এডিবির প্রতিবেদনে বাংলাদেশ: প্রত্যাশার চেয়ে শক্তিশালী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনা-এডিবি
ফাইল ছবি

কোভিড-১৯-এর মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রত্যাশার চেয়ে বেশি শক্তিশালী হচ্ছে বলে জানিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। করোনাকালে বিগত কয়েক মাসে রফতানি ও রেমিটেন্সের ইতিবাচক ধারার ওপর ভর করে অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক দ্রুত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশটি। তবে বাংলাদেশের প্রধান রফতানি গন্তব্যগুলোতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ব্যাপকভাবে শুরু হওয়ার ফলে দেশটির পুনরুদ্ধার এখনও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

এডিবির ‘এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুকের (এডিও) সাপ্লিমেন্ট, ডিসেম্বর ২০২০’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ কথা জানিয়েছে সংস্থাটি। বুধবার রাতে ম্যানিলা থেকে এটি প্রকাশ করা হয়।

এডিবি বলছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতির গড় হার সাড়ে ৫ শতাংশের ঘরে থাকবে। তবে চলতি (২০২০-২১) অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে দেশটির গড় মূল্যস্ফীতি বেড়েছে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৯ শতাংশে।

সংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মন্দার যে প্রাথমিক ধাক্কা এসেছে তা ইতোমধ্যে কেটে গেছে। করোনা মহামারীর কারণে এপ্রিল থেকে জুনে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল দেশটির অর্থনীতি। তা থেকে দ্রুত পুনরুদ্ধার হচ্ছে অর্থনীতি। স্বাস্থ্য ও মহামারী পরিচালন ব্যবস্থার ওপর উল্লেখযোগ্য চাপ সত্ত্বেও সরকার উপযুক্ত অর্থনৈতিক প্রণোদনা ও সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে অর্থনীতিকে সুসংহত করেছে। দরিদ্র ও দুর্বলদের জন্য মৌলিক সেবা ও পণ্যাদি নিশ্চিত করেছে। রফতানি এবং রেমিটেন্সে সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সক্ষমতা, অর্থনৈতিক প্রণোদনা ও সামাজিক সুরক্ষার জন্য বিদেশি তহবিল সুরক্ষাসহ সরকারের সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার ফলে এ পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রফতানি ও রেমিটেন্সের প্রবৃদ্ধি আশা দেখাচ্ছে। পুনরুদ্ধার টেকসই হওয়ার মাধ্যমে প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধির হার অর্জন সহায়ক হবে। ভ্যাকসিনের প্রাথমিক অ্যাকসেস এবং স্বাস্থ্য মহামারী ব্যবস্থাপনার ওপর অবিচ্ছিন্ন জোর এ পুনরুদ্ধারটি বজায় রাখতে সহায়তা করবে।

এডিবি বলছে, সুচিন্তিত সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা এবং সরকারের উদ্দীপনা ব্যবস্থার দ্রুত বাস্তবায়ন প্রত্যাশিত পুনরুদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তবে এই প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে প্রধান ঝুঁকি হল দীর্ঘমেয়াদি মহামারী ও বাংলাদেশের রফতানির গন্তব্য।

প্রতিবেদনে চলতি অর্থবছরে (২০২০-২১) বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস দেয়া হয়নি। তবে সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত এডিবি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুকের (এডিও) হালনাগাদ প্রতিবেদনে চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল।

এর আগে জুনে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৪ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এডিবি বলেছে, আগামী অর্থবছরে তা বেড়ে সাড়ে ৭ শতাংশ হতে পারে। করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে আগামী অর্থবছরে দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথে যাবে বলে আশা করছে এ দাতা সংস্থাটি।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, একই মানের অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ শক্তিশালী অবস্থায়ই এ সংকটকালে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশের বেশিরভাগে অর্থনৈতিক সূচক ইতিবাচক অবস্থানে রয়েছে। সবাই একসঙ্গে কাজ করলে অর্থনীতির পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া আর ত্বরান্বিত হবে।

এডিবি বলছে যে ২০২০ সালে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অর্থনীতি ৪ দশমিক ৪ শতাংশ সংকুচিত হবে। তবে ২০২১ সালে এ অঞ্চলের অর্থনীতি শক্তিশালী প্রত্যাবর্তন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০২১ সালে অর্থনীতি ৫ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে