‘শৃঙ্খলা হচ্ছে সৈনিকের মূল পরিচিতি’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি : সংগৃহিত

বিজিবির সার্বিক উন্নয়নে বর্তমান সরকারের বাস্তবায়িত বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শৃঙ্খলা হচ্ছে সৈনিকের মূল পরিচিতি। আদেশ ও কর্তব্য পালনে যে কখনো পিছপা হয় না সেই প্রকৃত সৈনিক।

আজ শনিবার চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজের (বিজিটিসিঅ্যান্ডসি) বীরউত্তম মজিবুর রহমান প্যারেড গ্রাউন্ডে বিজিবির ৯৫তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজে এসব কথা বলেন তিনি।

universel cardiac hospital

গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করে কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় সালাম প্রদানের মধ্য দিয়ে নবীন সৈনিককদের শপথগ্রহণ ও কুচকাওয়াজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সততা, বুদ্ধিমত্তা, নির্ভরযোগ্যতা, আনুগত্য, তেজ ও উদ্দীপনা একটি বাহিনীর শৃঙ্খলা ও পেশাগত দক্ষতার মাপকাঠি। নবীন সৈনিকদের মধ্যে এসব গুণাবলির প্রতিফলন সকলকে অনুপ্রাণিত ও মুগ্ধ করেছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের আদর্শে উজ্জীবিত হতে এবং বিজিবির মূলনীতির প্রতি নবীন সৈনিকদের গুরুত্ব আরোপের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ঐতিহাসিকভাবে আজকের দিনটি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আজ থেকে ৪৬ বছর আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিডিআরের তৃতীয় রিক্রুট ব্যাচের সমাপনী কুচকাওয়াজ ও অভিবাধন গ্রহণ করেছিলেন।

কালের পরিক্রমায় মুজিব জন্মশতবর্ষে একইদিন ও ক্ষণে ৯৫তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ করতে পেরে প্রধানমন্ত্রী নিজেকে গর্বিত ও ধন্য মনে করেন। তিনি বিজিবির নবীন সৈনিকদের প্রদর্শিত কুচকাওয়াজের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে তাদের দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের নিদর্শন তুলে ধরার জন্য সংশ্লিষ্ট সকল প্রশিক্ষক ও কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানান।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালের ৫ ডিসেম্বর তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) সদরদফতরের বীরউত্তম আনোয়ার হোসেন প্যারেড গ্রাউন্ডে বিডিআরের তৃতীয় ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন। নবীন সৈনিকদের উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আজকে যারা নতুন বিডিআরে যোগদান করে শপথগ্রহণ করলা তাদের কাছে আমার কথা রইল- ঈমানের সাথে কাজ করো, সৎপথে থেকো, দেশকে ভালবাসো, ইনশাআল্লাহ বাংলার এই দুর্দিন বেশি দিন থাকবে না। সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা বাংলা আমার সোনার বাংলা হবে। এই বিশ্বাস আমার আছে।

দীর্ঘদিন পর মুজিববর্ষের ওই একই তারিখ অর্থাৎ ৫ ডিসেম্বরের এই শুভক্ষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করে ৯৫তম রিক্রুট ব্যাচের নবীন সৈনিকদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ করলেন।

অনুষ্ঠানে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম, বিজিবিএম (বার), এনডিসি, পিএসসি স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার মহান দায়িত্ব পালনে পুরুষ সৈনিকদের পাশাপাশি নবীন নারী সৈনিকদের কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য উপদেশ দেন। কুচকাওয়াজের প্যারেড কমান্ডার হিসেবে মনোজ্ঞ এ প্যারেড পরিচালনা করেন ৯৫তম রিক্রুট ব্যাচের অফিসার ইনচার্জ মেজর কাজী মনজুরুল ইসলাম ও প্যারেড অ্যাডজুটেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সহকারী পরিচালক বেগ আব্দুল্লাহ আল মাসুম।

এ সময় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সেনাবাহিনী ও বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত থেকে এ সমাপনী কুচকাওয়াজ উপভোগ করেন।

উল্লেখ্য, গত ১৪ জুন বর্ডার গার্ড ট্র্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজে ৯৫তম রিক্রুট ব্যাচের মৌলিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়। বিজিটিসিঅ্যান্ডসিতে প্রশিক্ষণ নেয়া মোট ৭৯১ জন রিক্রুটের মধ্যে ৫৯০ জন পুরুষ ও ২০১ জন নারী। বিজিটিসিঅ্যান্ডসি ছাড়াও আরও ছয়টি প্রশিক্ষণ ভেন্যুতে ৯৫তম রিক্রুট ব্যাচের এক হাজার ৭৩৩ জন রিক্রুটসহ সর্বমোট দুই হাজার ৫২৪ জন রিক্রুট মৌলিক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন। দীর্ঘ ২৪ সপ্তাহের অত্যন্ত কঠোর ও কষ্টসাধ্য এ প্রশিক্ষণ সফলভাবে শেষ করে আনুষ্ঠানিক শপথগ্রহণ ও সমাপনী কুচকাওয়াজের মাধ্যমে তাদের সৈনিক জীবনের শুভসূচনা হলো।

৯৫তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ শেষে প্রধানমন্ত্রী নবীন সৈনিকদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন উপদেশ ও দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ প্রদান করেন। ভাষণের শুরুতে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। একইসঙ্গে তিনি মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী বিজিবির ৮১৭ জন অকুতোভয় বীর বিশেষ করে বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্সনায়েক মুন্সি আব্দুর রউফ, বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্সনায়েক নুর মোহাম্মদ শেখ এবং মুক্তিযুদ্ধে অনন্য অবদানের জন্য এ বাহিনীর আটজন বীরউত্তম, ৩২ জন বীরবিক্রম ও ৭৭ জন বীরপ্রতীককে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী নবীন সৈনিকদের নতুন জীবনে পদার্পনের শুভলগ্নে তাদের স্বাগত জানান। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মহাপরিচালক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান শেষে ৯৫তম রিক্রুট ব্যাচের সেরা চৌকস রিক্রুট হিসেবে প্রথমস্থান অধিকারী রিক্রুট (জিডি) মো. খোকন মোল্লার হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে