ভাস্কর্য ইস্যুতে আলেমদের ৫ দফা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভাস্কর্য

রাজধানী ঢাকার ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণ ইস্যুতে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিরসনে ৫টি প্রস্তাব দিয়েছেন কওমি শীর্ষ আলেমরা। এসব সিদ্ধান্ত নিয়ে তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান। তারা উদ্ভূত পরিস্থিতির গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ সমাধান চান। সার্বিক বিষয় নিয়ে তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার অনুমতি চান।

আজ শনিবার দুপুরে ভাস্কর্য ইস্যুতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে আলেমরা এসব প্রস্তাব দেন।

ওলামাদের ৫ দফা প্রস্তাবনা হলো-

১. মানবমূর্তি ও ভাস্কর্য যে কোনো উদ্দেশে তৈরি করা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। কোনো মহৎ ব্যক্তি ও নেতাকে মূর্তি বা ভাস্কর্য স্থাপন করে শ্রদ্ধা জানানোও শরিয়তসম্মত নয়। এতে মুসলিম মৃত ব্যক্তির আত্মার কষ্ট হয়। তার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন ও স্মৃতিকে জাগ্রত রাখতে মূর্তি বা ভাস্কর্য নির্মাণ না করে শতকরা ৯২ ভাগ মানুষের বিশ্বাস ও চেতনার আলােকে কোরআন-সুন্নাহ সমর্থিত কোনো উত্তম বিকল্প সন্ধান করাই যুক্তিযুক্ত।

২. তারা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবমাননা, বিষােদগার, ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন ইত্যাদির তীব্র নিন্দা জানান। বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি অবমাননাকর আচরণের ওপর কঠোর নজরদারি এবং দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে এসব অপকর্ম বন্ধ করার দাবি জানান।

৩. বিগত সময়ে দীনি আন্দোলনে গ্রেফতারদের নিঃশর্ত মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। এ সংক্রান্ত বিষয়ে সারাদেশের আলেম-ওলামা, ইমাম-খতিব ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ওপর সব ধরনের হয়রানি বন্ধ করতে হবে। ধোলাইপাড় চত্বরের পাশে ক্ষতিগ্রস্ত পুনর্নিমিত মসজিদ নামাজের জন্য অবিলম্বে উন্মুক্ত করে দিতে হবে।

৪. সম্প্রতি শব্দদূষণ ও জনদুর্ভোগের অজুহাতে দীনি মাহফিলে লাউড স্পিকার ব্যবহারে প্রশাসনিক জটিলতা সৃষ্টির তৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। অথচ সাধারণ শব্দদূষণ, উচ্চস্বরে গান-বাজনার বিষয়ে কোনাে প্রশাসনিক উদ্যোগ নেই বললেই চলে। কেবল ওয়াজ মাহফিল নিয়ে শব্দদূষণের অজুহাতে বিশেষ নির্দেশনা অনভিপ্রেত। অতএব জনগণকে কল্যাণের পথে অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্যে সব দীনি মাহফিল যথানিয়মে অনুষ্ঠানের অবাধ সুযোগ দেয়া হােক।

৫. যেসব বিষয় শরিয়তে নিষিদ্ধ ও হারাম, সেসব বিষয়ে কোরআন-সুন্নাহর আলােকে সঠিক বক্তব্য তুলে ধরা আলেমদের দায়িত্ব। অথচ একশ্রেণির মানুষ আলেমদের বিরুদ্ধে বিষােদগার ও দায়িত্বহীন আচরণ করছে। কেউ কেউ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনাশের উসকনি দিচ্ছে। এসবের খোঁজখবর রাখা এবং শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করা সরকার ও প্রশাসনের দায়িত্ব। উসকানিমূলক বক্তব্য, অবমাননাকর মন্তব্য, উগ্র স্লোগান, মিছিল-মিটিং সমাজে অস্থিরতা বৃদ্ধি করবে। ওলামায়ে কেরাম কঠোর ধৈর্য সংযম অবলম্বন করা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়ার আশঙ্কা প্রবল। সরকারকে এসবের উপযুক্ত প্রতিবিধান করতে হবে। অন্যথায় দেশব্যাপী উদ্ভূত বিশৃঙ্খলা ও অস্থিরতার দায় সরকার এড়িয়ে যেতে পারবে না। বিশেষ করে ইসলাম, দ্বীন ও বাংলাদেশবিরােধী দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ও অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপ রােধ করা সরকারের অন্যতম দায়িত্ব।

বৈঠকে কওমি মাদরাসার শিক্ষা বোর্ড বেফাকের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও আল হাইয়াতুল উলিয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান সভাপতিত্ব করেন। তাদের সম্মিলিত মতামতের ভিত্তিতে পাঁচ দফা প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রস্তাবসমূহ স্মারকলিপি আকারে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে।

বৈঠক শেষে বেফাকের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, সারাদেশের খ্যাতনাম আলেমরা এ বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের (একাংশ) সভাপতি মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, আব্দুল হালীম বুখারী, মুফতি রুহুল আমীন, ইসলামী আন্দোলনের নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম, মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদি, মাওলানা আব্দুল হামিদ (মধুপুর পীর), মাওলানা আব্দুল কুদুস, মুফতি মনসুরুল হক, মাওলানা সাজিদুর রহমান, মাওলানা মুসলেহ উদ্দীন রাজু, বেফাক মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী, মুফতি আরশাদ রহমানী, মুফতি মুহাম্মাদ আলী, মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ প্রমুখ।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে