রোগেই মৃত্যু হয়েছে এবং ঘুমের মধ্যেই তিনি মারা যান।

২০০০ সাল থেকেই নাকি হৃদ্‌রোগে ভুগছিলেন ম্যারাডোনা, আর গুরুতর রূপ নেওয়া এই শারীরিক সমস্যাই তার অন্তিম যাত্রার কারণ হলো।

ম্যারাডোনাকে সর্বশেষ জীবিত অবস্থায় দেখেছেন তার এক আত্মীয়। ২৪ তারিখ রাত ১১টায় ম্যারাডোনাকে ঘুমাতে যাওয়ার সময় দেখেছিলেন তিনি। এরপর ম্যারাডোনার সঙ্গে আর দেখা হয়নি কারও।

১৯৬০ সালের ৩০ অক্টোবর আর্জেন্টিনায় জন্ম হয়েছিল দিয়াগো ম্যারাডোনার। তবে তার বেড়ে উঠা ভিয়া ফিওরিতোতে। ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের পরিবেশেই বড় হয়েছেন এই কিংবদন্তি। তাই মাত্র ১০ বছর বয়সেই স্থানীয় ক্লাব এস্ত্রেয়া রোজার হয়ে খেলা শুরু করেন দিয়াগো। তারপর খেলা শুরু করেন বুয়েন্স আয়ার্সের জুনিয়র দল ‘লস সেবোলিটিয়াস’ এর হয়ে। এই দলের হয়ে টানা ১৩৬ ম্যাচ খেলেন। আর নিজের ফুটবল প্রতিভার জন্য মাত্র ১২ বছর বয়সে ‘বল-বয়’ খেতাব পান।

১৯৭৬ সালে পেশাদার ফুটবলে নাম লেখান। আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্সে যোগ দেন তিনি। এই ক্লাবে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত খেলেন। আর ১৬৭ ম্যাচে খেলে গোল করেন ১১৫টি।

১৯৭৭ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি, মাত্র ১৬ বছর বয়সে তার আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়। হাঙ্গেরির বিপক্ষে নিজ দেশের হয়ে মাঠে নামেন তিনি।

ঠিক পরের বছর ১৯৭৮ সালে ঘরের মাঠেই বিশ্বকাপ আসর। আর ঠিক সেই সময়টা ফর্মের তুঙ্গে ছিলেন তিনি। কিন্তু ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে সুযোগ পাননি।
তবে, জাতীয় দলের হয়ে খেলতে না পারলেও ১৮ বছর বয়সে তিনি আর্জেন্টিনার হয়ে ফিফা অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেন। প্রতিযোগিতার স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে সিনিয়র দলের হয়ে প্রথম গোল করেন ম্যারাডোনা। তারপরই পুরো বিশ্বকাপে অসাধারণ খেলা প্রদর্শন করে সেরা খেলোয়াড় হিসেবে ‘গোল্ডেন বল’ পান।

১৯৮১ সালে ক্লাব পরিবর্তন করে ‘বোকা জুনিয়র্স’-এ যোগ দেন। আর ১৯৮২ সালে প্রথম লিগ চ্যাম্পিয়নশিপ জেতেন। আর সময় গুনতে গুনতে চলে আসে বিশ্ব ফুটবলের বড় আসর বিশ্বকাপ। কিন্তু সেবার, আর্জেন্টাইন হট ফেভারিট এবং ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হওয়া সত্ত্বেও প্রথম রাউন্ড থেকেই আর্জেন্টিনা পিছিয়ে পড়তে থাকে। আর দ্বিতীয় পর্বে গিয়ে ব্রাজিলের কাছে পরাজিত হয়ে বিশ্বকাপ স্বপ্ন সেবার শেষ হয়ে যায় আর্জেন্টিনার।

বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পরপর ম্যারাডোনা আবার ক্লাব পরিবর্তন করেন। ১৯৮২ সালে ৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে বার্সেলোনায় যোগ দেন তিনি। দুই সিজনে ৫৮ ম্যাচে ৩৮ গোল করেন বার্সার হয়ে। ১৯৮৩ সালে বার্সার হয়ে কোপা দেল রে এবং স্প্যানিশ সুপার কাপ ছিল বার্সার হয়ে তার অর্জন। কিন্তু ফর্মের তুঙ্গে থাকার পরও সে সময়ের বার্সার প্রেসিডেন্ট ইয়োসেপ লুইস নুনেজের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। পরে বার্সা ছেড়ে দেন ম্যারাডোনা।

১৯৮৪ সালে ইতালিয়ান ক্লাব নাপোলিতে যোগ দেন। তারপরই তার ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরে যায়। এখন পর্যন্ত নাপোলির ইতিহাসে সবচেয়ে সফল সময় ছিল এটি। তার দারুণ ফর্মের কারণে নাপোলি ১৯৮৬-৮৭ ও ১৯৮৯-৯০ মৌসুমে সিরি এ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে নেয়। আর ১৯৮৬-৮৭ মৌসুমে ম্যারাডোনা টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা হন।

১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা দলের অধিনায়কত্ব পান। আর এই বিশ্বকাপেই তিনি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তার বিখ্যাত গোল ‘দ্য হ্যান্ড অব গড’ করেন। তবে, শেষ পর্যন্ত ম্যারাডোনার অধিনায়কত্বে বিশ্বকাপ জিতে নেয় আর্জেন্টিনা। আর ২০০২ সালে ফিফা অনলাইনে ভোটের আয়োজন করলে এই গোলটি শতাব্দীর সেরা গোল হিসেবে নির্বাচিত হয়।

তবে, ১৯৯০ সালের বিশ্বকাপের সময় ইনজুরির কারণে তিনি মাঠে অনেকটাই নিষ্প্রভ ছিলেন। আর টানা দুই বিশ্বকাপ জেতা হয় না আর্জেন্টিনার।

পরবর্তীতে, ম্যারাডোনার ছন্দপতন ঘটে। মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তিনি। পরে, ড্রাগ টেস্টে ধরা পড়ে ১৫ মাসের জন্য নিষেধাজ্ঞা পান তিনি। ১৯৯২ সালে ম্যারাডোনা নাপোলি ছেড়ে দেন। পরে, স্পেনীয় ক্লাব সেভিয়াতে যোগ দেন। ১৯৯৩ সালে লিওয়েলস ওল্ড বয়েজের হয়ে খেলেন। আর ১৯৯৪ সালে ১৭ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টানেন দিয়াগো ম্যারাডোনা।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে