প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের মেয়াদ ও খরচ বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, প্রকল্প যে সময়ে নেবেন, সেই সময়ে শেষ হওয়া উচিত। সময় আরও বাড়িয়ে নিয়ে আসেন, ব্যয়ও আরও বাড়িয়ে নিয়ে আসেন এটা হতে পারে না।
আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় বেশ কিছু প্রকল্পের নাম উল্লেখ করে এমন ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভা শেষে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (জ্যেষ্ঠ সচিব) ড. শামসুল আলম সাংবাদিকদের একথা জানান।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী দক্ষিণাঞ্চলের সব সড়কের মাস্টার প্ল্যান করারও নির্দেশনা দেন।
সরকারের নেয়া নানা উন্নয়ন প্রকল্প নির্দিষ্ট সময়ে শেষ না হওয়ার উদাহরণ আছে। ফলে এসব প্রকল্পে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যয়ও বেড়ে যায়। তা নিয়ে সমালোচনাও হয়।
একনেকের বৈঠকে কৃষি মন্ত্রণালয় ‘কৃষি তথ্য সার্ভিস আধুনিকায়ন ও ডিজিটাল কৃষি তথ্য এবং যোগাযোগ শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পের প্রথম সংশোধন আনা হয়েছে। সংশোধনীতে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া প্রকল্পটি ২০২০ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরে শামসুল আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রী সরাসরি জানতে চেয়েছেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন দেরি হওয়ার কারণ কী? তিনি জানতে চেয়েছেন প্রকল্প পরিচালক কে? প্রকল্প পরিচালক উপস্থিত ছিলেন না। সেখানকার সচিবও মনে হয় নতুন। তিনিও এর তেমন একটা উত্তর দেননি।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ নেন। সব প্রকল্পে এরকম দেরি হয় কেন? এটা ছোট টাকার প্রকল্প। এটা তো এতদিন লাগার কথা নয়। যখন প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা তখন আরও দুই বছর মেয়াদ বাড়াচ্ছেন কেন? এ সময় বাড়ানোর জন্য ৬৮ কোটি টাকাকে এখন ১০৯ কোটি বানালেন। এটা নিয়ে পর্যালোচনা করুন। প্রকল্প পরিচালকদের ডাকুন। সব প্রকল্প যেন যথাসময়ে শেষ হয় সেই ব্যবস্থা নিন। কেন বিলম্ব হচ্ছে সেটার কারণ অনুসন্ধান করুন।
দক্ষিণাঞ্চলের সব সড়কের মাস্টার প্ল্যান করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য বলেন, পদ্মা সেতু হলে উন্নয়ন কার্যক্রমে একটা নতুন গতিশীলতা তৈরি হবে।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের উদ্বৃতি দিয়ে শামসুল আলম বলেন, সে কারণে দক্ষিণাঞ্চলের পুরো এলাকার মাস্টার প্ল্যান করুন। কী কী রাস্তাঘাট আছে, সেগুলোতে অনেক ভারী যানবাহন যেতে পারে সেই ব্যবস্থা করুন। মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী সেটা করা উচিত। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বললেন যে, এভারেজ ডেইলি ট্রাফিক অনেক বেড়ে যাবে। এটা বাড়ছেই। এখন থেকেই পুনর্গঠনের, পুনর্নিমাণের ও শক্তিশালী করার কাজ শুরু করতে হবে। পদ্মা সেতু হলে এ এলাকায় গতিশীলতা বাড়বে।
বৈঠকে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ‘চরখালী-তুষখালী-মঠবাড়িয়া-পাথরঘাটা সড়ক উন্নয়ন ও প্রশস্তকরণ (জেড-৮৭০১)’ প্রকল্পের প্রথম সংশোধন আনা হয়েছে। সংশোধনীতে ৪৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পটির মূল খরচ ১০৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৪৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। প্রকল্পের মেয়াদও বাড়ানো হয়েছে। ২০১৭ সালের এপ্রিলে শুরু হওয়া প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। এখন এই প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়িয়ে করা হয়েছে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত।
প্রকল্পটি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরে শামসুল আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রী এখানেও বলেছেন ২০১৭ সালে এক বছরের জন্য প্রকল্প নিলেন, এ প্রকল্প এতদিন লাগা উচিত হয়নি। এটা তো পুরোনো সড়ক ছিল। এটা তো আপনারা তুলে ফেলতে পারতেন। এত দীর্ঘ সময় কেন লাগলো? আবার সংশোধন, আবার টাকা বাড়ানো– এ ধরনের ধারা বন্ধ করুন। প্রকল্প যে সময়ে নেবেন, সে সময়ে শেষ হওয়া উচিত। সময় আরও বাড়িয়ে নিয়ে আসেন, ব্যয়ও আরও বাড়িয়ে নিয়ে আসেন। এটা আর হতে পারে না। এখন ২০২১ সাল পর্যন্ত নিয়েছেন, এটাই শেষ। এরপর আর বাড়াতে পারব না। যখন যে প্রকল্প হবে, তা যথাসময়ে শেষ করবেন। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) যথেষ্ট জোরের সঙ্গে এই কথা বলেছেন।’