কমনওয়েলথের মহাসচিব প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড বাংলাদেশের বিগত এক দশকের ‘অসামান্য অর্জনের’ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করে এই উন্নয়নের জন্য তাকে সম্পূর্ণ কৃতিত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সরকারের এই অসামান্য অর্জনের পুরো কৃতিত্বই তার একার।
গত সপ্তাহে লন্ডনে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশন ও কমনওয়েথ সচিবালয়ের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত একটি উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা সভার পর সরকারি বার্তা সংস্থা বাসসকে দেয়া এক এক্সক্লুসিভ ভার্চুয়াল সাক্ষাৎকারে কমনওয়েলথ মহাসচিব এসব কথা বলেন।
প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড বলেন, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে তার সরকার যে অসামান্য অর্জন লাভ করেছে তার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব এককভাবে তার।
কমনওয়েলথের শীর্ষ এই কর্মকর্তা বলেন, মিয়ানমারে নিপীড়ন থেকে বাঁচতে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা তাদের জন্মভূমি ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এই বিপুল সংখ্যক শরণার্থীর বোঝা সত্ত্বেও বিশ্বব্যাপী চলমান ভয়াবহ মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশ যেভাবে প্রবৃদ্ধি অজর্ন নিশ্চিত করেছে, তা থেকে বর্তমান বিশ্বের অনেক নেতারই শিক্ষনীয় রয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব থেকে।
কমনওয়েলথ মহাসচিব বলেন, বিশ্বের অন্যতম প্রাকৃতিক ঝুঁকিপূর্ণ উন্নয়নশীল দেশের নেতা হিসেবে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব থেকে আমরা এই নির্দেশনাই পাই যে, মানবতার বিনিময়ে উন্নয়ন অর্থহীন আর এই ধরনের দিকনির্দেশনাই প্রকৃত নেতৃত্বের মূল চাবিকাঠি হওয়া উচিত।
কমনওয়েলথের ষষ্ঠ মহাসচিব স্কটল্যান্ড আরও বলেন, বর্তমান বিশ্বের বহু নেতা শেখ হাসিনার এই দৃষ্টান্ত থেকে শিক্ষা নিতে পারেন।
এই ভার্চুয়াল আলোচনায় বিভিন্ন ইস্যুর মধ্যে কমনওয়েলথের সদস্যদের সাথে সংস্থাটির গভীরতম সম্পর্ক, বিশেষত কোভিড-১৯ মোকাবেলায় বাংলাদেশকে সহায়তা নিয়েও আলোচনা হয়।
কমনওয়েলথ ৫৪টি স্বাধীন দেশের সমন্বয়ে একটি ভলেন্টারি সংস্থা। এদের সকলেই এক সময় ব্রিটিশ সামাজ্যভুক্ত ছিল। কমনওয়েথভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিভাবে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ উভয়ই রয়েছে। সদস্য দেশগুলোতে ২.৪ বিলিয়ন লোকের বাস। কমনওয়েলথের সদস্যরা সমৃদ্ধি, গণতন্ত্র ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় পরস্পরকে সহযোগিতা করে থাকে। পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায় এর সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করতে গিয়ে কমনওয়েলথের এই শীর্ষ নির্বাহী রোহিঙ্গা সংকট, সবার মাঝে সমানভাবে কোভিড-১৯ সম্ভাব্য ভ্যাকসিন পৌঁছে দেয়ার পাশাপাশি ভয়াবহ মহামারির ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে যে বিরূপ প্রভাবে পড়েছে, তা থেকে উত্তরণের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। শেখ হাসিনা মহামারির মধ্যেই দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সক্ষম হয়েছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
কমনওয়েলথ সচিবালয়ের প্রধান কমনওয়েলথ মহাসচিব। এটি কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান। কমনওয়েথ সচিবালয় ১৯৬৫ সালে কমনওয়েলথ অব নেশনস প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে কাজ করে যাচ্ছে।
স্কটল্যান্ড বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের দূরদর্শী পরিকল্পনা, কার্যক্রম ও কঠোর পরিশ্রমের ফলে বাংলাদেশ ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। অনেক উন্নয়নশীল দেশই নেতিবাচক প্রবৃদ্ধিতে রয়েছে।
তিনি সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেন, আমি এই সাফল্য অর্জনের জন্য শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারকে কৃতিত্ব দিচ্ছি।
কমনওয়েলথ মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশে অর্থনীতি ও উন্নয়নের লক্ষ্যে সফলভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে এবং ২০২৪ সালে উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশে উন্নীত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, শুধু গত দশকেই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ১৮৮ শতাংশ বেড়েছে। গড়ে এই প্রবৃদ্ধির হার ছিল বছরে ৬ থেকে ৭ শতাংশ। দেশটির তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত শতভাগ আইসিটি পৌঁছে দেয়াই এই অর্থনৈতিক অর্জনের অন্যতম প্রধান কারণ।
কমনওয়েলথ মহাসচিব জানান যে, শেখ হাসিনা বাংলাদেশের স্থপতি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যোগ্য কন্যা ও তার নেতৃত্বের উপযুক্ত উত্তরসূরি। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি বাংলাদেশের সাফল্যের বীজ শেখ হাসিনা তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছ থেকে পেয়েছিলেন। তিনি একটি স্বাধীন ও অর্থনৈতিকভাবে উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন।’
প্যাট্রিসিয়া বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধু ধ্বংসস্তুপ থেকে একটি নতুন জাতি গঠনে অনেক কঠিন পরিস্থিতি ও বাধার সম্মুখীন হয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘২০০২ সালে বিবিসি আয়োজিত সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জরিপে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে সর্বাধিক ভোট পড়াটা কোন আকস্মিক দুর্ঘটনা নয়।’ কমনওয়েথের এই শীর্ষ নির্বাহী বলেন, বঙ্গবন্ধু একটি আধুনিক বাংলাদেশ রাষ্ট্র গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে নিয়ে গিয়েছিলেন। তার আমলেই ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ কমনওয়েলথভুক্ত হয়।
ডোমিনিকান নাগরিক স্কটল্যান্ড ক্যারিবিয়ান দ্বীপটির পক্ষ থেকে দ্বিতীয় মহাসচিব ও এই পদে প্রথম নারী। সূত্র: বাসস