মানবপাচারে দু’টি এয়ারলাইন্স জড়িত: সিআইডি

নিজস্ব প্রতিবেদক

মানবপাচার বিষয়ে তথ্য জানাতে সংবাদ সম্মেলন করে সিআইডি

বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে মানবপাচারে দুটি এয়ারলাইন্সের কর্মীদের জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির নেতৃত্বে থাকা অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মাহবুবুর রহমান মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।

লিবিয়ায় মানবপাচার মামলার ছয় পলাতক আসামির সন্ধান চেয়ে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারির বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে মঙ্গলবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘মানবপাচারের তদন্তে নেমে এর সঙ্গে দুটি এয়ারলাইন্সের কর্মীদের সম্পৃক্ততা পেয়েছে সিআইডি।’

universel cardiac hospital

এয়ারলাইন্স দুটির নাম প্রকাশ না করে তিনি বলেন, এ দুটি বাংলাদেশের কোনো কোম্পানি নয়। তদন্তে দেখা যায়, এ দুটি এয়ারলাইন্স সিঙ্গেল টিকেটে লোক পাঠিয়েছেন, যা অন্যায়। কোনো সেমিনারে, চিকিৎসা নিতে; এমনকি ভ্রমণে গেলেও কখনো সিঙ্গেল টিকিটে যাওয়ার কথা নয়। ওই দুটি এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের নিজস্ব তদন্তেও বিষয়টি উঠে এসেছে।

এ বিষয়ে ইমিগ্রেশনের কোনো দায় ছিল কি-না জানতে চাইলে মাহবুবুর রহমান বলেন, ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের যাওয়া ও আসার দুটি টিকিট দেখানো হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে রিটার্ন টিকিটটি সঠিক নয়। এটা ওই এয়ারলাইন্সের লোকজনও জানে।

গত ২৮ মে লিবিয়ার মিজদাহ শহরে ২৬ বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করে একটি মানব পাচারকারী চক্র। ওই ঘটনায় চার আফ্রিকান অভিবাসীও নিহত হন। অবৈধভাবে ইউরোপ যাওয়ার জন্য লিবিয়ায় দুর্গম পথ পাড়ি দিচ্ছিলেন ৩৮ বাংলাদেশি। লিবিয়ার মিলিশিয়া বাহিনীর সঙ্গে যোগসাজশে পাচারকারীরা মিজদাহ শহরে ওই দলটিকে জিম্মি করে এবং আরও টাকা দাবি করে। এটা নিয়ে নির্যাতন শুরু করলে মূল পাচারকারীকে হত্যা করে আফ্রিকার কয়েক অভিবাসী। এরপর তার পরিবার ও বাকি পাচারকারীরা এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ৩০ জনকে হত্যা করে। এ সময় আরও ১১ জন আহত হন।

ওই ঘটনার পর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ২৬টি মামলা হয়েছে। মানব পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে দেড় শতাধিক লোককে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।

ওই দুই এয়ারলাইন্সের কয়েকজন কর্মকর্তাকে সিআইডি অফিসে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা জানিয়ে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মাহবুবুর রহমান বলেন, ২০১৯ সালের মে মাসের পর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ৩৮ জন ভিকটিমকে উচ্চবেতনের প্রলোভন দেখিয়ে লিবিয়ায় নেওয়া হয়। ইতালি ও স্পেনে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে তাদের নেওয়া হয় লিবিয়ার বেনগাজিতে। ত্রিপলীর মিজদায় বাংলাদেশি মানব পাচারকারীদের সহায়তায় লিবিয়ার মাফিয়া গ্রুপ তাদের অমানবিক নির্যাতন শুরু করে এবং মুক্তিপণ দাবি করে। এরপর ওই হত্যাকাণ্ড ঘটে।

লিবিয়ার ওই ঘটনায় দায়র হওয়া ২৬টি মামলার মধ্যে ২৫টির তদন্ত করছে সিআইডি। এসব মামলায় ২৯৯ জন আসামির ১৭১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৪২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে মাহবুবুর রহমান বলেন, এ পর্যন্ত তদন্তে ঘুরেফিরে ইন্টারপোলে দেওয়া ছয়জনের নাম এসেছে। তাদের মধ্যে তানজিমুল ইতালিতে অবস্থান করছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। বাকিদের অবস্থান জানতে পারিনি বলেই ইন্টারপোলের সহযোগিতা চেয়েছি।

তানজিমুল ছাড়া অপর পাঁচজন হলেন- ইকবাল জাফর, স্বপন, শাহাদাত হোসেন, নজরুল ইসলাম মোল্লা ও মিন্টু মিয়া। তাদের মধ্যে নজরুলের বাড়ি মাদারীপুরে, শাহাদাতের ঠিকানা ঢাকায়। বাকি চারজনই কিশোরগঞ্জের।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে