কিংবদন্তি ফুটবলারকে হারিয়ে ফুটবল বিশ্বে শোকের মাতম চলছে। কারণ কিংবদন্তীর মৃত্যু বলে কথা। দেশ, কাল, অঙ্গন ছাপিয়ে ক্রীড়ামোদিদের হৃদয়ের নায়ক ছিলেন দিয়েগো ম্যারাডোনা।
আর্জেন্টাইন ফুটবল জাদুকরের শেষ বিদায়ে বাঁধভাঙা আবেগ দেখেছে বিশ্ব। ম্যারাডোনার প্রয়াণে আর্জেন্টিনায় যেমন মাতম চলছে, তেমনি শোক বয়ে চলেছে ইতালির নেপলসে। কারণ এই শহরের ক্লাব নাপোলিকে সাধারণ থেকে বিশ্বসেরার কাতারে তুলে এনেছিলেন ম্যারাডোনা।
১৯৮৬-৮৭ মৌসুমে ম্যারাডোনার জাদুতে ভর করে ক্লাবের ইতিহাসে প্রথম ইতালিয়ান সেরি-এ’র শিরোপা জেতে নাপোলি। এরপর ১৯৮৯-৯০ মৌসুমে নাপোলিকে আরও একবার লিগ শিরোপা জেতান ম্যারাডোনা । ম্যারাডোনাকেই ফুটবল ইশ্বর বলেন নেপলসের বাসিন্দারা।
তাই কিংবদন্তি ফুটবল ইশ্বরকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে একটু বেশি আয়োজন করতেই পারে তারা।
আর্জেন্টিনার বুয়েনস আয়ার্সে ম্যারাডোনার কফিন বহনকারী গাড়ি যখন সমাধিস্থলের পথে তখন ইতালির সান পাওলো স্টেডিয়ামের বাইরে ফুল হাতে জড়ো হয়েছিলেন নাপোলির সমর্থকরা।
সবাই অঝোরে কাঁদছিলেন। তাদের হাতে ম্যারাডোনার ছবি সম্বলিত ব্যানার, পতাকা।
করোনার কারণে মাঠের ভেতরে প্রবেশের সুযোগ ছিল না। তাই স্টেডিয়ামের সামনে হাজারো সমর্থক জড়ো হয়ে সমস্বরে ‘ফুটবলের রাজা, নাপোলির রাজা, তুমি আর নেই’ গাইতে থাকেন। এ সময় স্টেডিয়ামের আশপাশের রাস্তায় প্রজেক্টর বসিয়ে ম্যারাডোনার খেলোয়ারি জীবনের নানান কীর্তি দেখানো চলে অনেকক্ষণ।
স্টেডিয়ামের ভেতরে নাপোলির সব খেলোয়াড়েরা গায়ে পরে এসেছিলেন ম্যারাডোনা লেখা ১০ নম্বর জার্সি। ১০ নম্বর জার্সি পরেই খেলতেন ম্যারাডোনা।
বুধবার রাতে ইউরোপা লিগের ম্যাচের আগে এভাবেই আর্জেন্টাইন মহানায়ককে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়েছে তার প্রাণের ক্লাব নাপোলি।
উল্লেখ্য, ১৯৯১ সালে ম্যারাডোনা যখন নাপোলি ছেড়ে সেভিয়াতে পাড়ি জমান, ক্লাবটি তার সম্মানার্থে ১০ নম্বর জার্সিটি আজীবনের জন্য উঠিয়ে নেয়। এরপর আর কোনো নাপোলি খেলোয়াড়ের গায়ে দেখা যায়নি এই জার্সি।
তবে এতদিন পর সেই নাপোলিতে আবারও দেখা গেছে ১০ নম্বর জার্সি, তবে সেটি ফিরে এসেছে ম্যারাডোনাকে শ্রদ্ধা জানাতেই।
খেলা শুরুর আগে ম্যারাডোনার প্রতি সম্মান জানাতে দুদলের খেলোয়াড়রা এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।
এদিন ক্রোয়েশিয়ার ক্লাব রিজেকাকে ২-০ গোলে হারায় নাপোলি। আর এই জয় ম্যারাডোনাকে উৎসর্গ করে তারা। শুধু একটি জয়ই নয়; শোককে শক্তিতে পরিণত করে শিরোপা জিতে তা ম্যারাডোনাকে উৎসর্গ করতে চায় নাপোলি।
ম্যাচ শেষে নাপোলি কোচ জেনারো গাত্তুসো বলেন, ‘দিয়েগোর মতো কিংবদন্তির মৃত্যু নেই। সম্রাটকে হারিয়ে কাঁদছে আমাদের শহর। আশা করি, আমরা তাকে বড় কিছু উৎসর্গ করতে পারব। দিয়েগোর জন্য একটি শিরোপা জিততে চাই আমরা।’
প্রসঙ্গত, এই জয়ের পর ৪ ম্যাচে ৯ পয়েন্ট নিয়ে ‘এফ’ গ্রুপের শীর্ষে রয়েছে নাপোলি।