ইরানের অন্যতম পরমাণুবিজ্ঞানী মোহসেন ফখরিজাদে হত্যায় ব্যবহার করা হয়েছে অত্যাধুনিক অস্ত্র। দূর নিয়ন্ত্রিত এই অস্ত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করেছে। তাকে হত্যার সময় ঘটনাস্থলে সন্ত্রাসীরা কেউ ছিল না বলে জানিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপতা কাউন্সিলের সচিব আলি শামখানি।
আলি শামখানি জানিয়েছেন, ফখরিজাদেকে হত্যার পরিকল্পনা আগে থেকেই জানতেন ইরানের গোয়েন্দারা। তারপরও সেটি ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। খবর বিবিসির
আলি শামখানি বলেন, ফখরিজাদের ওপর ঠিক কোন জায়গায় আক্রমণ চালানো হবে তাও তারা জানতেন, কিন্তু এ হত্যাকাণ্ডে ঘাতকরা একেবারে নতুন, পেশাদার এবং ইলেকট্রনিক পদ্ধতি ব্যবহার করেছে, তাই তা ঠেকানো যায়নি। ফখরিজাদের হত্যার পেছনে যারা ছিল তারা দূর নিয়ন্ত্রিত ইলেকট্রনিক যন্ত্র ব্যবহার করেছিল এবং ঘটনাস্থলে কেউ উপস্থিত ছিল না।
ইরান এর আগে বলেছিল, তেহরানের কাছে আবসার্দ শহরে একদল আক্রমণকারী ফখরিজাদের গাড়ির ওপর গুলিবর্ষণ করে এবং এরপর দেহরক্ষীদের সঙ্গে তাদের গুলি বিনিময় হয়।
কিন্তু এখন ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী সংশ্লিষ্ট ফার্স নিউজ এজেন্সি বলছে, ফখরিজাদেকে একটি দূরনিয়ন্ত্রিত মেশিনগান দিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল আলি শামখানি বলেছেন – ফখরিজাদেকে হত্যার ওই পরিকল্পনা সম্পর্কে ইরানি গোয়েন্দা বিভাগ জানত কিন্তু এতে যে অভিনব পন্থা ব্যবহার করা হয়েছে- সে কারণে তারা এটা ঠেকাতে পারেনি।
তিনি জানান, ‘ফখরিজাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করা হয়েছিল, কিন্তু শত্রুপক্ষ একেবারেই নতুন, পেশাদার এবং বিশেষ ধরণের পদ্ধতি ব্যবহার করেছে এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা সফল হয়েছে। এটা ছিল অত্যন্ত জটিল মিশন।’
শামখানি বলেন, হামলাকারীদের পরিচিতি সম্পর্কে কিছু সূত্র পাওয়া গেছে। নির্বাসিত ইরানী দল মোজাহেদীন ই খাল্ক-এর সদস্যরা নিশ্চিতভাবে জড়িত বলে তিনি ইঙ্গিত করেছেন এবং ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা ‘মোসাদ’-এর সংশ্লিষ্টতার কথাও তিনি বলেছেন।
প্রেস টিভি নামে ইংরেজি টিভি চ্যানেল একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে বলেছে, এই হত্যাকান্ডে ইসরায়েলি সামরিক শিল্পের চিহ্ন দেখা যাচ্ছে।
এর আগেই শুক্রবার যে আক্রমণে ফখরিজাদে নিহত হন- তার পেছনে ইসরায়েল জড়িত বলে দাবি করেন ইরানের নেতারা। ইসরায়েল এসব দাবির ব্যাপারে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি। তবে ইসরায়েল বিশ্বাস করতো যে ফখরিজাদে একটি গোপন পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি কর্মসূচির তত্ত্বাবধান করছিলেন।
যদিও ইরান সবসময়ই দাবি করে এসেছে যে তার পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ।
সোমবার তেহরানে মোহসেন ফখরিজাদের শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়। ইরানের জাতীয় পতাকায় মোড়া মৃতদেহ বহন করে সৈন্যরা। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী আমির হাতামি এক বক্তৃতায় বলেন, এই হত্যার প্রতিশোধ নেয়া হবে।