সংসদ সদস্য নিক্সন চৌধুরী কাণ্ডে আলোচিত ফরিদপুরের সেই চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদের উপনির্বাচন বাতিল করা হয়েছে। গত ১০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচন এমপি নিক্সন চৌধুরীর কারণে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছিল।
আজ রোববার অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করে ওই উপজেলা নির্বাচন বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
ওই সময় নারী ইউএনওর সঙ্গে এমপি নিক্সনের দুর্ব্যবহারের মোবাইল কলের অডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এছাড়া নিক্সন চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তিনি প্রকাশ্য জনসভায় ম্যাজিস্ট্রেটদের হাত-পা ভেঙে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন।
সেই নির্বাচনে ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মুজিবর রহমান চৌধুরী (নিক্সন চৌধুরী) চেয়ারম্যান প্রার্থী কাওসারের পক্ষে প্রভাব খাটান বলে অভিযোগ ওঠে। নির্বাচনে ওই প্রার্থীই বিজয়ী হয়।
স্থানীয় প্রশাসনকে হুমকি-ধমকি দেওয়ার অভিযোগও ওঠে এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে, যা প্রশাসনে অসন্তোষের জন্ম দেয়। এরপর নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন, দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে গালি ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগে নিক্সনের বিরুদ্ধে মামলা করে নির্বাচন কমিশন।
ইসি উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, অনিয়ম তদন্তে তিন সদস্যের একটি তদন্ত গঠন করা হয়েছিল। কমিটি তদন্ত শেষে ইসির কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। অনিয়ম হওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় উপজেলা নির্বাচন বিধিমালা অনুযায়ী চরভদ্রাসন উপজেলার চেয়ারম্যান পদের উপনির্বাচন বাতিল করা হল।
নতুন নির্বাচনের তারিখ পরবর্তীতে ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয় প্রজ্ঞাপনে।
চরভদ্রাসনের উপজেলা চেয়ারম্যানের মৃত্যুতে গত ১০ অক্টোবর সেখানে উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ হয়েছিল। এরপর ঘোষিত ফলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. কাওসার হোসেনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছিল। তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে ১৬ হাজার ৫২৮ ভোট পেয়েছিলেন।
তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কে এম ওবায়দুল বারী পেয়েছিলেন ৫ হাজার ৩৪৬ ভোট।
নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে গত ১৫ অক্টোবর ফরিদপুর-৪ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মুজিবর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সনের বিরুদ্ধে মামলা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ১০ অক্টোবর চরভদ্রাসন উপজেলার উপনির্বাচনে কেন্দ্রভিত্তিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিযুক্ত করায় জেলা প্রশাসক অতুল সরকারকে ফোন করে কৈফিয়ত দাবি করেন এমপি নিক্সন চৌধুরী। তার সমর্থিত প্রার্থী পরাজিত হলে মহাসড়ক অবরোধ করার ‘হুমকি’ দেন এবং ‘অশোভন আচরণ’ করেন। একইসঙ্গে নির্বাচনের দিন একটি ভোট কেন্দ্রের বুথের সামনে জাল ভোট দেয়া ও ধূমপান করার সময় একজন পোলিং এজেন্টকে আটকের পর চরভদ্রাসনের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ভাঙ্গার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও কর্তব্যরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে এমপি নিক্সন চৌধুরী ‘অত্যন্ত অশালীন ভাষায় গালাগাল, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হুমকি’ দেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।
অবশ্য ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এমপি নিক্সন চৌধুরী নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। তার দাবি, হুমকি দেয়ার যে অডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে তা ‘সুপার এডিটেড’।
এদিকে মামলার পর হাইকোর্ট থেকে ৮ সপ্তাহের আগাম জামিন নেন তিনি। পরে গত ১৪ নভেম্বর যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য মনোনিত হন এমপি নিক্সন চৌধুরী।