কানাডার ‘বেগমপাড়া’সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে- সে বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনার আলোকে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তার (অ্যাটর্নি জেনারেল) সঙ্গে বৈঠক করেছে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা।
সোমবার সন্ধ্যায় অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
অ্যাটর্নি জেনারেল ছাড়াও বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রতিনিধি, দুদকের প্রতিনিধি হিসেবে আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান, পুলিশ মহাপরিদর্শকের প্রতিনিধি, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার তাহমিনা পলি ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহজাবিন রাব্বানি দিপা।
বৈঠকের পর অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মুহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, এর আগে বিদেশে অর্থপাচারকারীদের যাবতীয় তথ্য চেয়েছিলেন হাইকোর্ট। আগামী ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব, দুদক চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি এ নির্দেশনা দেয়া হয়। আমরা আজ তাদের সঙ্গে বসেছিলাম। তারা কী কী প্রস্তুতি নিয়েছেন এসব বিষয়ে কথা হয়েছে। আশা করি আগামী ১৭ ডিসেম্বর প্রতিবেদন জমা দিতে পারব।
বৈঠকের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা সবাই একসঙ্গে বসে ঠিক করলাম। সবার বক্তব্যগুলো আমাদের দিল, আমরা এটা এফিডেভিট করে আদালতে জমা দেব, অন্য কিছু না। তথ্য যা আছে সেটাই দেয়া হবে। সবাই আদালতের আদেশ মোতাবেক জবাব দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল জানতে চেয়েছেন কারা কী পদক্ষেপ নিয়েছেন। যেমন আমরা দুদককে বলেছি, আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। কাগজ রেডি করছি। আশা করছি, ১৭ ডিসেম্বরের (বৃহস্পতিবার) মধ্যে আদালতের আদেশ মতো দাখিল করতে পারব। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিএফআইইউসহ সবাই একই কথা বলেছে।
তিনি আরও বলেন, অর্থপাচারের সার্বিক বিষয়ে দুদকের সর্বশেষ অবস্থান আগামী বৃহস্পতিবার আদালতে দাখিল করব। টাকা পাচার সংক্রান্ত দুদক যা করেছে তার এটুজেড তথ্য-উপাত্ত আদালতে দাখিল করব। সে বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মহোদয়কে অবহিত করেছি। বিদেশে অর্থপাচারকারীদের নিয়ে ১৯ ও ২১ নভেম্বর বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে ওই আদেশ দেন হাইকোর্ট।
বিদেশে অর্থপাচারকারীদের যাবতীয় তথ্য চেয়ে গত ২২ নভেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ আদেশ দেন।
এ রুল বিবেচনায় থাকা অবস্থায় বিদেশে টাকা পাচারকারীদের নাম-ঠিকানাসহ যাবতীয় তথ্য (মামলাসহ, কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা) প্রতিবেদন আকারে জমা দিতে দুদক চেয়ারম্যান, স্বরাষ্ট্র সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, এনবিআর চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেয়া হয়। এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য ১৭ ডিসেম্বর দিন রেখেছেন হাইকোর্ট।
বেগমপাড়ার বিষয়টি আলোচনায় আসার আগেই গত ২২ অক্টোবর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের কাছে দুদক কমিশনের মহাপরিচালক (অর্থপাচার) আ ন ম আল ফিরোজ এক চিঠিতে বিভিন্ন দেশে পাচারকৃত অর্থবিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্ব গ্রহণকারী বাংলাদেশিদের তালিকা চান।
বাংলাদেশ সরকার এর আগে বেগমপাড়ায় ২৮ বাংলাদেশির বাড়ির খোঁজ পেয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ পায়। যার মধ্যে বেশিরভাগেরই মালিক সরকারের উচ্চপদস্থ আমলা। তাদের নামের তালিকার খোঁজ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তালিকা হাতে পেলেই তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষ থেকে।
গত ১৮ নভেম্বর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘কানাডায় খবর নিয়েছি, প্রাথমিকভাবে কিছু সত্যতা পেয়েছি। মনে করছিলাম রাজনীতিবিদদের সংখ্যা বেশি হবে। কিন্তু দেখা গেল রাজনীতিবিদ চারজন। সরকারি কর্মচারীর সংখ্যা বেশি। এছাড়া কিছু ব্যবসায়ীও আছে। বিদেশে যদি কেউ বৈধভাবে টাকা নেয়, তাহলে কোনো আপত্তি নেই। তবে অবৈধভাবে পাচার করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সরকারি কর্মকর্তাদের অর্থপাচারের বিষয়ে গত ২৩ নভেম্বর মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, দেশের বাইরে অর্থপাচারে জড়িত ব্যক্তিদের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য তদন্ত সংস্থা কাজ করছে।