দাম্পত্য কলহের জেরে সন্তান নিয়ে স্বামীর বাড়ি ছেড়ে বাবার বাড়ি চলে যান স্ত্রী। তাদের ফিরে পেতে আদালতের আশ্রয় নেন স্বামী। তবে মামলার রায়ে হেরে গিয়ে পরে রাগে, অভিমানে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন যুবক। তার নাম হাফিজুর রহমান (২৮)। তিনি হবিগঞ্জ শহরতলীর কামড়াপুর এলাকার নুর মিয়ার ছেলে।
জীবিকার তাগিদে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে শহরের সুলতান মাহমুদপুর এলাকায় বাস করতেন হাফিজুর রহমান। সোমবার আদালত প্রাঙ্গণের নিচতলায় এই ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুক আলী নিহতের পরিবারের বরাত দিয়ে জানান, প্রায় দুই বছর আগে নিহত হাফিজুর রহমানের সঙ্গে বিয়ে হয় বানিয়াচং উপজেলার খাগাউড়া গ্রামের আব্দুল খালেকের কন্যা বুশরা বেগমের। বছরান্তে তাদের কোলজুড়ে আসে পুত্র সন্তান। সম্প্রতি পারিবারিক বিভিন্ন বিষয়াধি নিয়ে হাফিজুল ও তার স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়াঝাটি লেগেই থাকত। এরই জেরধরে কিছুদিন আগে বুশরা তার সন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে যায়। পরে হাফিজুর তার স্ত্রী ও সন্তানকে ফিরিয়ে আনতে বারবার শশুড় বাড়ি গেলেও বিষয়টি কোনো সুরাহা হয়নি।
স্ত্রী-সন্তানদের ফিরে পেতে এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে ১০০ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি উদ্ধার মামলা করেন হাফিজুল ইসলাম। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার হবিগঞ্জ ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এ স্ত্রী বুশরার জবানবন্দি দেন। আদালত বুশরাকে তার মা খুদেজা বেগমের জিম্মায় দেন। এমন রায়ের ক্ষোভে অভিমানে হাফিজুর আদালত প্রাঙ্গণের নিমতলায় এসে ছুরি দিয়ে নিজ পেটে আঘাত করেন। উপস্থিত লোকজন তাকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বিষয়টি মুহূর্তেই লোকমুখে জানাজানি হলে হাসপাতাল এলাকা ও থানা প্রাঙ্গণে শতশত লোক ভিড় জমায়। হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) দৌস মোহাম্মদ জানান, বিষয়টি নিয়ে পুলিশ তদন্ত করছে। তদন্তের পর এর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কি না জানা যাবে।
এদিকে সিরাজগঞ্জে আদালতের এজলাসেই বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন মোক্তার হোসেন (৩৫) নামে এক আসামি। তাকে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সোমবার দুপুরে সিরাজগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ আদালতের এজলাসে এ ঘটনা ঘটে। মোক্তার হোসেন রায়গঞ্জ উপজেলার মিত্র তেঘরি গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, স্ত্রীর দায়ের করা মামলায় দুপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে হাজিরা দিতে এসেছিলেন মোক্তার। মামলার শুনানি চলাকালে এজলাসে দাঁড়িয়ে হঠাৎ করেই বিষপান করেন তিনি। এ সময় বিচারক তাকে দ্রুত হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
সিরাজগঞ্জ কোর্ট পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ বলেন, আসামি হঠাৎ করে কীটনাশকপানে অসুস্থ হয়ে পড়লে বিচারকের নির্দেশে তাকে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ওই আদালতের এপিপি অ্যাডভোকেট আনোয়ার পারভেজ লিমন বলেন, আদালতে স্বেচ্ছায় হাজিরা দিতে এসেছিলেন মোক্তার। শুনানি চলাকালে হঠাৎ করে তার হাত থেকে একটি প্লাস্টিকের বোতল পড়ে যায়। বোতল থেকে পানির মতো কীটনাশক মেঝেতে গড়িয়ে পড়ে। আসামি মোক্তারও অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন বিচারক আব্দুল্লাহ আল-মামুন তাকে হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তিনি কীটনাশক পান করেছেন কি না, সেটা আমাদের চোখে পড়েনি।
একই আদালতের অপর এপিপি অ্যাডভোকেট কায়সার আহমেদ লিটন বলেন, এর আগের তারিখেও তিনি হাজিরা দিতে এলে বিচারক জামিন বাতিলের আদেশ দেওয়ার পর আদালত প্রাঙ্গণেই সিন ক্রিয়েট করেন ওই আসামি। পরে আদালত তাকে জামিন দিয়েছিলেন।