কুয়াশার সঙ্গে হালকা বাতাসে বাড়ছে শীতের কাঁপুনি

নিজস্ব প্রতিবেদক

কুয়াশাঘেরা তীব্র শীতের সকাল
ফাইল ছবি

দুপুরের পর থেকে কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে মাঠঘাট। সন্ধ্যার পরই রাতভর বৃষ্টির মতো ঝরছে শিশির। ভোরবেলা থেকে চারিদিকে ঘেরা ঘন কুয়াশায়। সকালে মিলছে না সূর্যের দেখা। দুপুরের দিকে কুয়াশা ভেদ করে সূর্য উঁকি দিলেও তার স্থায়িত্ব কিছু সময়ের জন্য। তাতে নেই উত্তাপও। কুয়াশার সঙ্গে হালকা বাতাস যোগ হওয়ায় অনেকটা বিপাকে পড়েছেন দেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষ।

গত দুই দিন ধরেই উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে এমন দাপট দেখাচ্ছে কুয়াশা। হালকা বাতাসের পাশাপাশি ঘন কুয়াশায় ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন মানুষ। ঘন কুয়াশার কারণে ঘর থেকে বের হয়ে নিজের উপস্থিতি নিয়েই যেন সন্দেহ জাগছে মানুষের। যাকেই পাচ্ছে অক্টোপাসের মতো জাপটে ধরছে সাদা এই জিনিসটি। তারপরেও ঘন সাদা চাদর সরিয়ে কাজে যেতে হচ্ছে শ্রমজীবী মানুষকে।

কুয়াশার কারণে গাড়ি চলাচলে তো বটেই, পায়ে হেঁটেও পথ চলতে হচ্ছে সাবধানে। সড়কে গাড়ি চলছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। তাও খুব ধীরে। চারপাশের সবকিছু ঢাকা পড়েছে সাদা পর্দায়। অন্যদিকে শীতের তীব্রতা কাঁপন ধরিয়েছে মানুষের হাড়ে।

প্রতিবারই সবার আগে শীতের আগমন ঘটে হিমালয় কন্যা খ্যাত ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ে। বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই শীত পড়েছে উত্তরের জেলা দুটিতে। গত দুইদিন থেকে এই শীতের পারদ আরও নিচে নেমেছে।

এছাড়া রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, গাইবান্ধাসহ উত্তরের সব জেলাতেই শীত অনেকটা জেঁকে বসেছে।

সোমবার সকাল সাড়ে নয়টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত উত্তরের জেলা রংপুরে সূর্যের দেখা পাওয়া যায়নি। কুয়াশায় ঢেকে আছে মাঠঘাট। ঘন কুয়াশায় কারণে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে জনজীবনে।

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার কুমারগাড়ি গ্রামের বাসিন্দা সুলতান মাহমুদ বলেন, শীতে ঘর থেকে বের হওয়া কষ্টকর হয়ে গেছে। কুয়াশার কারণে চার হাত দূরে কি আছে তা বোঝা যাচ্ছে না। হাঁটতে গেলেও সাবধানে পা ফেলতে হচ্ছে। দুপুরের দিকে সূর্য দেখা গেলেও তা বেশি সময়ের জন্য থাকছে না।

শীত বেড়েছে উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামেও। দুই দিন ধরে সন্ধ্যা নামলেই ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়ে জনপদ। ফলে প্রচণ্ড শীতে চরম বিপাকে পড়ছে মানুষ। বিশেষ করে অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এদিকে হাসপাতালে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা আস্তে আস্তে বাড়ছে। শীতের প্রভাবে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ও সড়কের পাশে ফুটপাতে পুরনো গরম কাপড় বিক্রি হচ্ছে।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার মোগলবাসা, উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের দুর্গম চরাঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ ঘন কুয়াশা ও শীতের কারণে সকালে কাজে বেরোতে পারছেন না।

ধরলা নদীর তীরবর্তী মোগলবাসা ইউনিয়নের চর সিতাইঝার গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, কুয়াশা আরও শীতের কারণে ঘরের বাইরে যাওয়া যায় না।

হিমালয়ের একেবারে কোলে থাকা ঠাকুরগাঁও সদরের রুহিয়া ও রুহিয়াসংলগ্ন পঞ্চগড় জেলাধীন আটোয়ারী উপজেলাতেও শীতের এমন দাপটের খবর পাওয়া গেছে।

কুয়াশা কমিয়ে দিয়েছে যানবাহন চলাচলের গতিও। ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে সকালে গিয়ে দেখা গেছে কুয়াশার কারণে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহনগুলো চলাচল করছে। প্রতিটি যানের গতি ছিল অনেক কম। দুর্ঘটনা রোধে চালকরা বেশ সতর্ক হয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন।

সোমবার আবহাওয়া অধিদপ্তরের সবশেষ পূর্বাভাস বলছে, উত্তরাঞ্চলে ঘন কুয়াশার সঙ্গে যোগ হয়েছে হিমেল বাতাস। এর ফলে ক্রমেই শীতের অনুভূতি বাড়ছে। সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত থাকবে কুয়াশার দাপটট। গতকাল রবিবার নওগাঁর বদলগাছিতে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে