বিশেষ সুবিধা এবং ছাড় দেয়ার ফলে কমে এসেছে ব্যাংক খাতের ‘প্রধান সমস্যা’ খেলাপি ঋণের পরিমাণ। তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক হাজার ৭২৬ কোটি টাকা কমে ৯৪ হাজার ৪৪০ কোটি ৪৭ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ। যা জুন মাস শেষে ছিল ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ।
চলতি বছরের মার্চ থেকে দেশে শুরু হয় মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রকোপ। এর প্রভাবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেরও নানা খাতে এক প্রকার সংকট তৈরি হয়। এই সংকটকালে ঋণখেলাপিদের আরও সুবিধা দেয় সরকার। সরকারি সুবিধার ফলে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত কিস্তি না দিলেও খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে না।
২৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে জারি করা সেই নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের কোনো কিস্তি পরিশোধ না করলেও গ্রহিতা খেলাপি হিসেবে বিবেচিত হবেন না। এ সময়ের মধ্যে ঋণ/বিনিয়োগের ওপর কোনোরকম দণ্ড, সুদ বা অতিরিক্ত ফি (যে নামেই অভিহিত করা হোক না কেন) আরোপ করা যাবে না।
২০১৯ সালের ১৬ মে ঋণখেলাপিদের মোট ঋণের ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ৯ শতাংশ সুদে এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১০ বছরে ঋণ পরিশোধের সুযোগ দেয় সরকার। সরকারের দেয়া ‘বিশেষ’ ওই সুবিধার আওতায় জুন পর্যন্ত প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ ব্যাংকগুলো নবায়ন করে, যার অর্ধেকই করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো।
এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিয়েও গত বছর বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে, যার পরিমাণ ৭৫ থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে জুন পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ অবলোপন (রাইট অফ) করেছে ব্যাংকগুলো। অর্থাৎ এর মাধ্যমে খেলাপি ঋণের হিসাব থেকে এই অর্থ বাদ যাবে, যদিও তা সহসাই ফেরত আসছে না ব্যাংকগুলোর কাছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, গত তিন মাসে মোট খেলাপি ঋণ প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা কমে এসেছে, যা সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৪ হাজার ৪৪০ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত প্রায় ৭০০ জন ঋণগ্রহিতা আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে রেখেছেন। ফলে ঋণ খেলাপি হিসেবে তাদের নাম বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ তথ্য ব্যুরোতে (সিআইবি) উল্লেখ করা হচ্ছে না। এ রকম ঋণের পরিমাণ এখন ৮০ হাজার কোটি টাকার মতো।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৪ হাজার কোটি টাকার বেশি, সেটাই অনেক। এর মধ্যে তিন মাসে মাত্র দুই হাজার কোটি কমাটা খুব বেশি গুরুত্ব বহন করে না। তবে আরও কিছু সময় দেখে বোঝা যাবে অবস্থাটা কেমন দাঁড়াবে। কমে আসাটা ইতিবাচক। হয়তো নতুন ঋণে শর্ত যোগ হওয়ায় বড় খেলাপিরা কমিয়ে দিচ্ছে নতুনটি পাওয়ার আশায়। আবার ব্যাংকারদের কড়াকড়ি আরোপও কমে আসার আরেকটি কারণ হতে পারে।’
সাবেক এই গভর্নর আরও বলেন, ‘এখন খেলাপিদের অনেকেই ঋণ পুনঃতফসিলের মাধ্যমে নতুন করে প্রণোদনার ঋণ নিতে চাচ্ছেন। ফলে ডাউন পেমেন্ট হিসেবে কিছু টাকা আদায় হয়েছে, এটা খুব বেশি বলা যাবে না। তাছাড়া চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকের ঋণ আদায়ে শিথিলতা জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ সময় শেষে মোট খেলাপি বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে।’