মার্কিন ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ফাইজার ও জার্মান জৈবপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বায়োএনটেকের টিকা পরীক্ষামূলক প্রয়োগের পর এক নারীর শরীরে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) উপসর্গ দেখা দিয়েছে। টিকা গ্রহণ করা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের ক্রিস্টেন চোই নামের এক নার্স এই দাবি করেছেন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক পোস্টের তথ্যমতে, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব নার্সিংয়ের সহকারী অধ্যাপক ক্রিস্টেন চোই ফাইজারের টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে অংশ নেন। গত আগস্টে তিনি এ পরীক্ষায় অংশ নেন।
জামা ইন্টারনাল মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধে চোই লেখেন, কোভিড ভ্যাকসিন তৈরির একটি ধাপে অংশ নিতে পেরে তিনি গর্বিত। এতে স্বেচ্ছাসেবী হতে পারাটাকে তিনি ভীষণ সম্মানের বলে মনে করেন। স্বাস্থ্য খাতে নিজের অভিজ্ঞতার কারণেই তিনি এই পরীক্ষা সম্পর্কে ভালোভাবে জানতেন। এ নিয়ে তিনি পড়াশোনাও করেছেন।
তিনি লেখেন, কিন্তু গবেষণা ও ভ্যাকসিনটি সম্পর্কে প্রচুর তথ্য জানা সত্ত্বেও আমার পক্ষে এর সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আগে থেকে অনুমান করা সম্ভব হয়নি।
ক্রিস্টিন চোইকে দুবার ভ্যাকসিনটি দেওয়া হয়েছিল। তবে তাকে ভ্যাকসিন না প্লাসেবো দেওয়া হয়েছিল, তা তিনি জানেন না। চোই দাবি করেন, তার বিশ্বাস তাকে ভ্যাকসিনই দেওয়া হয়েছিল। নিজের শরীরে হওয়া প্রতিক্রিয়া থেকেই তার মধ্যে এ বিশ্বাসের জন্ম হয়েছে। দুবার স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার পর তার শরীর ব্যথা, জ্বর ও ঠান্ডা লাগে। বিশেষত দ্বিতীয় ডোজটি গ্রহণের পরই এমনটা হয়েছে।
প্রথম ডোজ গ্রহণের পর গলা খুসখুস করা ছাড়া আর কোনো প্রতিক্রিয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন চোই। তিনি লিখেছেন, আমাকে প্লাসেবো, নাকি ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছিল, তা আমি জানি না। তবে দ্বিতীয় ডোজটি নেওয়ার পর শরীরের প্রতিক্রিয়া অনেক জোরালো ছিল। যেখানে টিকাটি ইনজেক্ট করা হয়েছিল, সেখানে ভীষণ ব্যথা হয়। প্রথমবারের চেয়ে অনেক বেশি। পরে মাথা হালকা লাগতে থাকে। পরে সর্দিসহ মাথাব্যথা হয়। ওই দিন রাতে জ্বর আসে। শরীরের তাপমাত্রা ৯৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত ওঠে। পেশিতে ভীষণ ব্যথা হচ্ছিল। পরদিন সকালে জ্বর বেড়ে ১০৪ দশমিক ৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট দাঁড়ায়। আমি ভয় পেয়েছিলাম। কোভিড-১৯ নিয়ে এত দিনের অভিজ্ঞতা থেকে আমার মনে একটি প্রশ্নই বারবার ঘুরপাক খাচ্ছিল—আমি কি কোভিড আক্রান্ত হলাম।
পরে গবেষণা দপ্তরে কাজ করা এক নার্স ক্রিস্টিন চোইকে জানিয়েছিলেন, এ ঘটনা শুধু তার ক্ষেত্রেই ঘটেনি। আরও অনেকের ক্ষেত্রেই দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণের পর এমন প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
অবশ্য একদিন পরই ইনজেকশনের স্থানটিতে ফোলা ছাড়া আর কোনো লক্ষণ ক্রিস্টিন চোইয়ের শরীরে ছিল না। এ বিষয়ে সে সময়ই কিছু বন্ধুকে তিনি জানিয়েছিলেন। তিনি এখন চান, ফাইজারের এই টিকা দেওয়ার আগে প্রতিটি ব্যক্তির সঙ্গে যেন এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে আলাপ করা হয়। টিকা গ্রহণকারী সবাই যেন এ বিষয়ে আগে থেকে অবহিত থাকেন।