জাহাজে ভাসানচরের পথে রোহিঙ্গারা

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

জাহাজে ভাসানচরের পথে রোহিঙ্গারা
ফাইল ছবি

জাহাজে চড়ে ভাসানচরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছে রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটি। শুক্রবার সকাল সোয়া ১০টার পর চট্টগ্রামের বোট ক্লাব, আরআরবি ও কোস্টগার্ডের জেটি থেকে জাহাজগুলো ছেড়ে যায় বলে জানিয়েছেন নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এমকেজেড শামীম।

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্প থেকে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নেয়ার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে প্রথম দলটি যাত্রা করল। এ দলে নারী-পুরুষ-শিশু মিলিয়ে ১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গা রয়েছেন।

বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ছয়টি ও সেনাবাহিনীর একটি জাহাজে এই রোহিঙ্গারা যাত্রা করেছেন। দুপুরের দিকে তাদের ভাসানচরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

রোহিঙ্গাদের এ দলটিকে ভাসানচরে স্থানান্তরের জন্য বুধবার রাতেই উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প সংলগ্ন ঘুমধুম ট্রানজিট ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উখিয়া কলেজ মাঠের অস্থায়ী ট্রানজিট ক্যাম্প থেকে প্রথম দফায় ২৫টি বাসে রোহিঙ্গাদের নিয়ে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা নেয়া হয়।

পরে শুক্রবার সকালে জাহাজে ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা হন রোহিঙ্গারা। আরও সাড়ে ৩ হাজার রোহিঙ্গাকে আজ পতেঙ্গা হয়ে ভাসানচরে পাঠানোর হবে। ১ সপ্তাহের মধ্যে এ স্থানান্তর কাজ সম্পন্ন হবে বলে জানা গেছে।

সমাজ কল্যাণ উন্নয়ন সংস্থার চেয়ারপারসন জেসমিন প্রেমা জানান, শুধু আগ্রহী রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নেয়ার কাজ করছে সরকার ও ২২টি উন্নয়ন সংস্থা।

এসব রোহিঙ্গাকে জাহাজে ওঠার পূর্বে বিভিন্ন ডাটা এন্ট্রি সাপেক্ষে বরাদ্দকৃত আশ্রয়ণের টোকেন ও চাবি হস্তান্তর করা হয়।

তিনি আরও জানান, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য আধুনিক বাসস্থান ছাড়াও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, ক্লিনিক ও খেলার মাঠ গড়ে তোলা হয়েছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য সেখানে মহিষ, ভেড়া, হাঁস, কবুতর পালন করা হচ্ছে। আবাদ করা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি।

সেখানে পরীক্ষামূলকভাবে ধান চাষও করা হচ্ছে। প্রকল্পটিতে যেন ১ লাখ ১ হাজার ৩৬০ শরণার্থী বসবাস করতে পারেন সে লক্ষ্যে গুচ্ছগ্রাম নির্মাণ করা হয়েছে। ১২০টি গুচ্ছগ্রামে ঘরের সংখ্যা ১ হাজার ৪৪০টি।

এদিকে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর কার্যক্রম বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট পরবর্তী মিয়ানমারে নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয়ে এদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয় ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। এসব রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন।

ইতিপূর্বে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর কার্যক্রম ঘিরে ভাসানচর দ্বীপ ঘুরে আসে ২২টি এনজিওর প্রতিনিধি দল। সরকারের পরিকল্পিত আয়োজনে সন্তোষ প্রকাশ করেন তারা।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আন্তর্জাতিক একটি এনজিওর কর্মকর্তা বলেন, বারবার অভিযোগ উঠেছে এনজিওদের প্ররোচনায় রোহিঙ্গারা ভাসানচর যাচ্ছে না। তাই এবারের যাত্রায় কোনো এনজিও রোহিঙ্গাদের বিষয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না। তবে বেশ কিছু এনজিও সেখানে কাজ শুরু করেছে বলে জানা গেছে।

উখিয়া ও টেকনাফের পাহাড়ে ঠাসাঠাসির বসবাস ছেড়ে ভাসানচরে যেতে ৩ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা রাজি হয়েছেন। তবে ৪ থেকে ৫ হাজার রোহিঙ্গা আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে গণমাধ্যমে জানিয়েছিলেন শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ রেজওয়ান হায়াত।

ভাসানচরে যেতে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের অনেকে জানান, তারা ভাসানচর পরিদর্শন শেষে ফিরে আসা রোহিঙ্গা নেতাদের মুখে সেখানকার বর্ণনা শুনে সেখানে যেতে রাজি হয়েছেন। তাদের মতে পাহাড়ের ঘিঞ্জি বস্তিতে বসবাসের চেয়ে ভাসানচর অনেক নিরাপদ হবে। এছাড়া ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের বসবাসের জন্য নির্মিত অবকাঠামো অনেক বেশি আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত বলে মনে হয়েছে তাদের।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে