ভুয়া সনদ ব্যবহারের মাধ্যমে এমবিবিএস ডাক্তার হিসেবে নিবন্ধন সনদ গ্রহণের অভিযোগে বাংলাদেশ মেডিক্যাল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা, রেজিস্ট্রারসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।
আজ বুধবার দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মোছা. সেলিনা আখতার মনি বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন সংস্থাটির পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য।
ভুয়া সনদ গ্রহণের এ মামলায যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন- সাতক্ষীরার তালা থানার সুদেব সেন, টাঙ্গাইল কালিহাতীর তন্ময় আহমেদ, ভোলা দৌলত খানের মো. মাহমুদুল হাসান, চাঁদপুর মতলব (উত্তর) এর মো. মোক্তার হোসাইন, ঢাকা সাভার এর মো. আসাদ উল্লাহ, গাজীপুর কালিয়াকৈরের মো. কাউসার, নারায়ণগঞ্জ রূপগঞ্জের রহমত আলী, বাগেরহাট সদর এর শেখ আতিয়ার রহমান, ফেনী দাগন ভূইয়ার মো. সাইফুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ সদর এর আসলাম হোসেন কুমিল্লা বড়ুরা থানার মো. ইমান আলী ও মোহাম্মদ মাসুদ পারভেজ, বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল এর রেজিস্ট্রার মো. জাহিদুল হক বসুনিয়া ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজসে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে প্রতারণা, জালজালিয়াতি ও মিথ্যা তথ্য প্রদান করে ভুয়া এমবিবিএস সনদ ব্যবহারের মাধ্যমে এমবিবিএস ডাক্তার হিসেবে রেজিস্ট্রেশন সনদ গ্রহণ করে ও উক্ত সনদ ব্যবহারের মাধ্যমে দণ্ডবিধির ৪২০/৪৬৫/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ এবং ১৯৪৭ সনের ২ নং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারার শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। যে কারণে এই ১২ চিকিৎসকসহ দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
জানা যায়, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বাংলাদেশি ছাত্র চীনের তাইশান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিবিএস পাশ করেছেন বলে জানান। তারা চীনের তাঈশান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুয়া এমবিবিএস সনদ ব্যবহার করে বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল কর্তৃক গৃহিত (চিকিতসক নিবন্ধন) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন।
মামলার বিবরণে বলা হয়, অভিযুক্ত আসামিরা বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল কর্তৃক অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় অংশ্রগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হয়েছেন মর্মে চিকিৎসক হিসেবে নিবন্ধন নম্বর গ্রহণ করে দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে ইন্টার্ন অনুশীলন করেন এবং বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত আছেন। কিন্তু রেকর্ডপত্র যাচাইকালে দেখা যায় যে, তাদের এমবিবিএস সার্টিফিকেটগুলো ভুয়া।
দুদক জানায়, ভুয়া এমবিবিএস সনদধারী চিকিৎসকদের সনদপত্রগুলো যাচাই করতে এগুলোর ছায়ালিপি কমিশন থেকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাইশান মেডিকেল বিশবিদ্যালয়ে পাঠানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি এই ১২ ছাত্রদের এসব সনদ ভুয়া বলেও জানান। চীনের বেইজিংস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে সনদপত্রগুলো যাচাই করে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এর ইস্ট এশিয়া এন্ড প্যাসিফিক সেকশনে গত বছরের ২১ জানুয়ারি তারিখে রেকর্ডপত্র পাঠায়। পরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এসব রেকর্ড পাঠায় দুর্নীতি দমন কমিশনে।
অন্যদিকে মামলার অভিযোগে আরও বলায় হয়, ওই ১২ ব্যক্তির এমবিবিএস পাশের এসব সনদের স্বাক্ষরগুলিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। উক্ত ১২ জন ভুয়া এমবিবিএস সনদধারী কখনও চীনের তাইশান মেডিকেল বিশবিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেননি। কেউ কেউ কেবলমাত্র ট্যুরিস্ট ভিসায় চীনে গিয়েছিলেন, সে দেশে থাকার স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ নেই। তাইশান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও এমন জাল-জালিয়াতির বিষয়টি নিন্দা জানান এবং দোষীদের শাস্তি দাবি করেন।
সার্টিফিকেট যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোনপ্রকার সতর্কতা বা নিয়ম-নীতির প্রতিপালন না করায় বিএমএন্ডডিসি প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. বোরহান উদ্দিন যিনি রেকর্ড উপস্থাপন করেন। একইসঙ্গে রেজিস্ট্রার মো. জাহিদুল হক বসুনিয়া মূল রেকর্ডপত্র দেখে ভুয়া চিকিসকদের সনদ নিবন্ধন পরীক্ষায় সুযোগ দেওয়া ও ছায়ালিপিগুলি সত্যায়িত করায় এই ঘটনাটি জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সৃষ্ট ডকুমেন্টসগুলো সম্পর্কে তারা জ্ঞাত ছিলেন বলে বলা হয়। যে কারণে এই ১২ চিকিৎসকের সঙ্গে এই দুজনের বিরুদ্ধেও মামলা করা হয়।