প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় এসে রেলকে প্রায় গলাটিপে হত্যা করতে গিয়েছিল। তারা রেললাইন সংকোচন শুরুর পাশপাশি রেলে অগ্নিসন্ত্রাসও করেছে। আমরা এসে এখন আবার তাকে জীবিত করেছি। রেলই এখন মানুষের সব থেকে ভরসা। এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি রেল সেই সুযোগটা মানুষকে করে দিচ্ছে যে, আমাদের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখবে বলে আমি মনে করি।
আজ রোববার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
গণভবন প্রান্তে এই সময় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি এবং বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্ত থেকে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সেলিম রেজাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী ও মজবুত করতে সরকার নৌ, রেল ও আকাশপথের সার্বিক উন্নয়নে এসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। সারা দেশে রেলযোগাযোগকে শক্তিশালী করতে সরকার কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের আরও প্ল্যান আছে যে, একেবারে ঢাকা থেকে বরিশাল, পটুয়াখালী হয়ে পায়রা বন্দর পর্যন্ত আমরা রেললাইন নিয়ে যাব। তারও সমীক্ষা আমরা শুরু করব এবং সেই উদ্যোগ আমরা নিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বলেছিলেন বাংলাদেশ হবে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড। অর্থাৎ বাংলাদেশ হবে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে একটা সেতুবন্ধন। আর সেই সেতুবন্ধন করতে গেলে আমাদেরকে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের সাথে সংযোগ করতে হবে। ট্রান্স এশিয়ান হাইওয়ে এবং ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে এই দুটোর সাথে যদি আমরা সম্পৃক্ত হতে পারি তাহলে বাংলাদেশের গুরুত্ব অনেক বাড়বে। ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে, কর্মসংস্থান বাড়বে। মানুষের যোগাযোগ বাড়বে। কাজেই আমাদের জন্য একটা বিরাট সুযোগ সৃষ্টি হবে।
জাতির পিতাকে হত্যার পর অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো রেলের উপরও আঘাত এসেছিল জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ওই সময় যারা অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করেছিল তারা দেশ ও দেশের মানুষের কথা চিন্তা না করে ক্ষমতাকে ভোগ করে নিজেদের সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলায় ব্যস্ত ছিল।
বঙ্গবন্ধু রেলসেতু নির্মাণে জাপানের সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী জাপানকে বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তাদের ভূমিকার কথা তুলে ধরার পাশাপাশি নিজের জাপান সফরের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, জাপান সরকার কিন্তু আমাদের সব সময় পাশে দাঁড়িয়েছে। সেজন্য আমি বিশেষভাবে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই জাপান সরকারকে।
যমুনায় রেলসেতু নির্মাণ করতে গিয়ে অনেক বাধার মুখোমুখি হতে হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজকে আমি সত্যিই খুব আনন্দিত, কারণ এক সময় এখানে সেতু করার ব্যাপারে আমাকে অনেক তর্ক করতে হয়েছে, অনেক দেনদরবার করতে হয়েছে। আজকে একটা আলাদা সেতু হয়ে যাচ্ছে, আমি মনে করি এতে আমাদের আর্থ-সামাজিক উন্নতি তো হবেই এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবেও আমরা আরও সমৃদ্ধ হতে পারব, যা আমাদের দেশকে ভবিষ্যতে আরও উন্নত করবে।
জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি সেটা করব। কারণ জাপানের মতো বন্ধু যাদের সাথে আছে তাদের আর চিন্তার কিছু নাই, সেটা আমি বলতে পারি।
রেল যোগাযোগের উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন সরকারপ্রধান। বলেন, যমুনায় আজকে আমরা যে রেলসেতু করতে যাচ্ছি এটা এবং শুধু তাই না আপনারা জানেন যে আমাদের আগে যেখানে তিস্তা রেলসেতু, সেখানে কিন্তু গাড়ি যাবার সেতু ছিল না। আমি সরকারে আসার পরই ওখানে গাড়ি যাবার জন্য আলাদা সেতু করে দেই। নইলে রেল এসে দাঁড়াত, রেললাইনের ওপর দিয়ে গাড়ি পার হতো। আমি বললাম এভাবে তো হতে পারে না। আমরা আলাদা সেতু করে দেই। ভৈরব নদীর উপর যে সেতু সেখানেও কিন্তু রেললাইনের ওপর দিয়েই গাড়ি পার হতো। আমরা সেখানে আবার নতুন সেতু করে দিয়েছি। কালুরঘাটেও নতুন রেলসেতু আলাদা এবং সড়কসেতু করা হচ্ছে।